মানোন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দিন
উচ্চশিক্ষায় অবনতি
দেশের উচ্চশিক্ষার মান তলানিতে নেমেছে। একসময় ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলা হতো যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে, এখন আন্তর্জাতিক র্যাংকিং বা মানবিচারে বিশ্বের সেরা এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও তার নাম নেই। একই অবস্থা চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্রেও। একসময় প্রচুর বিদেশি শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং মেডিক্যাল কলেজগুলোতে পড়তে আসতেন, এখন সেই সংখ্যা অতি নগণ্য। অথচ দেশে প্রায় প্রতিবছরই বড়েছে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ। আর বেড়েছে শিক্ষাক্ষেত্রে দলীয়করণ। জানা যায়, বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ ভালো অবকাঠামো ও নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গড়ে উঠেছে। অথচ এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদেশি শিক্ষার্থী বাড়ার বদলে ক্রমাগতভাবে কমছে। এতে শিক্ষা খাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের যে সুযোগ ছিল, তা দিন দিন কমছে। ইউজিসির সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২২ সালে ২৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৭০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী পড়তেন। এর মধ্যে ছাত্র ৫০৪ জন এবং ছাত্রী ১৬৬ জন। ২০২১ সালে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ৬৭৭ জন। ২০২০ সালে ছিলেন ৭৬৭ জন। অর্থাৎ প্রতিনিয়ত কমছে। ২০২২ সালে দেশে ১০০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন এক হাজার ২৮৭ জন। আগের বছর ২০২১ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন এক হাজার ৬০৪ জন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ৩১৭ জন। এভাবে ক্রমাগত বিদেশি শিক্ষার্থী কমার পেছনে তিনটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সেগুলো হলো- দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ও মানের ঘাটতি; যেসব দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসতেন, সেসব দেশ উচ্চশিক্ষায় অনেক বেশি উন্নতি করেছে এবং বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষা ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিক্যাল এডুকেশনের স্বীকৃতি না পাওয়া। ফলে বাংলাদেশের ডিগ্রি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। তাই বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষায় বিদেশি শিক্ষার্থীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। বোঝাই যায়, আমাদের উচ্চশিক্ষার দুর্গতি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এ থেকে উচ্চশিক্ষাকে রক্ষা করতে হবে। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।