মণিরামপুরে গোখাদ্যের তীব্র সংকটে কৃষক ও খামারীরা মহাবিপাকে
মোঃ আব্বাস উদ্দীন, মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি ঃ মণিরামপুরে গোখাদ্যের তীব্র সংকটে কৃষক ও খামারিরা মহাবিপাকে পড়েছে। বিশেষ করে খড়-বিচালির সংকট ও অস্বাভাবিক ভাবে দাম বৃদ্ধি এবং খৈল-ভুষির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গরু-মহিষ,ছাগল ও ভেড়া পালনে প্রয়োজনীয় খাদ্য যোগান দিতে কৃষক ও খামারীরা হিমসিম খাচ্ছে। খাদ্য সংকট ও খাদ্যের দাম দিন দিন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজা করণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। তাছাড়া মণিরামপুরের পূর্বাঞ্চলের ভবদহ অধ্যুষিত ৭/৮টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা অতিবৃষ্টিতে চলতি বছর পানিবন্দী হয়ে পড়ায় ওই এলাকার কৃষক ও খামারীরা গোখাদ্যের যোগান দিতে যেয়ে মহাসংকটের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। ফলে গো-খাদ্যের যোগান দিতে ব্যর্থ হয়ে অনেকে পানির দরে তাদের পশু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক ও খামারীদের দেয়া তথ্য মতে, গত দুই মাসের ব্যবধানে গো-খাদ্যের দাম কয়েক দফা বেড়ে গেছে। মাস দুই আগে এক কাহন (১৬ পন অর্থাৎ ১২৮০ মুঠা) বিচালী তিন হাজার/সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা কয়েক দফা দাম বৃদ্ধি পেয়ে সম্প্রতি এক কাহন বিচালী আট হাজার /সাড়ে আট হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খড়-বিচালীর বেপারিরা জানান, চাহিদা অনুযায়ী খড়-বিচালী মিলছে না। আমরা দূর দূরান্ত থেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে বেশী দামে বিচালী কিনে এনে কৃষক ও খামারীদের কাছে বিক্রি করে থাকি। খড়-বিচালীর সাথে গত কয়েক বছরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকেরা উন্নত জাতের ঘাস আবাদ করে আসছে। খড়-বিচালীর সংকট মোকাবেলায় কৃষক ও খামারীদের কাছে গোখাদ্য হিসেবে ঘাস বেশ উপাদেয় ও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। চলতি মৌসুমে অতিবৃষ্টিতে অধিকাংশ ঘাসের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যেয়ে বিনষ্ট হয়ে যাওয়ায় গোখাদ্যের সংকট আরও প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে। উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান জানান, তার আড়াই বিঘা জমিতে ঘাস লাগানো ছিলো। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যেয়ে সমুদয় ঘাস নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, গত কয়েক বছর ঘাস আবাদ করে স্থানীয় কৃষককদের চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করে বেশ লাভের মুখ দেখে আসছি কিন্তু এবার সবই ক্ষতি হয়ে গেছে। উপজেলার শ্যামকূড় ইউনিয়নের হালসা গ্রামের প্রান্তিক চাষী বাবলু জানান, তার গোয়ালে দুইটি গরুর প্রতিদিনের খাবার যোগান দিতে বর্তমানে ৫/৬’শ টাকার খড়/বিচালী লাগে। কার্তিকের মঙ্গায় শ্রমজীবি মানুষ হিসেবে কোন আয়-রোজগার না থাকায় খাল-বিল থেকে কচুরি পানা কেটে এনে খাওয়ায়ে কোন হালে গরুকে বাঁচায় রেখেছি। উপজেলার ভবদহ অধ্যুষিত ঢাকুরিয়া গ্রামের খামারী শাহিন হোসেন জানান, ভবদহের জলাবদ্ধতার জন্য আউশ-আমন কোন ধানই এবার তাদের মাঠে উৎপাদন হবেনা। যে কারণে কোন খড়/বিচালী না থাকায় বাড়ীতে নির্মিত খামারে ৪টি গরু রেখে সব গরু পানির দরে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছি। উপজেলার ঘুঘুরাইল গ্রামের ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম জানান, ব্যবসায়ীক ও পোষা গরু মিলে তার গোয়ালে সব সময় ৭/৮টি গরু-মহিষ থাকে। বর্তমানে দুটি মহিষ, একটি এড়ে গরু ও দুটি গাভী-বাছুর গরু গোয়লে রয়েছে। খড়-বিচালীর সীমাহীন দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গরু-মহিষের মুখে খাবার যোগান দিতে যেয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে। খড়-বিচালীর পাশাপাশি খৈল, ভূষি, খুদের ভাত ও ফিড গবাদি পশুর উৎকৃষ্ট খাবার। যার বাজার মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষক ও খামারীরা চাহিদামত কিনতে পারছে না। ফলে পশু মোটাতাজা করণে কাংখিত সুফল না আসায় প্রতিটা খামারীরা এবার বেশ লোকসানের শিকার হবেন। এ বিষয়ে কথা হয় মণিরামপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ তৌহিদুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, অতিবৃষ্টিজনিত কারণে প্রত্যাশিত জমিতে ধানের আবাদ না হওয়ায় খড়-বিচালির সংকট দেখা দিয়েছে। তাছাড়া অতবিৃষ্টিতে বহুক্ষেতের ঘাস পানিতে ডুবে যেয়ে বিনষ্ট হওয়ায় গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের উদ্যোগে প্রান্তিক চাষী ও খামারীদের মাঝে উন্নত জাতের ঘাসের চারা বিতরণ করা হয়েছে এবং ঘাস লাগাইতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।