স্থানীয় সংবাদ

খালিশপুর পৌরসভা মোড়ের এক চাঁদাবাজের অপকর্মে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার ঃ শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এক এক করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অপকর্মের ফিরিস্তি বেরিয়ে এলেও অনেকটা আড়ালেই পড়ে রয়েছে খালিশপুর পৌরসভা মোড়ের চাঁদাবাজ হাফিজুর রহমান মিলনের কীর্তি।
সূত্রে জানা গেছে, কোন চাকরি কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য না করেও বিশাল বিত্ত বৈভবের মালিক হাফিজুর রহমান মিলন। গত ৮-১০ বছর আগেও কিছুই ছিল না, অথচ শেখ পরিবারের কথিত বন্ধু পরিচয়দানকারী খালিশপুরের কাজী ফয়েজ মাহমুদের তোষামদি আর শেখ পরিবারের নাম ভাঙিয়ে অবাধে মাদক বিক্রি, আবাসন প্রকল্পের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, প্রবাসীদের কাছ থেকে ত্রাণ দেয়ার নাম করে বিভিন্ন সময় বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাত, খালিশপুরের বহুল আলোচিত বিদ্যুতের ক্যাবল চুরিসহ ভয় ভীতি দেখিয়ে অন্যের জমি দখল, বাড়ি দখলই ছিল সুচতুর হাফিজুর রহমান মিলনের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস। জানা গেছে, মিলনের বড় ভাই সন্ত্রাসী টুটুল প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন। সেই টুটুলের নামে বিভিন্ন সময়ে প্রভাতী স্কুল মাঠে টুটুল স্মৃতি ক্রিকেট, ফুটবল, হাডুডু, ব্যাডমিন্টন, ভলিবলসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আয়োজন করতো মিলন। এসব আয়োজনে সব ধরনের খরচ বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করতো শেখ পরিবার ও কথিত ফয়েজ মামার নাম ভাঙিয়ে। বিভিন্ন সময় এসব চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন কয়েকটি আবাসিক প্রকল্প । নিরবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো খালিশপুরের নাম করা একজন সমাজসেবক সহ খুলনার বড় বড় ব্যবসায়ী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষকরাও রয়েছেন এই তালিকায়। যাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে ত্রাণ দেবার নাম করে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে। রাতের আঁধারে সামান্য কিছু ত্রাণ প্যাকেট করে লোক দেখানো ত্রাণ দিতো। স্থানীয় খলিল মামার দোকানে ত্রাণ দেবার মালামাল বিক্রির এমন প্রমাণও মিলেছে শত শত বার। এদিকে বেশ কিছু মামলায় আটক ও কারাভোগ করা আসামি সিয়াম (২৫) হাফিজুর রহমান মিলনের আপন ভাইপো। চাচা মিলনের ক্ষমতার জোরে খালিশপুর অঞ্চলে বিশেষ করে ১২ নং ওয়ার্ডকে পরিণত করেছে মাদকের স্বর্গরাজ্যে। সূত্র বলছে, মাদকের ডিলারী ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মিলনের ভাইপো সিয়াম। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাদকসহ আটক হয় সিয়াম বাহিনীর প্রধান সিয়াম। এসময় সিয়ামের বাহিনীর সদস্যরা ডিবি কর্মকর্তাকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে মাদকসহ ডিবির কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় সিয়ামকে। এছাড়াও খুলনার ১৬ জন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত ও মারপিটের ঘটনায় যে মামলা হয়েছিল সেখানে এজাহারভুক্ত অন্যতম আসামি সিয়াম । একদিকে চাচা মিলনের ক্ষমতা অন্যদিকে প্রশাসনের লোকের গায়ে হাত দিয়ে পার পেয়ে যাওয়ার কারণে ১২ নং ওয়ার্ডের অনেকেই সিয়ামের বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে ভয় পান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ১২ নং ওয়ার্ডের একজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা জানান, ১২ নং ওয়ার্ডের সাবেক সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরকে মা সম্বোধন করে ওয়ার্ডে কেসিসির চলমান উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। আর এ কাজে সহযোগিতার জন্য মিলনের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর অন্যতম প্রধান সিয়ামকে কে নিয়োজিত করা হয়। এসব ঠিকাদারের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা কালেকশন করে দিতেন সিয়াম। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছোট-বড় সব ধরনের নেতারা পলাতক থাকলেও ফ্যাসিবাদের দোসর, চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও মাদক ব্যবসায়ী মিলন থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এসব কিছুর পেছনে বিএনপি’র মহানগরের এক নেতার সখ্যতা রয়েছে বলে তিনি জানান। থানা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক মহিলা নেত্রী জানান, এতো দিন আ.লীগের ঘাড়ে বসে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা মিলন ভোল পাল্টে বিএনপি হয়ে গেছে। বিএনপি এক নেতার নাম ভাঙিয়ে ইতোমধ্যেই চাঁদাবাজি শুরু করে দিয়েছে মিলন।
পৌরসভা মোড়ের একটি মার্কেটে ৫০ জন শেয়ারহোল্ডারের মধ্যে ৩৮ জন শেয়ারহোল্ডার রয়েছে । যার মধ্যে মিলনের শেয়ার দুইটি বাকি ১২ জন শেয়ার হোল্ডার কে বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে শেয়ার ছাড়তে বাধ্য করে মিলন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। যে ঘটনায় খালিশপুরের প্রাচীন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান নিরাময় ক্লিনিক এর ডাক্তার হাবিবুর রহমানকে প্রকাশ্যে লাঞ্চিতের ঘটনা ঘটায় হাফিজুর রহমান মিলন।
মিলন বর্তমানে পৌরসভা মোড়ের যে বাড়িতে থাকে সেটিও মিলনের নিজের বা বাবার নয় জোর করে মিলনের চাচাকে তাড়িয়ে দিয়ে দখল করা বাড়ি। এই বাড়ির সামনে সরকারি কিছু জায়গা দখল করে অবৈধভাবে দোকান উঠিয়ে ভাড়া খাচ্ছেন বছরের পর বছর।
এদিকে ১২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা মিলনের এতসব অপকর্মের পরেও মিলনের প্রতি প্রশাসনের নীরবতা দেখে হতবাক তারা প্রশাসনের কাছে দাবি জানান চিহ্নিত এই মিলনকে আইনের আওতায় এনে সঠিক তদন্ত-পূর্বক বিচারের ব্যবস্থা করার। এব্যাপারে গতরাতে মুঠোফোনে কথা হাফিজুর রহমান মিলনের সাথে। তিনি বলেন, আমি খেলাধুলার পাগল আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ সব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, আপনি এলাকায় আসেন এসে দেখে যান। আমার ভাইপো সিয়াম বয়সে তরুণ সে থাইয়ের ব্যবসা করে। তার নামে কোন মাদকের মামলা কখনো হয়নি, তাকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা কাল্পনিক। সে একটু ব্যবসা করে উঠে যাচ্ছে এইটা দেখে একটি মহল হিংসার বশবর্তী হয়ে এসব কাল্পনিক গল্প ছড়াচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button