সম্পাদকীয়

জনসচেতনতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

বন্ধ হচ্ছে না পলিথিন ব্যবহার

আমাদের দেশে বর্জ্য পদার্থের একটা বিরাট অংশ হচ্ছে পলিথিন বা প্লাস্টিক। উপাদানগত দিক থেকে এই পলিব্যাগগুলো মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী, পরিবেশ ও আবহাওয়ার জন্য ক্ষতিকর। তাই পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে যাবতীয় প্লাস্টিক শপিংব্যাগ ও পলিথিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এর আগে ২০০২ সালে সরকার আইন করে সাধারণ পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করলেও মাঠপর্যায়ে আইনটির বাস্তবায়ন করা যায়নি। অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে বিগত বছরে পলিথিনের ব্যাগ পরিবেশের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাল, নালা-নর্দমায় পলিথিনের স্তূপের কারণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এছাড়া পরিত্যক্ত প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে বাতাস, পানি ও খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। এই অনুপ্রবেশের ফলে দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস ও কিডনিজনিত রোগের উপক্রম ঘটে। প্লাস্টিক ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় তিন হাজার কারখানায় প্লাস্টিক ও পলিথিন তৈরি হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে দিনে ১ কোটি ৪০ লাখ ব্যাগ উৎপাদন হয়। এমন পরিস্থিতিতে পরিবেশ রক্ষায় গত ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপগুলোতে এবং ১ নভেম্বর পলিথিন ব্যবহার বর্জন করতে নির্দেশনা দেয় সরকার; কিন্তু সেটিও পুরোপুরি মানা হচ্ছে না। গত দুই মাসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ব্যাপক পরিমাণ পলিথিন জব্দ এবং আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে। তবু থেমে নেই এর ব্যবহার। মাঠপর্যায়ে পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে এরই মধ্যে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে দেশজুড়ে হাটবাজার ও কারখানায় অভিযান চালানো হচ্ছে। এসব বিষয় কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটর করছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত কমিটি। আমরা মনে করি, পলিথিনের উৎপাদন বন্ধ করা গেলে এর ব্যবহার বন্ধ করাটা নিশ্চিত করা যাবে। তবে উৎপাদন বন্ধের ব্যাপারে নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরি। মানুষ স্বেচ্ছায়-স্বপ্রণোদিত হয়ে পলিথিন ব্যবহার বন্ধ না করলে আইন প্রয়োগ বা নজরদারি করে কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করতে হলে মানুষকে সচেতন হতে হবে; এ বিষয়ে সরকারকেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button