স্থানীয় সংবাদ

থানায় মামলা গ্রহণ না করায় ৭ জনসহ অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জন আসামি করে আদালতে মামলা

# খুমেক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে অপহরণ #

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জি এম ইখতিয়ার উদ্দিন ও তার সহকারি সাজ্জাদ হোসেনকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ ও চাদাবাজির অভিযোগে অবশেষে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। এর আগে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে সংশ্লিষ্ট ওসি মামলা গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। অবশেষে ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর বিজ্ঞ আমলী আদালত সোনাডাঙ্গা থানা, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, খুলনা এর আদালতে খুমেক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জিএম ইখতিয়ার উদ্দিন বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেছেন।
বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ২০২৫ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট থানাকে তদন্ত রিপোর্ট প্রতিবেদন জমা দেওয়া নির্দেশ প্রদান করেছেন। মামলার আসামিরা হচ্ছেন রূপসা উপজেলার বাসিন্দা মৃত আরিফ আলী শেখের পুত্র মাছুম শেখ (২৭), সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার বাসিন্দা লিয়াকত গাজীর পুত্র রুবেল (৩০), নগরীর খালিশপুর এলাকার বাসিন্দা রকিব মিন্টুর কন্যা লিজা (২৭), ফুলতলা উপজেলার বাসিন্দা মনিলাল মন্ডলের পুত্র অনুপম মন্ডল (৩৭), সাতক্ষীরা জেলা তালা উপজেলার বাসিন্দা আজব আলী খানের পুত্র মো: আজহারুল ইসলাম খান (৩১), সোনাড্ঙ্গাা এলাকার বাসিন্দা মৃত হারেজ আলীর পুত্র প্রদীপ আলী শেখ (৩২) এবং বটিয়াঘাটা উপজেলার বাসিন্দা পঞ্চানন বাছাড় এর পুত্র উৎপল বাছাড় (২৯)সহ অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আদালতে মামলায় বাদী (খুমেক) হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জি এম ইখতিয়ার উদ্দিন উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবার তিনি অফিসের কাজে বাইরে থাকেন। কাজ শেষে তিনি ওই দিন দুপুর সোয়া ২টায় খুমেক হাসপাতালে নিকট মেইন গেটে যেতেই বাদীর সহকারি সাজ্জাদ হোসেনসহ বাদী জি এম ইখতিয়ার উদ্দিনকে মামলার এক নম্বর আসামি মাছুম শেখ ও দুই নম্বর আসামি রুবেলসহ অজ্ঞাতানামা আসামিরা তাদের ঘিরে ফেলে। এসময় মাছুম ও রুবেলের হাতে থাকা রিভলবার বের করে তাদের মাজা বরাবর অস্ত্রে ঠেকিয়ে বলে নেতা তোদের নিয়ে যেতে বলেছে। এসময় অপর আসামি লিজা বলেন চিৎকার করলেই গুলি। এ সময় ৬নং আসামি প্রদীপ আলীর পকেটে থাকা ক্ষুর বের করে বলে চুপ করে চল, তা না হলে ঘাড়ে পিছনে পোচ দিব। এ সময় মামলার সকল আসামিরা জোর করে ইজিবাইকে তুলে নিউ মার্কেট বাইতুন নুর মসজিদের দক্ষিণ পাশে কালাম অটো ইলেকট্রিক্স নামক গ্যারেজের ভিতরে নির্জন স্থানে অপহরণ করে নিয়ে যায়। নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বাদি দেখেন সেখানে একজন বসা। আসামীরা বলেন নেতা এই যে, মাল দুইজনকে নিয়ে আসছি। নেতা অস্ত্র বের করে চেয়ারের উপরে রাখে এবং আসামীদের নির্দেশে জি এম ইখতিয়ার উদ্দিন ও সাজ্জাদ হোসেনকে আসামীরা এলোপাতাড়িভাবে মারধর করে। এ সময় মামলার ৩নং আসামি লিজা ও ৭নং আসামি উৎপল বাছাড় বাদীকে বলে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দিবি। এ সময় ২নং আসামি রুবেল বলে তোদের পরিবারকে ফোন দিয়ে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে এখানে আসতে বল। ৭নং আসামি উৎপল বাছাড় বলেন দ্রুত ফোন না দিলে তোকে মেরে ফেলবো। এ সময় আসামিরা বলেন, ওদের কাছে পকেটে যা আছে তাই আগে নে। এ কথা বলে খুমেক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জি এম ইখতিয়ার উদ্দিনের পকেটে থাকা ছেলে চিকিৎসা খরচ বাবদ ২০ হাজার টাকা এবং তার সহকারি সাজ্জাদের পকেটে থাকা ২ হাজার ৮৩০ টাকা লুট করে নিয়ে নেয়। এ সময় আসামিদের নেতার একটা মোবাইল আসে, তখন নেতা বলেন ওরা যা দাবি করছে দিও দাও তা না হলে কি হবে বুঝতে পারছেন তো বলে চলে যায়। এরপর মামলার আসামিরা তাদেরকে একটি ইজিবাইক করে একটি অফিসে নিয়ে যান। সেখানে বিকলে সাড়ে ৪টার মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এসে বাদী খুমেক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জি এম ইখতিয়ার উদ্দিন ও তার সহকারি সাজ্জাদ হোসেন উদ্ধার করে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় নিয়ে আসেন। এর পরের দিন গত ২২ অক্টোবর খুমেক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জি এম ইখতিয়ার উদ্দিন ও তার সহকারি সাজ্জাদ হোসেন সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করতে যান। তখন থানা কর্তৃপক্ষ বলেন, উপরের চাপ আছে, মামলা নেয়া যাবে না। আর আপনাদের কোন বিষয়েই মামলা হবে না। আমরা যেভাবে বলি সেভাবে একটি জিডি করে চলে যান। তখন থানা কর্তৃপক্ষ নিজেরা জিডি লেখেন এবং বাদীকে দিয়ে জোর পুর্বক সাক্ষর করায় বলেন যান। আমরা দেখছি। জিডিতে অপহরণসহ চাদা দাবী মারধর কোন বিষয় থানা কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করতে না দিয়ে আরো খারাপ আচরণ করেছেন বাদীর সাথে। এরপর গত ২৯ অক্টোবর খুমেক হাসপাতালে পরিচালক সোনাডাঙ্গা মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করে পত্র প্রদান করেন। তারপরে অধ্যবধি থানা কর্তৃপক্ষ কোন মামলা গ্রহণ না করে কালক্ষাপন করে চলেছেন।
এ ব্যাপারে (খুমেক) হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জি এম ইখতিয়ার উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, গত ১১ নভেম্বর ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞানামা আরো ১৫-২০ জনকে আসামি করে অপহরন ও চাদাবাজি অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। এর আগে থানায় গেলে মামলা গ্রহণ না করায় অবশেষে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। তিনি বলেন, আমি এখনো আতংকে আছি। তাদের ভয়ে ঠিকমত অফিসও করতে পারছি না। ১২ নভেম্বর আমি যখন অফিসে উপস্থিত ছিলাম। তখনও দেখি লিজার সাথে আরও কয়েকজন আমার অফিস ব্লকে মহড়া দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে বাদীর জজ কোর্টের আইনজীবি এস এম মাসুদুর রহমান বলেন, (খুমেক) হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জি এম ইখতিয়ার উদ্দিন বাদী হয়ে গত ১১ নভেম্বর বিজ্ঞ আমলী আদালত সোনাডাঙ্গা থানা, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, খুলনা এর আদালতে ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১৫-২০ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলাটি আমলে নিয়ে বিজ্ঞ বিচারক আগামী ২০২৫ সালের ৪ ফ্রেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ প্রদান করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button