স্থানীয় সংবাদ

আ’লীগ নেতাকে মারপিটের অভিযোগের মামলায় সাবেক ছাত্রদল নেতা হাজতে

চার্জশিট প্রদানে দ্রুততায় পুলিশের রেকর্ড !

স্টাফ রিপোর্টার ঃ মারপিটের এক মামলায় সাবেক ছাত্রদল নেতাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে ডুমুরিয়া থানা পুলিশ। খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদককে মারপিটের ওই ঘটনায় থানা পুলিশের নজিরবিহীন দ্রুততা ও কর্মতৎপরতায় বিষ্মিত সচেতন মহল।
খুলনার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত ডুমুরিয়া অঞ্চলে দায়ের করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বাদীর চাচা সরদার আবু সালেহ গত বছরের ৩১ আগষ্ট রাত ৯.৪৫ মিনিটের সময় শাহপুর বাজারের একটি রেস্তোরায় বসে সংবাদপত্র পড়ার সময় কায়সারুজ্জামান খান হীরা, সাগর হোসেন নাসির, রায়হান মোল্লা সহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন আসামী হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। তারা রামদা ও লোহার রড নিয়ে আক্রমন করে। ঘটনা প্রত্যক্ষ করে লোকজন ছুটে এলে আসামীরা মটর সাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। আবুসালেহ ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মামলার প্রধান আসামী কায়সারুজ্জামান হীরাকে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারী) ভোরে তার বাসভবন থেকে আটক করে পুলিশ। এরপর দুপুরে আদালতে হাজির করলে শুনানী শেষে তার জামিন মঞ্জুর হয়। আসামী পক্ষের আইনজীবী মো: শাহজাহান ঠাকুর বলেন, আমার মক্কেল ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ইসরাত জাহান তামান্না শুনানী শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেছেন।
খুলনা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মো: মাসুদ পারভেজ বাবু বলেন, হীরা শাহপুর মধুগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। পারিবারিকভাবে বিএনপির রাজনীতির সাথে ওতোপ্রতোভাবে সম্পৃক্ত। একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তাকে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে হয়েছে। সরদার আবু সালেহ খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি এক দফা খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে ডুমুরিয়া বিশেষ করে শাহপুর সহ সংলগ্ন অঞ্চলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের অহেতুক হয়রানি, পুলিশ দিয়ে আটক করানো, দলীয় অফিসে ডেকে নিয়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে অপমান অপদস্থ করা, চাঁদাবাজি, বিরোধপূর্ণ জমির বিচার শালিসের নামে অর্থবাণিজ্য সহ ভুড়ি ভুড়ি অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ২০০৩ সালের ২৮ মার্চ সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন খুলনা জেলা যুবদলের চারুকলা বিষয়ক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী বাপ্পী। আবু সালেহ এই মামলায় চার্জশিটভূক্ত আসামী ছিল। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে প্রভাব খাটিয়ে এ মামলাটি খারিজ করিয়ে নেয়। এমন একজন মানুষ হাসিনার পতনের পরেও এলাকায় বীরদর্পে অবস্থান করে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার না করে একজন পরীক্ষিত বিএনপি কর্মীকে হয়রানি করছে। সবচেয়ে হতবাক করা বিষয়, মাত্র দেড় মাসে তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিট দাখিল করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও রঘুনাথপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গাজী তফসীর আহমেদ বলেন, সরদার আবু সালেহ আমার বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে পরাজিত হয়। এরপর আমার ভোটারদের শাহপুর বাজারে প্রতিনিয়ত অপমান অপদস্থ করতো। তিন স্তরের নিরাপত্তা বাহিনী ছিল তার। নানা সামাজিক অপরাধ ও দুস্কর্মের সাথে জড়িত ছিল।
অভিন্ন অভিযোগ করেন রঘুনাথপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুর রব আকুঞ্জি। বলেন, আবু সালেহ ও তার বাহিনীর হাতে তৃণমুলের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত ছিল। কিন্ত দুঃখের বিষয়, কতিপয় শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সাথে তার গোপন লেনদেনের সম্পর্ক থাকায় দেশে এতো বড় একটি পরিবর্তনের পরেও একটি মামলায় তাকে আসামী করা হয়নি। জানা গেছে, জেলা পরিষদের সদস্য থাকাকালে একাধিক বড় বড় ঠিকাদারি কাজ কতিপয় বিএনপি নেতাকে দিয়ে করিয়েছেন। ফলে তারা এখন রক্ষাকবচ হয়েছেন।
রঘুনাথপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাব ইন্সপেক্টর শেখ মোঃ জাকির হোসেন মাত্র দেড় মাসের মাথায় গত ৩১ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরমধ্যে একজনের স্বাক্ষী নিয়েছেন মোবাইল ফোনে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। কোন ভুল থাকলে আদালতে আমার কাছে জবাব চাইবে।
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ রানা জানান, পুুলিশ শাহপুর থেকে একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করেছে। সরদার আবু সালেহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এখানে মাত্র তিন মাস এসেছি। খোঁজ খবর নিয়ে জানাতে পারবো। #

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button