স্থানীয় সংবাদ

খুলনার সড়ক ও মহাসড়কে বাড়ছে দূর্ঘটনা!

# সিসি টিভি ফুটেজে দেখা গেছে অসাবধানতা ও উচ্চগতির কারণেই ঘটেছে দূর্ঘটনা #
# হেলমেট ও গাড়ীর কাগজপত্র ছাড়াই উঠতি বয়সিরা দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে সমগ্র শহর #
# লিংক রোডের মুখে স্পিড ব্রেকারের প্রয়োজন রয়েছে মন্তব্য করেন নাগরিক নেতারা
# দূর্ঘটনারোাধে ট্রাফিক বিভাগকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বায়ন #

মো. আশিকুর রহমান ঃ খুলনা মহানগরীর সড়ক ও মহাসড়কে সম্প্রতি সময়ে দূর্ঘটনার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। যত্রতত্র সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে পড়ছে তাজা প্রাণ। সড়কে ট্রাফিক নিয়ম নীতির বর্হিভূত চলাচল ও নিয়ম মানায় উদাসীনতা, শহরে অবৈধ/ লাইসেন্সবিহীন গাড়ীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া ও স্বাভাবিক চলাচল, প্রাপ্তদের যত্রতত্র ইচ্ছা-স্বাধীন বিচরণসহ বেশ কিছু কারনকে দূর্ঘটনা প্রবনতা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ মনে করছেন সুশীল সমাজ। খুলনার সুশীল সমাজ বলছেন, ট্রাফিক নিয়ম নীতির বর্হিভূত চলাচল ও নিয়ম মানায় উদাসীনতা। খুলনা সড়ক-মহাসড়কে বর্তমানে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ট্রাফিক নিয়মবর্হিভূত মোটর সাইকেল চালনার প্রতিযোগীতা চলছে। তারা সমগ্র শহরজুড়ে বেপরোয়া দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে উচ্চগতিতে। দিন নেই, রাত নেই অবাধে সমগ্র শহর একই নিয়মে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের মাথায় হেলমেট তো থাকেই না, সাথে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ীর কাগজও খুঁজে পাওয়া যায় না তাদের নিকট। যার উদাহরন খুলনা সিটি বাইপাস লতা মোড়ের এলাকার দূর্ঘটনার ঘটনা। এমন চলাচলের ব্যপারে সচেতন মহল খুলনার ট্রাফিক পুলিশ আরো বেশি সচেতন থাকার পাশাপাশি লিংক রোডের মুখে স্পিড ব্রেকারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে পরামর্শ দিয়েছেন।
গত শুক্রবার (৩১ জানুয়ারী) রাত সাড়ে ৯টার দিকে আড়ংঘাটা থানাধীন গুরুত্বপূর্ন ব্যস্ত সিটি বাইপাস সড়কের লতা মোড় সংলগে মারাত্বক এক সড়ক দূর্ঘটনায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় খুলনার ডুমুরিয়া থানাধীন পশ্চিম বিল পাবলা এলাকার বাসিন্দা নির্মল সেনের পুত্র পুষপেন সেন (২৪) ও একই এলাকার বাসিন্দা প্রভাষ মন্ডলের পুত্র সৌরভ মন্ডল (২৪) মারা যান। ওই দূর্ঘটনার পর সিসি টিভির ফুটেজে দেখা গেছে, মোটর সাইকেলে থাকা দুই আরোহীর অসাবধানতা ও উচ্চগতির কারণেই মূলত দূর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি দূর্ঘটনায় নিহত ওই দুই মোটর সাইকেল আরোহীর মাথায় হেলমেট ও সাথে মোটর সাইকেলের কোনো কাগজপত্রও ছিল বলে জানা গেছে। এমন বেপরোয়া মটর সাইকেল চালনা এবং ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনার ঘটনাটি নিয়ে সচেতনমহল বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
একই দিনে খুলনার বেজেরডাঙ্গা চৌদ্দ মাইল এলাকার মিমু জুটস মিলের সামনে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে প্রাইভেটকার ও সিএনজির মধ্যে সংঘর্ষে মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটে। এঘটনায় হাফিজুর রহমান (৫৫) নামে এক যাত্রী নিহত হন। ওই দুর্ঘটনায় প্রাইভেটকার ও মাহেন্দ্রায় থাকা ১০জন যাত্রী আহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার ২১ জানুয়ারী রাত সাড়ে ১০টার দিকে রূপসা ব্রীজের নিচে আছিয়া সি ফুডের সামনে বালু ভর্তি ড্রাম ট্রাকের চাপায় এক মটর সাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়। তিনি খুলনা নগরীর টুটপাড়া এলাকার বাসিন্দা। এমন সড়ক দূর্ঘটনা নগরীতে থেকে নেই, বেড়েই চলেছে খুলনার সড়ক ও মহাসড়কে প্রাণনাশের ঘটনা।
