সম্পাদকীয়

জন্মনিবন্ধন নিয়ে ভোগান্তি, উত্তরণের পথ কোথায়?

দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শুরু হয়েছে ভর্তি মৌসুম। রাজধানীর অনেক স্কুলে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকেই নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়ে যায় এবং নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ হয়। তবে এ ভর্তিতে চরম বিড়ম্বনার নাম জন্মসনদ। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী, বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় শিশুর বয়স শনাক্ত করতে আবেদন ফরমের সঙ্গে জমা দিতে হয় জন্মসনদের ফটোকপি। এ কারণে বিদ্যালয়ে ভর্তি ঘিরে প্রতিবছরই সেপ্টেম্বর বা তার আগে থেকেই শিশুর জন্মসনদ সংগ্রহে অভিভাবকদের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। তবে এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। শিক্ষার্থীদের সরকারবিরোধী আন্দোলনের জেরে জুলাইয়ে দেশজুড়ে জন্মনিবন্ধনের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে। টানা পাঁচ দিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ছিল। মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ছিল প্রায় ১০ দিন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানরা আত্মগোপন করেন। কার্যালয়গুলোয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হামলা করা হয়। সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হয়। এসব কারণে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের বড় অংশজুড়ে অনেক জায়গায় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজ বন্ধ থাকে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে এসে জন্মনিবন্ধনের আবেদন বাড়তে থাকে। এ বছরের ৬ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে জন্মনিবন্ধনের আবেদনের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩ হাজার ৩৯৮। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তা লাফিয়ে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪ হাজার ২৬১টিতে। সবশেষ ১০ নভেম্বর জন্মনিবন্ধনের আবেদনের সংখ্যা ছিল ৩৮ হাজার ৫৫। জন্মনিবন্ধন হয়েছে ৩৩ হাজার ৯১৮টি। শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় যত এগিয়ে আসছে, ততই ভিড় বাড়ছে নিবন্ধক কার্যালয়গুলোয়। সময়মতো জন্মনিবন্ধন পেতে দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে অভিভাবকদের। শিশুর জন্মনিবন্ধন সনদ তুলতে গিয়ে দেখা যায় তাতে বাবা-মায়ের নাম ভুল। আবার বাবার নামে হয়তো মোহাম্মদ আছে, কিন্তু শিশুর জন্মনিবন্ধনে মোহাম্মদ নেই। মায়ের নামে আক্তার থাকলেও শিশুর জন্মনিবন্ধনে মায়ের নামের ঘরে বেগম লিপিবদ্ধ হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধনের সঙ্গে নামের মিল নেই জাতীয় পরিচয়পত্রের। এ ছাড়া অভিভাবকরা জন্মসনদ সংশোধন নিয়ে বাড়তি ব্যয়ের অভিযোগ করছেন। জন্মসনদ সংশোধনের ধার্যকৃত ফি ১০০ টাকা হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০০ টাকাও নিচ্ছেন। পাশাপাশি রয়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। তারা আবেদনকারীদের হয়ে তারা কাজ করে দেন। প্রয়োজনে জন্মসনদ তুলে দেওয়া পর্যন্ত তিন থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা তাদের দিতে হয়। আবার নতুন নিয়ম যুক্ত হয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েক গুণ। আমরা আশা করি, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে। ভোগান্তি লাঘব হবে অভিভাবকের- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এতে অভিভাবকদের ভোগান্তি নিরসন হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button