মণিরামপুর-অভয়নগরের দশ লক্ষাধিক মানুষের চরম ভোগান্তি

নির্ধারিত সময়ে টেকারঘাট সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি
মোঃ আব্বাস উদ্দীন, মণিরামপুর (যশোর) ঃ যশোরের মণিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার সীমান্তবর্তী টেকেরঘাট সেতুর নির্মাণকাজ মাঝ পথে যেয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দশ লক্ষাধিক মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আইনি জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি বলে দাবি করেছেন স্থানীয় সরকার প্রকৗশল অধিদপ্তর। জনভোগান্তি লাঘবে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক ইকবাল কবীর জাহিদ সেতুর কাজ শেষ করার জন্য আদালতে একটি রিট আবেদন করেছেন। পক্ষান্তরে সেতুটি নিমার্ণের উপর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে পুনরায় কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন যশোর জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুবুর রহমান। জানা গেছে, মণিরামপুর উপজেলার পূর্ব সীমান্তবর্তী নেহালপুর ইউনিয়ন ও অভয়নগর উপজেলার পশ্চিম সীমান্তে পায়রা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেছে টেকা (মুক্তেশ^রী) নদী। দুই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে ১৯৮০ দশকে অভয়নগরের টেকারঘাট এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘদিনের পুরাতন সেই সেতুটি ভেঙে নতুন করে ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর একই স্থানে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। খুলনা বিভাগীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন ৮ কোটি ৫৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ব্যয়ে মোজাহার এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে। ২০২৩ সালের ৭ মার্চ সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়া এবং সেতুর উচ্চতা সমস্যা নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন যশোরের বাসিন্দা ও ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক ইকবাল কবীর জাহিদ। সরেজমিনে দেখা গেছে, টেকারঘাট সেতুর নির্মাণকাজের প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডসহ কোনো মালামাল সেখানে নেই। অসমাপ্ত সেতুর পাশে একটি কাঠের তৈরি বিকল্প সেতু দিয়ে ছোট যানবাহন ও পথচারিররা চলাচল করছে। অভয়নগর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও পাশ^বর্ত্তী ভবদহ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল মতলেব বলেন, আইনি জটিলতায় সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে দুই উপজেলার মানুষ। কাঠের তৈরি বিকল্প সেতু দিয়ে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। যে কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার দাবী জানান। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের জনৈক এক প্রতিনিধি বলেন, আদালতের নির্দেশ মেনেই কাজ চলছিল। ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর নির্মাণ সামগ্রীসহ অন্যান্য মালামাল লুট হয়ে যায়। আমাদের লোকজনকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। রিট আবেদনকারী ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, ছয় মাসের মধ্যে নিয়ম অনুযায়ী কাজ শেষ করে রিপোর্ট করার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। আদালতের দেওয়া সময় শেষ হয়ে গেছে। অথচ এলজিইডি কিছুই করেনি। যে কারণে দায় এড়াতে পারে না তারা। এখন এলজিইডি হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। যশোর জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৗশলী আহমেদ মাহবুবুর রহমান বলেন, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞায় টেকারঘাট সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।