দুর্ঘটনার সম্মুখীন হওয়া মোটর সাইকেল আরোহী খুলনার বেজেরডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন জানান, আমি চাকুরি করার সুবাদে প্রতিদিন বাসা থেকে রূপসা যাতায়াত করি। গতকাল সকাল ১১টার দিকে পথের বাজার পুলিশ চেক পোস্টের ১০০ গজ সামনে দূর্ঘটনার সম্মুখীন হই। আমি খুলনা অভিমুখী ছিলাম। এসময় আমার পেছন থেকে আসা একটি বাস ওভারটেকিং করার সময় আমাকে চাপ দেই। অপর পাশ থেকে একটি ট্রাক আসছিলো। বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে মোটর সাইকেল কন্ট্রোল করি। আল্লাহ বড় দূর্ঘটনার থেকে আমাকে বাচিয়েছে। এভাবে যারা সড়কে বেপরোয়া গাড়ি চালায় তাদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক বিভাগের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
এ বিষয়ে সাংবাদিক রায়হান মোল্লা জানান, খুলনা ট্রাফিক বিভাগ নিরলস কাজ করলেও থেমে নেই সড়ক দূর্ঘটনার প্রবণতা। সম্প্রতি খুলনার সড়ক ও মহাসড়কে দূর্ঘটনা বেড়ে চলেছে। দূর্ঘটনা রোধে প্রশাসনের পাশাপাশি অভিভাবক মহলকে অধিক সচেতন হতে হবে। এছাড়া খুলনার ট্রাফিক বিভাগকে আরো শক্ত অবস্থানে থেকে সড়কে দূর্ঘটনা রোধে দায়িত্বের সাথে কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র খুলনা মহানগর শাখার সাঃ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান জানান, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সকলকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে আমরা তরুনদের হাতে মটর সাইকেল তুলে দিচ্ছি। তারা ইচ্ছা স্বাধীন, উচ্চগতির চলাচলের কারনে দূর্ঘটনার কবলে পড়ে জীবন হারাচ্ছে। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিন তিনি। এ বিষয়ে সু-শাসনের জন্য নাগরিক ( সুজন)’র খুলনা মহানগর সাঃ সম্পাদক এড. কুদরত-ই খুদা জানান, লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষকে আরো বেশি সচেতন হবে। পাশাপাশি অভিভাবকসহ খুলনা ট্রাফিককে নিয়ম বর্হিভূত চলাচলকারী বিরদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকার আহ্বান জানান। একই সাথে তিনি লিংক রোডের মুখে স্পিড ব্রেকারের প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। শুক্রবার রাতে খুলনা সিটি বাইপাস লতা মোড়ের এলাকার মরাত্বক সড়ক দূর্ঘটনার বিষয়ে তিনি মর্মাহত হন।
দৌলতপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার মো. আল-আমিন জানান, শুক্রবার (৩১ জানুয়ারী) রাতে আড়ংঘাটা থানাধীন লতা বাইপাস মোড়ে সড়ক দূর্ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থলে এক মটর সাইকেল আরোহী মারা যান। অপরজনকে একজনকে উদ্ধার করে আমরা খুমেক হাসপাতালে নিয়ে গেয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।
আড়ংঘাটা থানার ওসি (তদন্ত) প্রদীপ মিত্র জানান, শুক্রবার (৩১ জানুয়ারী) রাত সাড়ে ৯টার আড়ংঘাটা থানাধীন লতা বাইপাস মোড়ে সড়ক দূর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থলে এক মটর সাইকেল আরোহী মারা যান। অপরজনকে একজন হাসপাতালে মারা যান। সড়ক দূরঘর্টনায় নিহত ওই দুই যুবকের মরদেহের প্রাথমিক সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারী) বিকালে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনাটির আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। খুলনার সার্বিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বর্তমান কার্যক্রমের বিষয়ে জানার জন্য কেএমপির ট্রাফিক বিভাগের ডিপুটি পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলামকে তার অফিসিয়াল মুঠোফোনে একাধীকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button