সম্পাদকীয়

পাহাড়ধস বন্ধে টেকসই পদক্ষেপ দরকার

টানা ১২ ঘণ্টার ভারী বর্ষণে কক্সবাজারে সম্প্রতি পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। এতে ৬ জন নিহত হয়। ভারী বর্ষণের কারণে শহরের অভ্যন্তরে ১২টির বেশি পাহাড়ে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। বেশ কিছু অংশে ভূমি ধসের ঘটনা ঘটছে। ভারী বর্ষণে শহরের ৯০ শতাংশ এলাকা ডুবেছে। শহরের প্রধান সড়ক, সৈকত সড়কসহ অন্তত ৩৫টি উপসড়ক বৃষ্টির পানিতে ডুবে কয়েকশ দোকানপাটের মালামাল নষ্ট হয়েছে। হাজারো ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণে সৈকতে হোটেল মোটেল জোনের ১৮টি সড়ক ডুবে গেছে। পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেলের কয়েক হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন। শহরের ব্যস্ততম পাঁচ কিলোমিটারের প্রধান সড়কও পানিতে ডুবেছে। সড়কের বাজারঘাটা, বড়বাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়ার কয়েকশ দোকান, অফিস-আদালত ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বৃষ্টির পানি জমে আছে। হাজারো ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে পাহাড়ধসের সম্পর্ক রয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে বহু মানুষ। পাহাড়ধসের মূল কারণ একশ্রেণির প্রভাবশালীর অবৈধভাবে পাহাড় কাটা। এটি বহুল আলোচিত। কোনো দুর্ঘটনার পর বহু পরিকল্পনার কথা শোনা যায়। দুঃখজনক হলো, এসব পরিকল্পনার বেশিরভাগ কাগজে-কলমেই থেকে যায়। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের সরে যাওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়; কোনো কোনো পরিবারকে সরতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমের পর গরিব মানুষ আবারও পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানেই বসবাস করতে শুরু করে। এতে অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হচ্ছে দরিদ্র মানুষ। পাহাড়ধসের অন্যতম প্রধান করন হচ্ছে নির্বিচারে পাহাড় কাটা। কিছু মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকা-ের ফলে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। রাজনৈতিক নেতাসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা পাহাড় দখল করে বসতি গড়ে তুলেছেন, এটি বহুল আলোচিত। প্রচলিত যে-সব আইন আছে সেসব আইনে যে শাস্তির বিধান বর্ণিত আছে তা আরও বৃদ্ধি করে এর সুপ্রয়োগ জোরদার করতে হবে। পাহাড় দখলকারীদের উচ্ছেদ করতে হলে যতটুকু জনবল বন বিভাগের থাকা উচিত সেসব বৃদ্ধিতেও সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের হাত থেকে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পাহাড় ও গাছ কাটা বন্ধে টেকসই পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্ষায় কোনো না কোনো সময় ভারী বর্ষণ হবেই। তবে তার সঙ্গে পাহাড় কাটা, বনের গাছপালা কেটে ফেলার ঘটনা যোগ হলেই এর খেসারত চরমভাবে দিতে হবে আমাদের।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button