সম্পাদকীয়

কারিগরি শিক্ষার সংকট দ্রুত সমাধানে উদ্যোগ নিন

শিক্ষাব্যবস্থার যে কোনো ক্ষেত্রে নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। শিক্ষক সংকট, উপকরণের অভাব, অনুন্নত কারিকুলামসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের কারিগরি শিক্ষা। সংকট এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, বিভিন্ন পলিটেকনিক, মনোটেকনিক এবং কারিগরি স্কুল ও কলেজে শিক্ষক পদের ৭০ শতাংশই শূন্য আছে। এছাড়া জনশক্তি ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যুরোর অধীন কারিগরি প্রতিষ্ঠানেও প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষক পদ শূন্য। বিভিন্ন টেকনোলজি ও কোর্সের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক ল্যাবরেটরি না থাকার বিষয়টিও উদ্বেগজনক। বিপুল জনশক্তিকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে কারিগরি শিক্ষায় সরকার বিশেষ জোর দিলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন হয়নি। ২০১২ সালে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষার্থী হবে ২০ শতাংশ। ২০২৪ সালে বলা হচ্ছে শিক্ষার্থীর হার ১৬ শতাংশ। তবে আন্তর্জাতিক কারিগরি শিক্ষার সংজ্ঞা ও বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এটি মূলত ৯ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। দেশে এখন প্রতি তিন জন বেকারের মধ্য এক জন উচ্চশিক্ষিত। তারা বিএ কিংবা এমএ ডিগ্রি নিয়েও শোভন চাকরি পাচ্ছেন না। গত পাঁচ বছরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এমন বড় ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যা ৪ লাখ থেকে ৮ লাখে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে ‘বিএ-এমএ’ ডিগ্রিধারী বেকার বেড়েছে প্রায় ৪ লাখ। এর মূলে রয়েছে কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব না দেওয়া। সরকারি হিসাবে কারিগরি শিক্ষায় দিনদিন মেয়েদের সংখ্যা কমছে। অথচ সাধারণ শিক্ষার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে বর্তমানে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। কারিগরি শিক্ষার হার কম হওয়ার কারণে দেশ একদিক দিয়ে বেকারত্বের রেকর্ড ভঙ্গ করছে অনবরত, অন্যদিক দিয়ে দক্ষতা ঘাটতি বেড়েই চলেছে। ফলে সার্বিক উন্নতি চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দেশের সর্বত্র গড়ে ওঠা বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অবকাঠামোগত সংকট কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। এসব সংকট দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনো কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা প্রদানের সার্বিক মান প্রশ্নবিদ্ধ হলে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে যারা সনদ নিয়ে বের হবেন, তাদের দক্ষতাও প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের রুগ্ণদশা অপরিবর্তিত থাকলে দেশে যে মানের জনশক্তি তৈরি হবে, তা দিয়ে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সুফল পেতে হলে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি বরাদ্দকৃত অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করা না গেলে এ নিয়ে যত পরিকল্পনাই করা হোক, কাঙ্ক্ষিত সুফল পেতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এখনি দেশে সব ধরনের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সংকট দূর করতেও জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button