জাতীয় সংবাদ

রোহিঙ্গা নিয়ে জাতিসংঘের ভুল প্রতিবেদনের প্রতিবাদ বাংলাদেশের

প্রবাহ রিপোর্ট : মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা নিয়ে গত সপ্তাহে প্রকাশিত জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার একটি ভুল প্রতিবেদনের কড়া প্রতিবাদ করেছে বাংলাদেশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে বাংলাদেশের অসন্তোষের কথা জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে ওই প্রতিবেদনটি কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে— তারও ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার মিয়ানমার অফিস একটি প্রতিবেদনে জানায় যে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি (অং সান সুকির সরকারকে হটিয়ে সামরিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে) থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে ৭১ হাজার ৩০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে দেশত্যাগ করেছে। কিন্তু তারা সবাই ভারতের মনিপুর ও মিজোরাম রাজ্যে প্রবেশ করেছে। অর্থাৎ জতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন বছরে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে কেউ প্রবেশ করেনি। আবার একই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে থাইল্যান্ডে যারা (রোহিঙ্গা) অবস্থান করছে, তারা অস্থায়ীভাবে (টেমপোরারি শেল্টার ফর ডিসপ্লেসড পিপল ফ্রম মিয়ানমার) সেখানে অবস্থান করছে। মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে যারা অবস্থান করছে, প্রতিবেদনে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে— তারা উদ্বাস্তু এবং পরিকল্পিতভাবে (রিফিউজি, প্ল্যানড সেটেলমেন্ট) বাংলাদেশে অবস্থান করছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু হিসেবে স্বীকার করে না। বরং তাদেরকে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষ হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই প্রতিবেদন নিয়ে আমাদের উদ্বেগ জানানোর জন্য জাতিসংঘ আবাসিক প্রতিনিধিকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। তার কাছে ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছি। অবিলম্বে এই প্রতিবেদন সঠিকভাবে প্রকাশ করার জন্য তাকে বলেছি। তিনি জানান, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে কোনও মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি। কিন্তু জাতিসংঘ বাংলাদেশ অফিস সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে যে, শুধুমাত্র গত অক্টোবরেই প্রায় ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সরকারের এই কর্মকর্তা বলেন, জাতিসংঘের এক দেশের তথ্যের সঙ্গে অন্য দেশের প্রতিবেদনের কোনও মিল নেই। তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা আছে বলে মনে হয়।
জাতিসংঘ মিয়ানমারের প্রতিবেদন: গত ৭ জানুয়ারি জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার মিয়ানমার অফিস থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কত মানুষ মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত হযেছে, তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ অং সান সুকির সরকারকে হটিয়ে সামরিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পরে কত মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, সেটির খতিয়ান দেওয়া হয়েছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে ৩২ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে দেশটির ভেতরে অবস্থিত বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছে। এছাড়া ৭১ হাজার ৩০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে ভারতের মনিপুর ও মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশে কেউ যে এসেছে, গোটা প্রতিবেদনে তার কোনও উল্লেখ নেই। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পুরো রাখাইন রাজ্যের (রাখাইন নর্থ ও রাখাইন সেন্ট্রাল) ভেতরে মোট বাস্তুচ্যুত জসগোষ্ঠীর সংখ্যা ৫ লাখ ২৭ হাজার। এরমধ্যে রাখাইন নর্থে আছে এক লাখ ১২ হাজার এবং এদের মধ্যে এক লাখ আট হাজার ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির পরে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অপরদিকে সেন্ট্রাল রাখাইনে মোট ৪ লাখ ১৫ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষের মধ্যে ২ লাখ ৩৭ হাজার জন গত তিন বছরে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এদিকে ২০২২ সাল থেকে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে বলে ধারণা করা হয়। এরমধ্যে জাতিসংঘ বাংলাদেশ অফিস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল, গত অক্টোবরে রাখাইনের মংদু টাউনশিপ থেকে ১৭ হাজার পরিবারের ৬৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
পৃথক শনাক্তকরণ ব্যবস্থা: বাংলাদেশে প্রবেশকারী নতুন রোহিঙ্গাদের জন্য পৃথক শনাক্তকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন এই ব্যবস্থা গতকাল সোমবার থেকে কার্যকর হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, আগে থেকে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছিল, তাদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে শনাক্ত করা হয়েছে। নতুন যারা এসেছে তাদেরকে পৃথকভাবে শনাক্ত করা হবে। নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের শনাক্তকরণে পৃথক পদ্ধতি গ্রহণের কারণ হচ্ছে— এতে করে তাদেরকে সহজেই পুরনোদের থেকে আলাদা করা যাবে। তাদেরকে ফুড কূপন এবং অন্যান্য প্রাথমিক সুবিধা দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button