স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় প্রকাশ্যে ধুমপানে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে

# শহরজুড়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ধুমপায়ীদের রাজত্ব বাড়ছে #

মো. আশিকুর রহমান ঃ ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ নানা জটিল রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। ধূমপান মানুষের আয়ূকাল কমিয়ে দেয়, পরিবেশ দূষণ করে এবং ধীরে ধীরে ঠেলে দেয় মৃত্যুর দিকে। অপরদিকে শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা অর্থ্যাৎ ধুমপান শ্বাসতন্ত্রের নিস্ক্রিয়তায় হিসাবে দায়ি। আইনে ১৮ বছরের নিচে অপ্রাপ্ত বয়সীদের নিকট ধুমপান বিক্রয় দন্ডনীয় অপরাধ। তথাপী আইন থাকলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে নেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ বা আইন সংস্থার অভিযান। যে কারনে অপ্রাপ্তদের নিকট যত্রতত্র ধুমপান বিক্রয়ের নিষিদ্ধ আইন আজ অনেকটাই নিঃস্ক্রীয়তায় পরিনত হওয়ার দরুন শহরজুড়ে ক্রমশঃই রাজত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে অপ্রাপ্ত ধুমপায়ীদের। সূত্রে জানা যায়, শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা অর্থ্যাৎ শ্বাসকষ্ট, যা নিয়ন্ত্রনে অক্সিজেনের বিকল্প কিছুই নেই, ধুমপান শ্বাসতন্ত্রের নিক্রিয়তার অন্যতম বাহন সম্প্রতি সময়ে ১৮ বছরের নিচের অপ্রাপ্ত বয়সী, নবাগত স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী, তরুন চাকরিজীবিদের মধ্যে শক্ষার্থীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা দিন-দিন বেড়েই চলেছে। যা বর্তমানে মহামারী মতো সামাজিক ব্যাধিতে পরিনত হয়েছে। খুলনার ডাকবাংলা, শিববাড়ী, নিউমার্কেট চত্ত্বর, সোনাডাঙ্গা, নিরালা, গল্লামারি, রুপসা, বয়রা, রায়েরমহল, বাস্তহারা, জোড়াগেট কলনী, আলমনগর, খালিশপুর, নতুনরাস্তা, কবিরবটতলা, দৌলতপুর কাঁচা বাজার সংলগ্ন, কেসিসি মার্কেট, ঋষিপাড়া মোড়, কেডিএ মার্কেট সংলগ্ন, রেলিগেট, মানিকতলা, ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড, শিরোমনি, আটরা, ফুলতলাসহ শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়, বন্ধুদের দলগত আড্ডায় নতুন-নতুন অপ্রাপ্ত বয়সের ধূমপায়ীদের আসক্তি বাড়ছে ধুমপানের প্রতি। বিক্রেতারা অপ্রাপ্তদের নিকট ধূমপান বিক্রয় নিষিদ্ধ জানা স্বত্ত্বেও ব্যবসায় মুনাফা আশায় তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে ধূমপান নামের পরোক্ষ বিষ, যা এই নতুন প্রজন্মকে ধীরে ধীরে ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। একই সাথে নগরীর বিভিন্ন চায়ের দোকানে তামাকজাত কোম্পানীগুলোর নানামুখি প্রচরণাও তরুনদের ধুমপানের প্রতি আকৃষ্ট করে তুলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ নানা জটিল রোগ হতে পারে। ধূমপান মানুষের আয়ু কমিয়ে দেয়, পরিবেশ দূষণ করে এবং ধীরে ধীরে মৃত্যু ঘটায়। তাছাড়া ধূমপায়ীর কারণে আশপাশের অধূমপায়ীরাও ধূমপানজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। পাশাপাশি ধূমপান করতে-করতে উঠতি বয়সী এ তরুনেরা অন্য কোনো নেশার সাথে জড়িয়ে পড়ছে। খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রকাশ্যে জনসম্মুখে তথা পাবলিক প্যালেসে ধূমপান করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। যার জন্য রয়েছে শাস্তির বিধান। তাছাড়া ১৮ বছরের নিচে তথা অপ্রাপ্ত বয়সীদের নিকট ধুমপান বিক্রয় নিষিদ্ধ। অপ্রাপ্তদের নিকট ধুমপান বিক্রয় করলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারার শাস্তির বিধান করেছে। তাছাড়া শহরের মধ্যে যে সকল ধুমপান কোম্পনী তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন বা প্রচার করে চলেছেন তাদের ব্যাপারে জেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান অব্যহত রেখেছে। ধুমপানকে নেশার প্রথম স্তর হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। ক্রমশঃই বৃদ্ধি পাচ্ছে নতুন নতুন অপ্রাপ্ত বয়সী ধুমপায়ীদের তাই যুব সমাজকে তামাকমুক্ত রাখতে প্রশাসনের প্রতি সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন সচেতন ব্যক্তিবর্গ। দৌলতপুর বাজারের ব্যবসায়ী পলাশ শেখ জানান, মাঝে মাঝে একটু চা খেতে যায়। বর্তমানে চায়ের দোকানে ঢোকা যায় না, লজ্জা লাগে। কারণ ছোট ছোট অপ্রাপ্ত ছেলেরা প্রকাশ্যে ধুমপান করে। বড়দের নূন্যতম সন্মান করে না। চোখের সামনে তরুনদের সামাজিক এই অবক্ষয় মেনে নেয়া যায় না। এ যেন সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা শাখার সাধারন সম্পাদক এড. কুদরত-ই খুদা জানান, ধূমপান ত্যাগের জন্য দরকার যুব সমাজের প্রবল ইচ্ছাশক্তি। ধূমপান প্রতিরোধে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে তরুণ সমাজকে সচেতন করা, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে পর্যালোচনা, পরিবারের অভিভাবক ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সচেতন করে তোলা, যাতে করে তাদের সন্তান ধুমপানের প্রতি আসক্ত না হতে পারে। একই সাথে তামাকজাত কোম্পানীর প্রচার ও প্রসার বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের পাশাপাশি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকার দোকানপাটে ধুমপান ক্রয়-বিক্রয় ও ধূমপান নিষিদ্ধ করা এবং সর্বপরি তার বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে আমি মনে করি।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ১৮ বছরের নিচে তথা অপ্রাপ্ত বয়সীদের নিকট ধুমপান বিক্রয় নিষিদ্ধ। অপ্রাপ্তদের নিকট ধুমপান বিক্রয় করলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারার শাস্তির বিধান করেছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button