ব্যবসার সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে হবে

পরিবেশ হচ্ছে পারিপার্শ্বিক অবস্থার সমষ্টি। “পরিবেশ হচ্ছে কোনো কিছুর উন্নতি বা সমৃদ্ধিও ওপর প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানসমূহের সমষ্টি।” সুতরাং যে-সব উপাদান দ্বারা ব্যবসায় পরিবেষ্টিত থাকে এবং যে-সব উপাদান ব্যবসায়ের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে সেগুলোর সমন্বয়ে ব্যবসায় পরিবেশ গড়ে ওঠে। মানুষের জীবনধারা যেমন তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়, ব্যবসায়িক কর্মপ্রক্রিয়াও তেমনি দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান বহুবিধ উপাদান দ্বারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত হয়। এসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রাকৃতিক ও প্রযুক্তিগত দিক, রয়েছে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, রয়েছে সরকারি নিয়মকানুন ও রাজস্ব নীতি। ব্যবসায় পরিচালনার লক্ষ্যে এসব উপাদানের সম্মিলিত প্রভাবে সৃষ্ট পারিপার্শ্বিক অবস্থাই ব্যবসায়ের পরিবেশ। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের এক ক্ষুদ্র অথচ জনবহুল রাষ্ট্র। এদেশে ব্যবসায়-বাণিজ্যের উন্নয়নের গতি নিতান্তই মন্থর। অবশ্য অতি সম্প্রতি এর কিছুটা পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। মিশ্র অর্থনীতির এ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে সরকার শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দিতে শুরু করেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের অসহযোগিতা, প্রশাসনের দুর্বলতা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, বিদেশি পণ্যের ব্যাপক আগমন ইত্যাদি কারণে ব্যবসায়-বাণিজ্য তার স্বাভাবিক গতি সঞ্চারে ব্যর্থ হচ্ছে। শিল্প, ব্যবসা, বিনিয়ো সব কিছুই যেন তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলছে। পোশাক খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। শিল্প পুলিশের তথ্য অনুসারে অনির্দিষ্টকালের জন্য ৮৬টি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাকি ১৩৩টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিজিএমইএ জানিয়েছে, মোট বন্ধ কারখানার সংখ্যা ১১৫। এর মধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য ৭৫টি, বাকি ৪০টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। চলমান শ্রমিক অসন্তোষে পোশাক কারখানা ভাঙচুর ও বন্ধ থাকায় আনুমানিক পাঁচ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স। বাংলাদেশে অর্থনীতির অবস্থা কখনোই খুব ভালো ছিল না। বিশ্বব্যাংক ও ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) অতীতে যে-সব ‘ডুইং বিজনেস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের অবস্থান সব সময় নিচের দিকে থেকেছে। গত মার্চে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর (ইউএসটিআর) বৈদেশিক বাণিজ্যের বাধাবিষয়ক একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে ঘুষ, দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতাকে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসার ক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা হলো দুর্নীতি। ব্যবসার আবহের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে তাই সবার আগে ব্যবসার পরিবেশ ফেরাতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে সরকারকে।