জাতীয় সংবাদ

পাচার হয়ে যাচ্ছে বৈধভাবে দেশে আসা বিপুল সোনা

দুবাইকেন্দ্রিক চোরাকারবারীরা বেশি তৎপর

প্রবাহ রিপোর্ট : দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলো দিয়ে ট্যাক্স পরিশোধ করে বৈধভাবেই দেশে আসছে বিপুল পরিমাণ সোনা। কিন্তু ওই সোনা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। গত তিন মাসের পরিসংখ্যানে ট্যাক্স পরিশোধ করে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে প্রায় ১ হাজার কেজি সোনা। এর বাইরেও চোরাইভাবে কতো সোনা দেশে এসেছে তার কোনো হিসাব নেই। ট্যাক্স পরিশোধ করে বৈধভাবে দেশে বিপুল পরিমাণ সোনা আসলেও সেগুলো অন্য দেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। জুয়েলারি ব্যবসায়ী ও কাস্টমস সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে সোনা সোনা চোরাকারবারিদের তৎপরতা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি বেড়েছে। বিশেষ করে দুবাইকেন্দ্রিক চোরাকারবারিদের তৎপরতা। বিগত জুলাই মাসে শাহজালাল বিমানবন্দরে সোনার বারের ট্যাক্স আদায় হয়েছে ১৪ কোটি ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার ২২০ টাকা,আগস্ট মাসে ট্যাক্স হিসেবে আদায় হয়েছে ৭ কোটি ৪৩ লাখ ৬ হাজার ৪২৮ টাকা, আর গত সেপ্টেম্বর মাসে আদায় হয়েছে ১০ কোটি ৩৫ লাখ ১৯ হাজার ৪২৭ টাকা। সব মিলিয়ে গত তিন মাসে শুধু সোনার বারের ৩২ কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫ টাকা ট্যাক্স আদায় হয়েছে। প্রতিটি সোনার বারের ট্যাক্স ৪০ হাজার টাকা। ওই হিসাবে ৮ হাজার ৩৮টি বার এসেছে। প্রতিটি বারের ওজন ১১৭ গ্রাম। ওই হিসাবে ৯৪০ কেজির কিছু বেশি সোনা দেশে এসেছে। তাছাড়া বিমানবন্দরে অলংকার বাবদ জুলাই মাসে ট্যাক্স হিসেবে আদায় হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৫১ টাকা, আগস্ট মাসে আসে ২৪ লাখ ২৬ হাজার ২৯৪ টাকা। আর সবশেষ গত সেপ্টেম্বরে আসে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ১২০ টাকা। সব মিলিয়ে গত তিন মাসে অলংকারের ট্যাক্স আদায় হয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ ৭১ হাজার ৯৬৫ টাকা। সোনার বার আর অলংকার মিলিয়ে গত তিন মাসে প্রায় ১ হাজার কেজির কাছাকাছি সোনা দেশে প্রবেশ করেছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশকে সোনা চোরাচালানের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ওই রুট ব্যবহার করে স্বর্ণ ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। চোরাকারবারিরা সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, এমনকি সিঙ্গাপুর থেকে সোনার চালানগুলো দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শাহজালাল, শাহ আমানত ও ওসমানী হয়ে দেশে নিয়ে আসে। পরে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে সেগুলো বাইরে নিয়ে এসে তা বেনাপোল ও ভোমরা, ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত হয়ে ভারতে চলে যাচ্ছে। কারণ ভারতে এখন অলংকার প্রস্তুতকারী ছাড়া কেউ সোনা আমদানি করতে পারে না। কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে সোনার যে চাহিদা রয়েছে, তা শুধু গয়না প্রস্তুতকারীদের পক্ষে আমদানি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা মেটাতেই চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে প্রবেশ করছে। পাশাপাশি সোনা ব্যবহার করা হয় মাদকের দাম মেটাতেও। এদিকে এ প্রসঙ্গে শাহজালাল বিমানবন্দর কাস্টমসের যুগ্ম-কমিশনার আল-আমিন জানান, সোনা পাচার হয়ে যায় বলে আগে ট্যাক্সসহ দুটি সোনার বার আনার অনুমতি ছিল। তা কমিয়ে একটি সোনার বার করা হয়েছে। এখন কোনো প্রবাসী বা কোনো যাত্রী যদি একটি সোনার বারের ট্যাক্স পরিশোধ করে বাইরে নিয়ে গেলে সরকারের কোনো সমস্যা নেই। কারণ যাত্রী সোনার বিষয়টি ডিক্লেয়ার (ঘোষণা) করেছেন এবং কর পরিশোধ করেছেন। সুতরাং তিনি বৈধভাবে নিয়ে যেতে পারেন ওই সোনা। এভাবে প্রত্যেক যাত্রী যদি একটি করে সোনার বার নিয়ে আসে এবং ট্যাক্স পরিশোধ করে, পরবর্তীতে সোনা আনা যাত্রী ওই বার কী করলেন বা কী কাজে ব্যবহার করলেন সেটা কাস্টমকের বিবেচ্য না। এ দিয়ে যদি কোনো অপরাধ বা দেশের বাইরে পাচার করে বা করতে চায় তা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর দেখার বিষয়। অন্যদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির মুখপাত্র মাসুদুর রহমান জানান, যে পরিমাণ সোনা দেশে ঢুকছে, সেগুলো দেশে থাকলে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের জন্য ভালো হতো, কম দামে সোনা বিক্রি করা সম্ভব হতো। কিন্তু সেগুলো চোরাকারবারির মাধ্যমে পাচার হয়ে যাচ্ছে। সার্বিক বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দফতরের উপমহাপরিচালক কর্নেল মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম জানান, সোনাসহ যেকোনো চোরাচালানের বিরুদ্ধে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে চোরাচালান রোধে বিজিবি সীমান্তগুলোতে নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নিয়ে অভিযান পরিচালনা করছে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button