২০২৪’র শেষ দিনে খুলনার নিত্যপণ্যের বাজারে ‘ভীড়’

# থার্টি ফাস্ট ও ইংরেজী বর্ষবরণকে ঘিরে বাজারে পণ্য কিনতে সব বয়সীদের ভীড় #
# ইলিশ মাছ, গরুর মাংস ও মুরগী বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে অভিযোগ ক্রেতাদের #
মো. আশিকুর রহমান : বিদায় নিচ্ছে আরেকটি বছর ২০২৪। নতুন বছরের ভোরের সূর্য পৃথিবীর বুকে উদীত একটি নতুন বছর ২০২৫। বিদায়ী ২০২৪ সালের শেষ দিনটিতে এসে ভালো-মন্দ, আনন্দ-বেদনার, চাওয়া-পাওয়া, হারানো সব স্মৃতিগুলো আরও একবার হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করবে অনেকের বুকে। জীবনের সব ধরনের নেতিবাচক দিকগুলোকে দূরে ঠেলে আগামীর সুন্দর দিনের নতুন প্রত্যাশায় নতুন করে পথচলার প্রত্যাশা জানিয়েছেন নগরবাসী। এদিকে থার্টি ফাস্ট ও ইংরেজী নববর্ষ বরণকে ঘিরে বিদায়ী বছর ২০২৪ সালের শেষ দিনটিতে নগরীর নিত্যপণ্যের বাজার গুলোতে সব বয়সীদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। বিদায়ী বছরের শেষ দিনটিতে কিছু পণ্যে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বাজারে আসা ক্রেতাদের অভিযোগ। দাম বাড়তির তালিকায় রয়েছে ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগী, আলু, খিরাইসহ অরো কয়েকটি পণ্য। নগরীর নিত্যপণ্যের বাজারে আসা একাধিক ক্রেতারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি সময়ে নিত্যপণ্যের বাজার কিছুটা স্বাভাবিক থাকলে প্রতি বছর থার্টি ফাস্ট ও ইংরেজী বর্ষবরণকে ঘিরে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মাছ ও মাংস বাড়তি দামে বিক্রি করে থাকেন। বাজারে আসা ক্রেতারা বলছেন, অন্যদিন গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়, খাসির মাংস ১০০০ টাকার পরিবর্তে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইলিশ মাছ প্রতি কেজিতে ২/৩’শ টাকা বাড়তি এবং মুরগী প্রতি কেজিতে ১৫/২০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। বিপরীতে বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাটে গরু ও খাসি বেশি দামে কেনা লাগছে, বাড়তি গো-খাবারের দামও। তাছাড়া বাড়তি চাহিদা থাকার কারণে ইলিশ মাছ ও মুরগির দামও পাইকারি বাজারে বেশি বলে জানিয়েছেন মুরগী ও মাছ বিক্রেতা। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) নগরীর কয়েকটি নিত্যপন্যের বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সরেজমিনে মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) নগরীর দৌলতপুর বাজার ঘুরে জানা গেছে, গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৮০-৭০০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ১১০০ টাকা, মুরগী (ব্রয়লার ছোট) ২০০ টাকা, বড় ব্রয়লার ১৯০ টাকা, কক ৩০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৬০ টাকা, লাল লেয়ার ৩০০ টাকা, সোনালী ৩১০ টাকা, কয়লার ৩১০ টাকা, প্যারিস ৩৮০ টাকা, দেশি হাঁস ৪৫০ টাকা, চিনা হাঁস ৫০০ টাকা, রাজহাঁস ৬০০ টাকা দরে প্রতি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মাছ বাজারে ইলিশ মাছ প্রতি কেজি ৩০০০ টাকা, ২পিসে কেজি ১৫০০ টাকা, ৩ পিসে কেজি ১২০০ টাকা, ৪ পিসে কেজি ১০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মসলা বাজারে দেশি পেয়াজ (নতুন) ৫০ টাকা কেজি, পুরাতন ৮০ টাকা কেজি, রসুন ২২০ টাকা, আলু প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা, ৪৫ টাকার আলু ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খোলা সয়াবিন তৈল খুচরা ১৮২ টাকা ও পাম্প অয়েল খুচরা ১৭২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের বাজারে লাল ও সাদা (বড়) প্রতি পিস ১১ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। থার্টি ফাস্ট নাইট ও ইংরেজী বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে মাংস, মাংসের প্রতি বাড়তি চাহিদার কারণে সবজির বাজারে তেমন ভীড় নেই বলে জানিয়েছে সবজি বিক্রিতারা। সবজি বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৫০ টাকা, ফুলকপি ২০/২৫ টাকা, পাতাকপি ২০/২৫ টাকা, পেয়াজের কালি ২০/২৫ টাকা, লাউ প্রতি পিছ ৩০ টাকা, ওলকপি ২৫ টাকা, সীম ২৫/৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবু মিলছেনা কাংঙ্খিত ক্রেতার সাড়া। তবে চাহিদা রয়েছে টমেটো, গাজর, খিরাই ও শষার। টমেটো বড় প্রতিকেজি ৫০/৬০ টাকা, গাজর ৬০/৭০ টাকা, খিরাই প্রতি কেজি ৫০/৬০ টাকা এবং শষা ৪০/৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আসা ক্রেতা বিএল কলেজের শিক্ষার্থী কানিজ আক্তার কান্তা জানান, প্রতি বছরই একই চিত্র। বছরের শেষ দিনটিতে ব্যবসায়ীরা মাছ-মাংসের বাড়তি দামে বিক্রি করে। কয়েকদিন আগের ১৮০ টাকার ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। ৬৫০ টাকার গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। বিক্রেতাদের কাছে দাম বাড়তির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন বছরের এই দিনটিতে একটু দাম বাড়তি থাকে। অপর ক্রেতা মো. সোহেল রানা জানান, বন্ধুরা মিলে প্রতি বছর থার্টি ফাস্ট নাইটে পিকনিক করে থাকি। আমাদের মতো বিভিন্ন বয়সের মানুষ এই বিশেষ দিনটিতে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করে। এই সুুযোগকে কাজে লাগায় ব্যবসায়ীরা। রাতারাতি গরু, মুরগি, মাছের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ৬৫০ টাকার গরুর মাংস ৭০০ টাকায়। ১০০০ হাজার টাকার খাসির মাংস ১১০০ টাকা। মুরগিও কেজিতে বেড়েছে ২০/৩০ টাকা করে। এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত বলে আমি মনে করি। দৌলতপুর গরুর মাংস বাজারের জুনায়েত বিফ হাউজের মালিক নান্টু শেখ জানান, প্রতিদিন ৩ মণের মতো মাংস বিক্রি করি। গতকাল থার্টি ফাস্ট উপলক্ষে ১০ মণ মাংস বিক্রির টার্গেট নিয়েছি। আশাবাদী সর্বনি¤œ ৮ মণ মাংস বিক্রি করতে পারবো। প্রতি বছরই বছরের শেষ দিনটিতে কেনাবেচার দারুন চাপ থাকে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর। এবার আশাবাদী এমনটি হবে। ক্রেতা সাড়া ভালো। অপর মাংস বিক্রেতা জাবেদ জানান, প্রতিদিন ১২০/২০০ কেজির মতো মাংস বিক্রি করি। থার্টি ফাস্টকে সামনে রেখে ৭০০ কেজি মাংস বিক্রি টার্গেট নিয়েছি। প্রতি কেজি মাংস বিক্রি করছি ৭০০ টাকা করে। সলিট এঁড়ে গরু জবাই দেয়, কোনো গাই গরু বিক্রি করি না। এ কারণে আমার দোকানের মাংস ৭০০ টাকা করে কেজি। এছাড়া হাটে গরুর দামও বেশি। এমন একই কথা জানিয়েছেন একাধিক মাংস বিক্রেতারা।
মুরগি বিক্রেতা নয়ন জানান, থার্টি ফাস্ট ও ইংরেজী নববর্ষকে ঘিরে বাজারে মুরগী চাহিদা ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদার তুলনায় মুরগীর সরবরাহ কমে গেছে। মুরগীর বাড়তি চাহিদা কারণে পাইকারি বাজারে থেকে বাড়তি দামে মুরগি কেনা লেগেছে। এমন একই কথা জানিয়েছেন একাধিক মুরগি বিক্রেতারা। ইলিশ মাছ বিক্রেতা জয়নাল জানান, থার্টি ফাস্ট ও ইংরেজী নববর্ষকে ঘিরে মাছ বাজারে মাছের চাহিদা ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে মাছ সরবরাহ কম। প্রতিকেজি মাছ ২/৩’শ টাকা বেশি দামে কেনা লেগেছে। পাইকারি বাজারে বাড়তি দামে কেনায় আমাদেরও কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়েছে। সবজি বিক্রেতা কামাল হোসেন জানান, জানি বাজারে আজ (৩১ ডিসেম্বর) সবজির চাহিদা কম থাকবে। কারণ এদিন সব বয়সী মানুষ মাছ-মাংসের উপর ঝুকে পড়ে। তাই অল্প সল্প সবজি কনেছি, তারপরও ক্রেতার দেখা মিলছে না। দু’চার জন যদিও আসছেন, তারা কিনছেন টমেটো, খিরাই, শষা বা গাজর। খুব কম ক্রেতা আসছেন যারা সবজি কিনছেন। এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষন অধিদপ্তর খুলনার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ওয়ালিদ বিন হাবিব জানান, থার্টি ফাস্ট ও ইংরেজী বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে নগরীর বাজার গুলোতে মুরগী, গরুর মাংসসহ কয়েকটি পণ্যে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে বাজার মনিটরিং করে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।