সম্পাদকীয়

ডেঙ্গুতে ১ দিনে মৃত্যুর রেকর্ড: প্রয়োজন বিকল্প পদক্ষেপ নেওয়া

আমাদের জীবনের প্রতিটি প্রাণই গুরুত্বপূর্ণ। অকালে মৃত্যু হোক তা আমরা কেউই প্রত্যাশা করি না। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এই অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর সাথেই আমাদের বেঁচে থাকতে হয়। এমন অপ্রত্যাশিত মৃত্যু বিভিন্ন দুর্ঘটনায় হয়ে থাকলেও ডেঙ্গু রোগ এর মধ্যে অন্যতম। আমাদের দেশে প্রতিবছরই হাজার হাজার মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। প্রতিবছর শত শত মানুষও মারা যাচ্ছে এই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে। কিন্তু ডেঙ্গুতে অকাল মৃত্যু রোধে সরকার কতটুকু কার্যকর ভূমিকা পালন করছেন তা নিয়ে আছে সংশয়। চলতি বছরের প্রথম দিকে ডেঙ্গু রোগের শঙ্কা কিছুটা কম থাকলেও সাম্প্রতিক সময় তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকার খবরাখবর থেকে জানা যায়, ডেঙ্গুর থাবায় গত ১২ অক্টোবর ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৯জনের মৃত্যু হয়েছে; যা চলতি বছর ডেঙ্গুতে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এছাড়াও একই দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯১৫ জন। এর আগে ২ আগস্ট এক দিনে সর্বোচ্চ আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১০ জনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গত ১২ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪১ হাজার ৮১০ জন। জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ১ হাজার ৫৫ জন, মৃত্যু হয় ১৪ জনের; ফেব্রুয়ারিতে ভর্তি হয় ৩৩৯ জন, মৃত্যু হয় তিনজনের; মার্চে রোগী ছিল ৩১১ জন, মৃত্যু পাঁচ জনের; এপ্রিলে আক্রান্ত ৫০৪ জন, মৃত্যু দুজনের; মে মাসে আক্রান্ত ৬৪৪ জন, মৃত্যু ১২ জনের; জুনে আক্রান্ত ৭৯৮ জন, মৃত্যু আটজনের। বছরের মাঝামাঝিতে জুলাই মাস থেকে রোগী বাড়তে থাকে; ছাড়িয়ে যায় ২ হাজারের ঘর। এ মাসে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬৬৯ জন, মৃত্যু হয় ১২ জনের। আগস্টে কয়েকগুণ বেড়ে রোগী হয় ৬ হাজার ৫২১ জন, মৃত্যু ২৭ জন। আর আগস্টের তুলনায় তিনগুণ বেশি রোগী সেপ্টেম্বরে শনাক্ত হয়, মৃত্যুও হয় তিনগুণ বেশি। এ মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ৯৭ জন, মারা গেছেন ৮০ জন। হঠাৎ ডেঙ্গুর এমন উৎপাতে জনগণের মাঝে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে কম বেশি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। লাগাতার বৃষ্টি এবং জমে থাকা পানির কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। এছাড়াও ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা না থাকায় দিনদিন এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সুতরাং এর থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন নাগরিক সচেতনতার সাথে সরকারি উদ্যোগ। সাম্প্রতিক সরকার পতনকে কেন্দ্র করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বেশ অবহেলা লক্ষণীয় ছিল যার ফলাফল বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতি। তবে আমরা আগের নিয়মেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ চাই না। আমরা এমন একটি সমাধান চাই যেই সমাধানে স্বস্তি মিলবে জনমনে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button