সম্পাদকীয়

বাজারে নকল পণ্যের ছড়াছড়ি

আমাদের বেঁচে থাকতে হলে অনেক কিছুর প্রয়োজন পড়ে। প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো জীবনের সাথে সম্পৃক্ত করেই আমাদের জীবন অতিবাহিত করতে হয়। আর এই প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো অবশ্যই মান সম্পূর্ণ হওয়াটা জরুরি। অন্যথায় জীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে। দৈনন্দিন আমরা কী সঠিক জিনিস পত্র ব্যবহার করছি? প্রশ্নটার উত্তর হয়ত অনেকের জানা নেই। কিন্তু বাস্তবতা বলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে সম্পৃক্ত অধিকাংশ জিনিস মান সম্পন্ন নয়। বিশেষ করে আমাদের খাদ্য দ্রব্য থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে যেন এখন নকলের ছড়াছড়ি! জীবন বাঁচাতে রোগীকে দেওয়া ওষুধেই অনেক সময় মৃত্যু হচ্ছে রোগীর। ফর্সা হতে ক্রিম ব্যবহার করে উলটো ঝলসে যাচ্ছে ত্বক। এতে স্বাস্থ্যগত ও আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ। ঘটছে অপমৃত্যু। বাড়ছে অসুস্থ মানুষের সংখ্যা। দৈনন্দিন পত্রপত্রিকা থেকে জানা যায়, খাদ্যপণ্য, জ¦ালানি তেল, ভোজ্য তেল, পশুখাদ্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম, শিশুখাদ্য, বেকারি পণ্য, খাবার পানি, প্রসাধনী থেকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ- সব কিছুতেই মেশানো হচ্ছে ভেজাল। ভেজাল জ¦ালানি তেলের কারণে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার গাড়ি। কিটক্যাট, লাভ ক্যান্ডি, রোলানা, সাফারি, ফাইভ স্টার, ক্যাডবেরি, বাবলিসহ বিশ্বখ্যাত নানা ব্র্যান্ডের চকলেট তৈরি হচ্ছে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা এলাকার টিনশেড ঘরে। শিশুদের পছন্দের এসব চকলেট হুবহু নকল করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সারা দেশে। তৈরি হচ্ছে জনসন অ্যান্ড জনসন, পন্ডস, কডমোসহ বিভিন্ন বিদেশি ব্র্যান্ডের কসমেটিক্স, বিদেশি পাউডার ড্রিঙ্কস, জুস, চিপস, ডায়াপারসহ বিভিন্ন পণ্যের নকল। এছাড়া পোলট্রি ফার্মের ডিমে পাওয়া গেছে ট্যানারি বর্জ্যরে বিষাক্ত ক্রোমিয়াম। আটায় মেশানো হচ্ছে চক পাউডার বা ক্যালসিয়াম কার্বনেট। মিষ্টিজাতীয় খাবারে ব্যবহার করা হচ্ছে বিষাক্ত রং, সোডা, স্যাকারিন ও মোম। কাপড়ের বিষাক্ত রং, ইট ও কাঠের গুঁড়া মেশানো হচ্ছে খাবারের মসলায়। ফলমূল দ্রুত পাকিয়ে রঙিন বানাতে কার্বাইড, ইথোফেন আর পচন রোধে ফরমালিন প্রয়োগ করা হচ্ছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের কারণে প্রতি বছর দেশে ৩ লাখ লোক ক্যান্সারে, ২ লাখ লোক কিডনি রোগে, দেড় লাখ লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা ১৫ লাখ বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মদান করছেন একই কারণে। বছরের পর বছর প্রকাশ্যে এমন অনিয়ম চললেও সরকারের তদারকি সংস্থাগুলো যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কোনোভাবেই সুফল মিলছে না এমন নকল পণ্য থেকে। অতীতে যা ঘটছে তা আর আগামীতে দেখতে চাই না আমরা। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে, আমরা চাই বাজারের নকল পণ্যও একই ভাবে পরিবর্তন হয়ে সঠিক পণ্য বাজারে আসুক। বিষয়টি কিছু চ্যালেঞ্জিং হলেও অসম্ভব নয়। আমরা আশা করব, জনগণের আস্থার প্রতীক অন্তর্বর্তী সরকার ওই বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগী হয়ে সমস্যা সমাধান করে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button