খুলনায় র্শীষ সন্ত্রাসী আশিক গ্রুপের সদস্যরা নগরীতে সক্রিয়
# আত্ম গোপনে বাহিনীর প্রধান #
# আশিক গ্রুপের শুটার ইব্রাহিম গ্রেফতার #
কামরুল হোসেন মনি ঃ খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)’র বিশেষ শাখার তালিকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী কিশোর গ্যাং লিডার ‘আশিক’ গ্রুপের বাহিনীর সহযোগীরা এখন এলাকায়। দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে থাকার পর তারা এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে। তবে গোয়েন্দার তৎপরতা থাকায় এই বাহিনীর একজন শুটারকে আটক করেছেন কেএমপির ডিবি পুলিশ। এছাড়া আশিকের বড় ভাই সজিবও বিপুল পরিমান ইয়াবাসহ আটক হয়েছে। তাদের গ্রেফতার মধ্যে দিয়ে বুঝা যায় কিশোর গ্যাং লিডার শীর্ষ সন্ত্রাসী আশিক গ্রুপের বাহিনীর সদস্যরা এখন শহরে। ‘আশিক’ এর নেতৃত্বে এমন কোন অপরাধ নেই যে করে না এ বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু এই বাহিনীর প্রধান এখন আত্মগোপনে। সেখান থেকেই তার বাহিনীকে দিয়ে খুনসহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
কেএমপি’র ডিবি পুলিশ জানায়, খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী আশিক গ্রুপ এর সহযোগী ও শুটার মো: ইব্রাহিম শিকদারকে আটক করেছে মহানগর ডিবি পুলিশ। সোমবার ( ১৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর ডিবি ওসি তৈমুর ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করেন। সে খুলনা সদর থানাধীন নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা আফজাল শিকদারের ছেলে। একটি মাদক মামলায় তার সাজাও হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা, মাদকসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। সে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী আশিক এর সহযোগী ও শুটার এবং মাদক ব্যবসা দেখাশুনার দায়িত্বে নিয়োজিত। এর আগে যৌথবাহিনী গত অক্টোবর মাসে বাহিনীর প্রধান আশিকের ভাই সজিব ইসলামকে এক হাজার ৬১৭ পিস ইয়াবাসহ আটক করেছিল। সে সময় তার কাছ থেকে ইয়াবা বিক্রির ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, ২১টি মোবাইল সেট, ১টি ল্যাপটপ, ৫টি সিসি ক্যামেরা এবং ১টি রামদা উদ্ধার করে। পরে তার দেয়া স্বীকারোক্তিতে তার মা জুলেখা বেগম ও ৩ সহযোগীও আটক হয়। সহযোগিরা হচ্ছে ফয়েজ রাব্বী, ইয়াকুব ও জিয়াউল ইসলাম জিয়া। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আর সজিবের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় ১১টি মামলা রয়েছে। নগরীর ৩০, ৩১ ও ২২নং ওয়ার্ড এলাকায় মাদক বিক্রিসহ বিভিন্ন অপরাধের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে আশিক বাহিনী। আটক সজীব তার ভাই এবং অপরাধের অন্যতম সহযোগী। এছাড়া ২০২৩ সালের ১ আগস্ট খুলনার রূপসা সেতু টোল প্লাজা থেকে ৯ হাজার ৩৫০ পিস ইয়াবাসহ সজীবকে গ্রেফতার করেছিল র্যাব। ওই সময় র্যাব জানিয়েছিল, চট্টগ্রাম থেকে মাদকের বড় বড় চালান এনে খুলনা শহরে তা বিক্রি করে চক্রটি। ওই মামলায় কিছুদিন কারাভোগের পর জামিনে বের হয় সজীব। আশিক এখন পর্দার অন্তরালে থাকলেও সজীব খুলনায় প্রকাশ্যেই মাদকের কারবার চালিয়ে আসছিল। সজিব ও আশিক ক্রয়ফায়ারে নিহত সুন্দরবনের বনদস্যু জুলফিকার আলী ওরফে জুলফির ছেলে। এখন সজিবের ভাই আশিক ইসলাম নগরীর ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং ‘আশিক গ্রুপ’-এর প্রধান।
আশিক গ্রুপ : কেএমপির বিশেষ শাখার তালিকায়, খুলনা শহরের বর্তমানে সব থেকে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে আশিক গ্রুপ। ওই বাহিনীর প্রধান আশিক নিজ নামে দলটি গঠন করেছে। সে খুলনা মহানগরীর সদর থানাধীন চানমারী এলাকার বাসিন্দা। ২০১৮ সালে ৬ সেপ্টেম্বর প্রথম হত্যা মামলায় জড়িয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত হন। এ পর্যন্ত তার নামে বিভিন্ন থানায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন। তার দলে অস্ত্রধারী সদস্য রয়েছেন ২৩ জন। তাদের নামে মোট মামলা রয়েছে ১১০টি। আশিক গ্রুপের প্রধান সহকারী ফয়সাল। তিনি খুলনা সদর থানাধীন দক্ষিণ টুটপাড়া এলাকার বাসিন্দা। ২০১৬ সালে তিনিও হত্যা মামলায় জড়িয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত হন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে আশিকের গ্রুপের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। তার নামে এ পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় আটটি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া ওই গ্রুপের সদস্য আব্দুল্লহ, জাহিদুল ইসলাম, বস মিজান, পালসার সোহেল, কাউট বাসার, হেলাল, পারভেজ, দুলাল, নাদিম, ডালিম, অপু, জিহাদ হোসেন জিয়ার, মো: সাগর লেলিন, শেখ গোলাম মোস্তফা ওরফে ট্যারা মোস্ত, আরমান, সাইফুল ইসলাম পিটিল, মো: ইয়াছিন, মো: নিয়াজ মোর্শেদ, স্পিকার মিরাজ ও শেখ বাবুল। এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। মামলাগুলোর মধ্যে হত্যা, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসা ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় রয়েছে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আশিক গ্রুপের প্রধান আশিকের বয়স মাত্র ২৮ বছর। ৮ বছর আগে এলাকার কিশোরদের নিয়ে তিনি গ্যাং সৃষ্টি করে মহড়া দিয়ে বেড়াতেন। পরে কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে হত্যাকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ওই এলাকায় মাদক ও পরবর্তীতে অস্ত্র বিক্রি শুরু করেন। ধীরে ধীরে এলাকার জমি ব্যবসায়ীরা তাকে ভাড়ায় নিয়ে বিভিন্নজনের জমি দখল শুরু করেন। বর্তমানে শহরের শীর্ষ মাদক সরবরাহকারীও আশিক গ্রুপ। আশিক এখন পর্দার অন্তরালে থাকলেও, তার বড় ভাই সজিব প্রকাশে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতো। এ ব্যাপারে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বাড়িতে বাড়িতে তল্লাসী ও কিছু কিছু এলাকার কয়েকটি স্থান সিল করেছি। আমাদের বিশেষ অভিযান অব্যাহত আছে । আসামী ধরতে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।”