খুলনা জেলা বিএনপি’র কমিটি নিয়ে উদ্বিগ্ন নেতাকর্মীরা
# জেলা বিএনপির কমিটির দৌড়ে এগিয়ে আছে যারা
আনিছুর রহমান কবির ঃ ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর। দেশের রাজনীতির আলোচনায় আসে বিএনপি ও জামাত। এরই মধ্যে দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করা ,দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগে খুলনা জেলা ও মহানগরের শতাধিক নেতাকর্মীকে শোকেস ও বহিষ্কার করা হয়। ভেঙে দেওয়া হয় জেলা কমিটি। তবে চাঁদাবাজি ও দখল বাণিজ্য নয়, কর্মীদের সুখ-দুঃখ বুঝবে এমন নেতা চান সাধারণ নেতা কর্মীরা। খুব দ্রুতই ঘোষণা হতে যাচ্ছে জেলা কমিটি। কেমন হতে চলেছে খুলনা জেলা বিএনপি কমিটি এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা এখন তুঙ্গে। তবে নেতাকর্মীদের মুখে আলোচনায় সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে একাধিক নেতার নাম।
এর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরীত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। তবে নতুন কমিটিতে কারা জায়গা পাবেন তা নিয়ে চলছে যাচাই-বাছাই। আর দল ও নেতাকর্মীদের কাছে যাদের ক্লিন ইমেজ রয়েছে তাদেরই নতুন কমিটিতে প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে। এছাড়া, খুলনা জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মধ্যে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের মধ্য থেকেই নেতৃত্ব আসতে পারে। দু-এক সপ্তাহের মধ্যে জেলার নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। জানা গেছে, নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে নানামুখী তৎপরতা, তদবির, জল্পনা-কল্পনা চলছে। বিএনপির খুলনা জেলাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে যারা সক্রিয়, তারা নিজ নিজ বলয় থেকে নেতৃত্ব উঠিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তারা। একই সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও তার নিজস্ব চ্যানেলে যোগ্য ও ক্লিন ইমেজের নেতৃত্বের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন।
তবে খুলনার হেভি ওয়েট দুই নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল ও আজিজুর বারি হেলাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের আস্তাভাজন হওয়ায় এই দুইজনের হাত ধরেই যোগ্য প্রার্থী ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব নির্বাচিত হতে পারে বলে ধারণা সর্বস্তরের বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের। বিএনপির কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, ‘তারেক রহমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চান। এ বিষয়টি মাথায় রেখে সম্পূর্ণ ক্লিন ইমেজের নেতাদের দিয়ে জেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করতে চান তিনি।’ আগের কমিটি নিয়ে খুলনার নেতাকর্মীদের মাঝে অনেক আলোচনা সমালোচনা শুনা গেলেও বর্তমান কমিটি হবে ক্লিন ইমেজের গ্রহণযোগ্য একটি কমিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা জেলা বিএনপির নতুন কমিটিতে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে আহবায়ক বা সভাপতি হিসেবে অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম এর এর নাম বেশি শোনা যাচ্ছে ,যিনি সাবেক জেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক খান জুলফিকার আলী জুলু,সাবেক জেলা বিএনপির সদস্য মনিরুজ্জামান মন্টু,সাবেক জেলার আহবায়ক আমির এজাজ খান।
এছাড়া, সদস্য সচিব বা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় শীর্ষে রয়েছেন সাবেক জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক আবু হোসেন বাবুর নাম । সদস্য সচিব হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী,সাবেক যুগ্ম আহবায়ক কেএম আশরাফুল আলম নান্নু এবিষয়ে সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম বলেন, এখনো কিছু বলতে পারছিনা, তবে কেন্দ্র থেকে যাকে দিবে তার হয়ে কাজ করব। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আবু হোসেন বাবু বলেন, আমাদের প্রাণের নেতা আদর্শের প্রতীক তারেক রহমানের আদর্শে আমি দল করছি। আওয়ামী লীগের আমলে হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হয়েও নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। কখনো দখলবাজি ও চাঁদাবাজির রাজনীতি করিনি। দীর্ঘ ১৭টি বছর বাড়ি ঘুমাতে পারিনি। এতকিছুর পরও মিছিল মিটিং থেকে শুরু করে সর্বস্তরের নেতা কর্মীদের আনাগোনা মুখর রেখেছি জেলা বিএনপি কে। সব সময় চেষ্টা করেছি এটা কর্মীদের পাশে থাকতে। তবে আমার কার্যক্রমে যদি আমাদের নেতা যুবসমাজের আইকন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যদি চায় তাহলে আমি আমার জেলার দায়িত্ব পালন করে একটি মডেল জেলা হিসেবে গড়ে তুলবো। তবে যাকেই দল সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদন নির্বাচিত করবে তার হয়ে কাজ করবো আমরা।
