সম্পাদকীয়

শুধু বাহক নয়, ধরতে হবে গডফাদারদের: বাস্তবায়ন করুণ

মাদকের সহজলভ্যতায় বাংলাদেশের অধিকাংশ তরুণেরা সহজেই জড়িয়ে পড়ছেন মাদকের নেশায়। এতে করে দিন দিন সমাজে অন্যায়-অত্যাচার বেড়েই চলছে। মাদক যেমন একটি তরুণকে ধ্বংস করে দেয় ঠিক একই ভাবে একটি সমাজও ধ্বংসের পথেই চলে যায়। তাই সুশৃঙ্খল সমাজ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন মাদক নিয়ন্ত্রণ করা। মাদকের বিরুদ্ধে বিগত সরকার জিরো টলারেন্স জারি করলেও মাদকের আধিপত্য সারাদেশ জুড়ে রয়েই গেল। এর মূল কারণ হলো প্রশাসনিক দুর্বলতা। এই দুর্বলতা বিভিন্ন দিক থেকেই ছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো ঘুষের বিনিময়ে অপরাধীদের সুযোগ করে দেওয়া। সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়ে দেশে গঠন করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সককারের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশকে সংস্কার করা। কিন্তু দেশে যেভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মাদকের আধিপত্যে এতে সরকার কতটুকু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবে তা নিয়ে আছে সংশয়। দৈনিক পত্রিকার খবরাখবর থেকে জানা যায়, ভয়ংকর মাদক সা¤্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন ২৯২ জন। বিভিন্ন সংস্থার তালিকায় তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে ‘গডফাদার’ হিসেবে। তালিকায় থাকা এসব ব্যক্তির অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও সিআইপি খেতাব পাওয়া ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। আইনপ্রণেতাও ছিলেন তাদের কয়েকজন। এসব গডফাদার, পাইকারি ব্যবসায়ী ও বহনকারী-এ তিন ক্যাটাগরিতে মোট ১০ হাজার জনের তালিকা নিয়ে মাঠে নেমেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ থেকে ২০২৩-এর জুলাই পর্যন্ত মাদকাসক্ত হয়ে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে (রিহ্যাব) গেছেন অন্তত ৫০ হাজার মাদকসেবী। পাঁচ বছরে রিহ্যাবে চিকিৎসা নেওয়া নারী মাদকাসক্ত বেড়েছে পাঁচ গুণ। আর ১৫ ও তার কম বয়সি মাদকাসক্ত বেড়ে হয়েছে তিন গুণ, সংখ্যায় যা ৪৭ হাজার ৩৭৬। বিগত সরকারের এমপি-মন্ত্রীরাও দেশের মাদকের পরিস্থিতি উন্নয়নের আশার কথা বলে আশস্ত করেছিলেন কিন্তু তা বাস্তবায়ন করেনি। তেমন পরিস্থিতি আবারও হোক তা জনগণ কখনো প্রত্যাশা করে না। জনগণ এই যৌক্তিক কথাগুলোর বাস্তবরূপ দেখতে চায়। স্বৈরাচার সরকারের ক্ষমতা শেষে এখন জনগণের দেশ সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে দেশের সুশৃঙ্খল পরিবেশ গড়তে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করাটা জরুরি। এর জন্য প্রয়োজন চিহ্নিত মাদকের গডফাদারদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা। পাশাপাশি মাদক যে-সব জায়গা দিয়ে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে সেসকল জায়গা চিহ্নিত করে প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। মাদকমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়েই সংস্কার কাজ সফল করবেন সরকার এটাই সকলের প্রত্যাশা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button