খুলনায় একদিনে ৩ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু : ভর্তি ৯২

সতর্ক না হলে পরিস্থিতি হতে পারে ভয়াবহ
কামরুল হোসেন মনি ঃ চলতি বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চলতি অক্টোবর মাসেও একই পরিস্থিতি। এ মাসে ডেঙ্গু রোগী বাড়ার পাশাপাশি ও মৃত্যুর তালিকাও বাড়ছে। গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা ব্ভিাগে নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৯২ জন । এর মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা রয়েছে। এ সময়ে খুলনায় একজন, খুমেক হাসপাতালে একজন এবং যশোর জেলাতে একজন নতুন করে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। খুলনা বিভাগে এই বছরে প্রথম একদিনে সর্বোচ্চ ৩ জনের ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো। এর আগের দিন একদিনে খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিল ৮১ জন। এ সময়ে মৃত্যুর কোন খবর পাওয়া যায়নি। এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে মোট ডেঙ্গু রোগী ছাড়াল ২ হাজার ৫৬০ জন। মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু যেভাবে বেড়ে চলেছে তা খুবই ভয়ংকর রূপ নিতে পারে। আর তাই এখনই সতর্ক হয়ে মশানিধন কর্মসূচি সফলভাবে পরিচালনা করা না গেলে পরিস্থিতি ভালো হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) অধিদপ্তরের সূত্র মতে, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত খুলনা বিভাগে নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৯২ জন। এ সময়ে খুলনাসহ ৩ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ডেঙ্গু রোগীর ভর্তির মধ্যে খুলনায় ২৩ জন এবং মুত্যু একজনের। সাতক্ষীরায় ৪ জন, যশোরে ১৪ জন ও মৃত্যু হয় একজনের, ঝিনাইদহ ৫ জন, মাগুরায় ৫ জন, কুষ্টিয়ায় ১২ জন, মেহেরপুরে ১১ জন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয় ৯ জন এবং মৃত্যু হয় এক জনের। এছাড়া সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ছাড়াল ২ হাজার ৫৬০ জন এবং মৃত্যু হয় মোট ১১ জনের। মারা যাওয়ার মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ জন, খুলনায় ১ জন, যশোরে ৩ জন এবং ঝিনাইদহে একজন রয়েছে। এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে মোট ডেঙ্গু রোগী ছাড়াল ২ হাজার ৫৬০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে মোট ১১ জনের। এর মধ্যে খুমেক হাসপাতালে ৬ জন এবং খুলনাতে আছে ১ জন। বাকিগুলো অন্য জেলাতে মৃত্যু হয়। এ সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ২৮২ জন ।বর্তমানে বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ২৩০ জন। রেফার্ড করা হয় মোট ৩৬ জনকে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার সুহাষ রঞ্জন হালদার বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় এই হাসপাতালে ডেঙ্গুতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাহার (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে খুমেক হাসপাতালে ছয় জনের মৃত্যু হলো। আরএমও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যশোরের চাচড়া এলাকার বাসিন্দা নাহার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। চলতি বছরে এ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৯৩ জন রোগী ভর্তি হন। বর্তমানে হাসপাতালে ৪৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৯ জনকে ভর্তি করা হয়। এ সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮ জন। খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু সংক্রমণের যে পরিসংখ্যান তাতে দেখা যায়, আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাসেই এর মাত্রা বাড়তে থাকে। তবে ২০২৩ সালে অক্টোবর পরবর্তী সময়েও আতঙ্ক ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। এদিকে চলতি মৌসুমের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে আগস্ট থেকে। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মশা নিধনের কোনো বিকল্প নেই। দ্রুত মশা নিধনের জন্য ক্রাশ প্রেগ্রাম গ্রহণ করতে হবে। উড়ন্ত মশাগুলোকে মেরে অন্তত পরিস্থিতি কিছুটা ভালো করা যেতে পারে। এমন কিছু করা না গেলে পরিস্থিতি হতে পারে ভয়াবহ।