জেলা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, আমাদের ব্যক্তিগত কোন চাওয়া-পাওয়া নেই কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত নিবে সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা কাজ করবো। সেখানে আমাকে যদি সভাপতি পদ দেওয়া হয় তাহলে আমি তার যোগ্য প্রমাণ দিব। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী কেএম আশরাফুল আলম নান্নু বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাকে যোগ্য বলে মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব¡ দিবেন। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের হামলা মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি সর্বদায়িক জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশে রয়েছি যদি আমাদের খুলনার বকুল ভাই, হেলাল ভাই, মনা ভাইসহ নেতারা যদি চান আমাকে দায়িত্ব দিবেন তাহলে আমি আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করব। জেলা সাবেক সদস্য সচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী বলেন, আমাদের একটি আহবায়ক কমিটি দেওয়া হয়। আহবায়ক কমিটির মেয়াদ ছিল তিন মাস। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হামলা মামলা নির্যাতনের কারণে আমরা সম্মেলন করতে পারিনি ।আর এ কারণেই তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি দুই বছর নয় মাস ১২ দিন আমরা কমিটিতে থাকার পর আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জেলা কমিটি ভেঙে দেন। আমরা সেই সময় থেকে দলকে সংগঠিত করার জন্য হামলা মামলার শিকার হয়েও কখনো পিছুপা হয়নি। আগামীতে যদি আমার নেতা আমাকে আবার খুলনা জেলার দায়িত্ব দেয় তাহলে আমি নতুনভাবে জেলা কে সাজাবো এবং যদি আমাকে দায়িত্ব না দেওয়া হয় তবে যাকে দায়িত্ব দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব, দলের শৃঙ্খলা বজায় রাখবো। সাবেক জেলার আহবায়ক আমির এজাজ বলেন, আমার জীবনের সবটুকু সময়ই আমি বিএনপির রাজনীতিতে ব্যয় করেছি। আমার বিরুদ্ধে শুধু খুলনায় নয় ঢাকাতেও মামলা দেয়া হয়েছে বছরের অধিকাংশ সময়ই জেলে কাটিয়েছি। মামলা ও পুলিশের ভয়ে কখনো বাসায় ফিরতে পারিনি। নেতাকর্মীদের সুখ-দুঃখে পাশে রয়েছে। সুতরাং আমি আশা করি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার সুদৃষ্টি আমার উপর রাখবেন। তবে ভুঁইফোর এবং সুবিধাবাদীর নেতাদের স্থান হবে না কমিটিতে এমনটাই প্রত্যাশা করেন এই নেতা। জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম মনা বলেন, আমাদের ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দ্বিতীয় স্বাধীনতা রক্ষার্থে আমাদের নেতা তারেক রহমান আগে থেকেই বলে দিয়েছেন। কোন চাঁদাবাজ দখলবাজ এবং দুর্নীতিবাজদের স্থান হবে না কোন কমিটিতে। আমাদের ভারপ্রাপ্তের চেয়ারম্যান তারেক রহমান জেলা এমন একটি কমিটি দিবেন, যে কমিটিতে কোন চাঁদাবাজ দুর্নীতিবাজ লুটেদের স্থান হবে না। যারা আগামীতে খুলনা জেলার রাজনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে এমন একটি কমিটি আমরা চাই। ইতিমধ্যেই নানা অপরাধে জেলা ও মহানগরের প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে আমরা বহিষ্কার ও নোটিশ দিয়েছি।
কর্মীদের ভাবনা এ বিষয়ক কয়রার আলাউদ্দিন নামের এক কর্মী বলেন, আমরা বিএনপিতে এমন নেতা চাই যিনি কর্মীদের ভালবাসবেন কর্মীদের সুখ দুঃখের পাশে থাকবেন। নিজের পকেট ভরবেন এমন নেতা বিএনপি চায় না। তারোখাদা উপজেলার রেজাউল করিম নামে বিএনপির এক কর্মী বলেন, আমরা আর আহবায়ক কমিটি চাইনা, আহ্বায়ক কমিটি মানে হচ্ছে কর্মীদের জিম্মি করা। এই লোভ দেখিয়ে বছরের পর বছর পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় না। চলে একক বাণিজ্য। বিএনপিতে ইতিপূর্বে এত বহিষ্কার আমরা দেখিনি সুতরাং এখন আমরা চাই নতুন ক্লিন ইমেজের রাজনীতি যিনি মামলা হামলায় আমাদের পাশে ছিলেন, সুখ দুঃখের পাশে পেয়েছি। হাইব্রিড নেতা দিয়ে যেন কমিটি না হয় এটাই আমাদের প্রত্যাশা।