হুন্ডি বন্ধ করা গেলে বাড়বে আরও

সেপ্টেম্বরে বেড়েছে রেমিট্যান্স
আগের তুলনায় সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা আগের মাস আগস্টের তুলনায় ১৮ কোটি ডলার বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের তথ্যানুসারে, এখন বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসার পেছনে ব্যাংকগুলোর সচেতনতা কাজ করছে। আবার বৈধ পথে ডলারের দর বৃদ্ধিতে হুন্ডি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য অবশ্যই একটি সুখবর। মূলত বিদেশ থেকে দেশে অর্থ প্রেরণ করা হয় দুটি পথে, যার মধ্যে একটি বৈধ অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলে এবং আরেকটি হচ্ছে অবৈধ অর্থাৎ হুন্ডির মাধ্যমে। নগদ বৈদেশিক মুদ্রা যখন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করা হয় বা ব্যাংকের হিসাবে জমা রাখা হয়, তখন তা ব্যাংকিং চ্যানেলে চলে যায়। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত প্রবাস আয় বা রেমিট্যান্স। তবে সরকারের নানা উদ্যোগের পরও কাক্সিক্ষত মাত্রায় বাড়ছে না রেমিট্যান্স। অতীতে রেমিট্যান্স বাড়াতে হুন্ডি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, কিন্তু হুন্ডি বন্ধ হয়নি। বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়লেও প্রবাস আয়ের শতভাগ ব্যাংকের মাধ্যমে আসছে না। হুন্ডি বন্ধ করা গেলে বর্তমানে বছরে আসা ২৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দ্বিগুণ অর্থাৎ ৫০ বিলিয়ন করা সম্ভব। দেশের ডলার সমস্যা সমাধানের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে প্রবাস আয় বা রেমিট্যান্স। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়লেও প্রবাস আয়ের শতভাগ ব্যাংকের মাধ্যমে আসছে না। জানা যায়, বিগত সরকারের আমলে রেমিট্যান্স পাঠাতে সচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছিল প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বিদেশ থেকে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে হুন্ডি কারবারিদের দৌরাত্ম্য প্রতিরোধে ১০টি প্রতিবন্ধকতার কথাও সেখানে উল্লেখ করা ছিল। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমত, হুন্ডি ও অন্যান্য মাধ্যমে রেমিট্যান্সের বড় অঙ্কই পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশে যখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসে অথবা ডলারের বিপরীতে টাকার অস্বাভাবিক দরপতন ঘটে, তখন একটি বিষয় খুব জোরেশোরে আলোচনায় আসে, তা হচ্ছে প্রবাস আয়। বর্তমানে দেশে হুন্ডির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর মাত্রা বেড়ে গেছে। হুন্ডির প্রভাব থেকে সরিয়ে প্রবাসীদের অর্জিত শতভাগ অর্থ কিভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রেরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়, সেটিই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কিছু পদক্ষেপ নিলেই কাজটি করা সম্ভব। যেসব কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে হুন্ডির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠানো হচ্ছে, সেই পথগুলো বন্ধ করতে হবে। শাস্তির বিধানগুলো কার্যকর করতে হবে। রেমিট্যান্সের টাকা যাতে গ্রাহক দ্রুত পেতে পারে এমন ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নে ব্যাংকগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।