সম্পাদকীয়

জিকা ভাইরাস কমাতে এডিশ মশা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

ঢাকায় শনাক্ত হয়েছে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী। গত তিন মাসে আটজনের শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি জানা গেছে। গত বছরও পাঁচজন জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন। চিকিৎসা নেওয়ার পর তারা এখন ঝুঁকিমুক্ত। জিকা ভাইরাসের দুটি ধরন আছে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। একটি আফ্রিকান, অন্যটি এশিয়ান। আইসিডিডিআরবি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকায় তাদের পাওয়া জিকা ভাইরাসের জিন বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, ধরনটি এশিয়ান। জিকা ভাইরাসজনিত রোগ। জিকা ভাইরাসে সাধারণ রোগীদের তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তবে আক্রান্ত রোগী যদি গর্ভবতী হন, তাহলে তার পেটের বাচ্চার ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্তানের মাইক্রোকেফালি হতে পারে। মাইক্রোকেফালি এমন একটি রোগ যাতে ভূমিষ্ঠ শিশুর মাথা বা মস্তিষ্ক হবে অস্বাভাবিক ছোট। এ ধরনের শিশুকে এক সময় পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। ল্যাটিন আমেরিকান দেশ ব্রাজিলে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত মায়ের গর্ভ থেকে এ পর্যন্ত এ ধরনের বেশ কিছু শিশু জন্ম নিয়েছে। বয়স্ক মানুষেরা আক্রান্ত হলে তার গুলেনবারি সিনড্রোমের (জিবিএস) আশঙ্কা থাকে। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি চলনশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এই ভাইরাস এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। জিকার বিষয়ে আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। বাকি ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। আক্রান্ত ব্যক্তির চামড়ায় লালচে দানার মতো ছোপ (র‌্যাশ) দেখা দেয়। সঙ্গে মাথাব্যথা, চোখ লালচে হওয়া, মাংসপেশি ও গিঁটে ব্যথা থাকে। আক্রান্ত হওয়ার ৩ থেকে ১২ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়, থাকে ২ থেকে ৭ দিন। জানা গেছে, জিকা ভাইরাস দেশে প্রথম ২০১৪ সালে শনাক্ত হয়। জিকার কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, এর চিকিৎসা উপসর্গভিত্তিক। গবেষকরা বলছেন, জিকার পাশাপাশি ঢাকা শহরে এখন চিকুনগুনিয়ায় অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। এর অর্থ, ডেঙ্গু, জিকা ও চিকুনগুনিয়া, এই তিন রোগে ঢাকা শহরের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগ তিনটি ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। প্রথমে এডিশ মশা নিধন ও সংক্রমণের ব্যাপারে মানুষকে জানানো ও সজাগ করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাজ। একই সঙ্গে নতুন রোগের বিষয়ে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াও তাদের কাজ। এ ক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি। তাই জিকা ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে এসব কাজ গুলো দ্রুততার সাথে করতে হবে। প্রথমত এডিশ মশাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মশা ও মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button