পল্লী বিদ্যুৎকর্মীদের কর্মসূচি স্থগিত : বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক

# প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের অনুরোধে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত #
প্রবাহ রিপোর্ট ঃ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের অনুরোধে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত করে সারাদেশে বিদ্যুৎসরবরাহ চালু করেছে পল্লী বিদ্যুৎসমিতির (পবিস) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাতে এ তথ্য জানান আন্দোলনের সমন্বয়ক এজিএম আব্দুল হাকিম। আব্দুল হাকিম জানান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমাদের দাবির বিষয়ে আলোচনার জন্য সময় চেয়েছেন। মামলা প্রত্যাহার এবং আটকদের ছেড়ে দেওয়াসহ কোনো প্রকার হয়রানি না করার আশ্বাস দেয়ায় কর্মসূচি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর আগে, সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আন্দোলনরত পল্লী বিদ্যুৎসমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় মাহফুজ আলম সমস্যা সমাধান এবং আটকদের ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলে রোববার (২০ অক্টোবর) পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করেন পল্লী বিদ্যুৎসমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তিনি বলেন, কর্মীদের অধিকাংশ দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। বাকিগুলো বাস্তবায়নেও কাজ চলছে।এদিকে বিকেল থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎসরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার তথ্য জানা যায়। এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সচিব হাসিনা বেগম বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎশাটডাউন করে দেয়া হচ্ছে বলে খবর পাচ্ছি। বিদ্যুৎচালুর ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। মাঠপর্যায়ের সমিতির অফিসগুলো এ নিয়ে কাজ করছে। বিস্তারিত বোর্ডের জনসংযোগ শাখা বলবে। রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎসমিতির তানোর জোনাল অফিসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) কামাল হোসেন জানান, কর্মীরা বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে গোটা উপজেলায় বিদ্যুৎবন্ধ করে দিয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা বিদ্যুৎসরবরাহ করতে চান না। দাবি আদায়ে সারা দেশের কর্মীরা ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দেশের ৬৪টি জেলায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীনে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎসমিতি আছে। এসব সমিতিতে কর্মরত আছেন প্রায় ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা দেশের ১৪ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎসরবরাহ করেন। দেশের মোট গ্রাহকের হিসাবে এটি প্রায় ৮০ শতাংশ। পল্লী বিদ্যুৎসমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বোর্ডের কাছে কিছু দাবি জানিয়ে আসছিলেন। দাবি আদায়ে প্রায় ১০ মাস ধরে তারা আন্দোলন করছেন। এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এমন ২০ জন কর্মকর্তাকে বুধবার চাকরিচ্যুত করা হয়। এর আগে, পল্লী বিদ্যুৎসমিতির ২০ জন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন জেলায় সাময়িকভাবে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করে দেয় পবিস। একই সঙ্গে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) চেয়ারম্যানের অপসারণ এবং দুই দফা দাবি বাস্তবায়নে ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের হুঁশিয়ারি দেন পল্লী বিদ্যুৎসমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন লাখ লাখ গ্রাহক। তবে এ দিন বিকেলের দিকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক প্রকৌশলী রাজন কুমার দাস (এজিএম), প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া (ডিজিএম), দীপক কুমার সিংহসহ (ডিজিএম) সমিতির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়। উল্লেখ্য, অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন ও অনিয়মিত কর্মীদের নিয়মিতকরণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন পল্লী বিদ্যুৎসমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী।
অপরদিকে সকাল থেকে যে সংবাদ আসছিল তা তুলে ধরা হলো ঃ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ব্ল্যাক আউট কর্মসূচিতে ভোগান্তি গ্রাহকদের ঃ
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পাঁচজন জেনারেল ম্যানেজারকে চাকরিচ্যুত এবং সমিতির ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ব্ল্যাক আউট কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি- ৪ গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কুমিল্লার প্রধান কার্যালয় পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে জড়ো হন সমিতির কর্মচারীরা। সকাল থেকে সেখানে অবস্থান করে বিক্ষোভ করেন তারা। পরিস্থিতি শান্ত করতে ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা প্রশাসনের লোকজন হাজির হন। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়। এদিকে বেলা ১২টা থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন এলাকার বাসিন্দারা ভোগান্তিতে পড়েন। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় বিপাকে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। সন্ধ্যা ৬টায় প্রতিবেদনটি লেখার সময় জেলার অনেক স্থানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। নাঙ্গলকোট উপজেলার বাসিন্দা বেলাল হোসেন জানান, দাবি-দাওয়া থাকবেই। তাই বলে সব সময় জনগণকে হয়রানি করে কেন? এ জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশে এখন দাবি মানেই জনগণের হয়রানি। কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কর্মচারীরা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। গ্রেপ্তারদের নামে করা মামলা তুলে না নিলে এবং চাকরিচ্যুত জিএমদের পুনর্বহাল না করলে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি সমিতির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিক্ষুব্ধরা। এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ব্ল্যাক আউট কর্মসূচি পালন করলেও কুমিল্লা পিডিবির আওতাভুক্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল।