স্থানীয় সংবাদ

ভেড়ামারায় পদ্মা নদীতে ইলিশ মাছ ধরার মহোৎসব চলছে : কর্তৃপক্ষ নিরব

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় শর্তেও

ভেড়ামারা প্রতিনিধি ঃ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার পদ্মা নদীতে প্রকাশ্যে জেলেরা নৌকা নিয়ে কারেন্ট জাল দিয়ে ইলিশ মাছ শিকার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পদ্মা নদীতে ইলিশ মাছ ধরার মহোৎসব চলছে। গ্রাহকের কাছে সেগুলো পৌঁছাচ্ছে হোম ডেলিভারি’র মাধ্যমে। প্রকাশ্যে ধরা ও বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। ইলিশ মাছ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলায় নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা, বিক্রি ও পরিবহন বন্ধ। সরেজমিনে নদী তীরবর্তী এলাকায় পদ্মা নদীতে জেলেরা নৌকা নিয়ে কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার করতে দেখা গেছে। এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, এ বছর মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৪ চলছে ঢিলেঢালা ভাবে। বিগত বছর গুলোতে লাগাতার অভিযান চালানো হলেও এবার চলছে কচ্ছপ গতিতে। নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পর থেকে পদ্মা নদীতে দিনে ও রাতে অবৈধভাবে ধরা হচ্ছে ইলিশ মাছ। ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর. মোকারিমপুর, বাহাদুরপুর ও জুনিয়াদহ ইউনিয়নের (৪টি ইউনিয়ন) পদ্মা নদীর ধারে ইলিশ মাছ ধরার মহোৎসব চলছে। ভেড়ামারার ১২ মাইল এলাকা থেকে রায়টা পাথর ঘাট পর্ষন্ত পদ্মা নদীতে প্রকাশ্যে জেলেরা নৌকা নিয়ে ইলিশ মাছ ধরছে। নদী এলাকায় চলছে এসব ইলিশ মাছ বেচাকেনা। বিশেষ ক্ষেত্রে শহরে এনে চোরাই ইলিশ হোম ডেলিভারিও দিচ্ছেন অসাধু জেলে ও তাদের লোকেরা। এদিকে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়েও প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীদের ডালিতে করে ইলিশ বিক্রি করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন অবৈধ জেলেরা নদী থেকে ইলিশ শিকার করে তারা নদীর তীরে এনেই বিক্রি করছেন। ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ গুলো তারা ১২০০-১৫০০ টাকা ও ছোট (জাটকা) ইলিশ মাছ ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন তারা। তবে এ সময় নদীতে মৎস্য বিভাগের কাউকে অভিযান চালাতে দেখা যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইলিশগুলো আমরা এখান থেকে একটু কম দামে কিনে নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে একটু লাভ রেখে বিক্রি করি। তবে তিনি এ ব্যাপারে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত কেউ ইলিশ মাছ ধরতে পারবেন না। উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ ও মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ের মধ্যে কেউ ইলিশ মাছ ধরলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করা হবে। মাছ বিক্রির বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ইলিশ মাছ রক্ষা করতে আমাদের অভিযান চলছে। নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যে-সব জেলেরা মাছ ধরছেন তাদের ভিজিএফসহ অন্যান্য সুবিধা বাতিল করা হচ্ছে। এছাড়াও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের জেল, জরিমানা করা হচ্ছে। তাদের থেকে জব্দ করা জাল পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। ভেড়ামারা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শাম্মি শিরিন বলেন, ভেড়ামারা উপজেলার পদ্মা নদীর অংশে অভিযান চালিয়েছি। তাদের কাছে থেকে জব্দকৃত ইলিশ এতিমখানায় দান করা হয়েছে। এছাড়া তাদের কাছে পাওয়া ৫ হাজার মিটার কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয় যার আনুমানিক মূল্য ১লাখ টাকা। ইলিশ শিকার ও বিক্রির বিষয়টি আমি শুনেছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা বিভিন্ন স্থানে সাধ্যমতো অভিযান চালাচ্ছি। ভেড়ামারা অফিসার ইনচার্জ ইনচার্জ শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি সবেমাত্র থানায় যোগদান করেছি। এখন ইলিশ মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ। আপনাদের কাছ থেকে জেলেদের প্রকাশ্যে মাছ ধরা ও বিক্রির বিষয়টা জেনেছি। এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে আমরা পদ্মা নদীতে অভিযান চালাবো। ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, ইলিশ মাছ আমাদের জাতীয় সম্পদ এইটা রক্ষা করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর এই ২২ দিন সরকারিভাবে মাছ আহরণ পরিবহণ মজুত করা নিষিদ্ধ। জেলেরা পরিবার যেন কষ্ট না পায় তার জন্য সরকার উপজেলার নিবন্ধনকৃত ৩৩২ জন মৎস্য চাষিকে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে প্রতিজনকে ২৫ কেজি চাল দেওয়া হবে। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ের মধ্যে কেউ ইলিশ ধরলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button