সম্পাদকীয়

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে চাই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা

সড়ক দুর্ঘটনায় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে প্রাণহানির হার। এ দুর্ঘটনার পেছনে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতাসহ, নির্দিষ্ট বেতন-কর্মঘণ্টা না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা। এ ছাড়া দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতিই দায়ী। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এত আইন হলো, এত পরিকল্পনা নেওয়া হলো, কিন্তু কোনো কিছুই কাজে লাগছে না। এটা যেমন ব্যর্থতা, তেমনি সড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবহেলাও বটে। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুই বাসের প্রতিযোগিতার শিকার হয়ে মারা গিয়েছিল দুই কলেজশিক্ষার্থী। সেই ঘটনা দেশবাসীকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছিল। নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক আন্দোলনের মুখে তৎকালীন সরকার সড়ক পরিবহন আইন করতে বাধ্য হয়েছিল। আমাদের প্রত্যাশা ছিল এই আইন পাসের পর সড়কে দুর্ঘটনা কমবে, যাত্রী ও পথচারীরা নিরাপদ থাকবেন। কিন্তু বিগত সরকার নানা মহলের চাপে সেই আইনটিকে কাটছাঁট করে একটি অকেজো আইনে পরিণত করে। ফলে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি আরও বেড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সড়ক ব্যবস্থাপনা নিরাপদ করতে দৃশ্যমান কোনো পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ এখনো অনুপস্থিত। দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগের ধারাবাহিকতা নেই। সবকিছু চলছে দায়সারাভাবে। এ অবস্থার উন্নয়নে টেকসই সড়ক পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন অন্তর্বর্তীকালীন-সরকারের সদিচ্ছা।’ প্রায়ই দেখা যায় দুই বাসচালকের মধ্যে প্রতিযোগিতায় সড়কে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা নয়। আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনা বরারই ভঙ্গুর ছিল। সাম্প্রতিক কালে ট্রাফিক পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও সড়ক মেরামত না হওয়ায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে। প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে, কখনো চালকের বেপরোয়া চালনায়, কখনো সড়কে খানাখন্দ থাকায়। এবং মোটরসাইকেলচালকেরা কোনো নিয়মরীতিই মানছেন না। এছাড়াও সম্প্রতি দেশের কয়েকটি অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হওয়ায় অনেক সড়কে খানাখন্দ বেড়েছে। কোনো কোনো সড়কে যান চলাচল করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় দ্রুত সড়ক মেরামত করার প্রয়োজন থাকলেও সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। আমাদের দেশে ২০১৮ সালে প্রণীত সড়ক পরিবহন আইন জারি করা হলেও, পরবর্তী সময়ে আইনটি সংশোধনের নামে এমন অবস্থায় আনা হয়েছে যে চালকদের মধ্যে কোন ভয়ভীতিই নেই। তাই সড়কে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে। চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করাসহ পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা রাস্তা তৈরি করতে হবে। পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে। রেল ও নৌপথ সংস্কার করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে। টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ এর সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে চাই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button