সম্পাদকীয়

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট দূর করার উদ্যোগ জরুরি

বিগত সময়ে দেশে একের পর এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বানানো হয়েছে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করেই। অনেক শিক্ষা বিশেষজ্ঞের মতে, এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনাই প্রাধান্য পেয়েছে। আবার পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও শিক্ষার্থীদের আবাসিক ও অন্যান্য সুবিধার কথা বিবেচনা না করেই একের পর এক বিভাগ বাড়িয়েছে, শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়িয়েছে। ফলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সংকট প্রকট হয়েছে। বিশেষ করে, মেয়ে শিক্ষার্থীদের যেখানে-সেখানে মেস করে থাকা কিংবা রাত-বিরাতে যাতায়াতের কারণে নিরাপত্তার অভাব তীব্র হয়েছে। পাবলিক বা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত মেধাবী শিক্ষার্থীরাই ভর্তির সুযোগ পান। কিন্তু এমন অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যাদের পারিবারিক অবস্থা সচ্ছল নয়। মেসে থাকা এবং রিকশায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজন হয় অনেকের পক্ষেই তা জোগাড় করা সম্ভব হয় না। আবার অনেক শিক্ষার্থীকে টিউশনি করে পড়ার খরচ জোগাড় করতে হয়। ছোট শহরগুলোতে টিউশনির তেমন সুযোগও নেই। ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরই মাঝপথে এসে শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটে। এটি শুধু শিক্ষার্থীর ক্ষতি নয়, রাষ্ট্রেরও ক্ষতি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে শিক্ষা কার্যক্রম চালু ছিল ৫৩টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই লাখ ৯২ হাজার ২৯৬। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫২টি আবাসিক হলে এক লাখ ১৮ হাজার ৩৬ জন, অর্থাৎ ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসিক সুবিধা রয়েছে। আর এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর সংখ্যা এক লাখ ৯ হাজার ৪২৯। তাদের জন্য রয়েছে ৯৭টি হল। এসব হলে আবাসিক সুবিধা রয়েছে ৪৯ হাজার ৪২৭ জনের। অর্থাৎ ৫৫ শতাংশ ছাত্রীর আবাসিক সুবিধা নেই। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদের সংখ্যা এক লাখ ৮২ হাজার ৮৬৭। তাদের জন্য ১৫৪টি হলে ৬৮ হাজার ৫৯৯ জনের আবাসিক সুবিধা রয়েছে। অর্থাৎ ৬৩ শতাংশেরই হল সুবিধা নেই। জানা যায়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন, তাদের ৬২ শতাংশই মেয়ে। কিন্তু ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের হলের সংখ্যা ও আবাসিক সুবিধা কম। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের মেসে উঠতে হয়। এমতাবস্থায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবাসিক সংকট দূর করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button