কুতুবদিয়ার পরিবেশ সংকট: বনায়ন রক্ষায় জরুরি উদ্যোগ প্রয়োজন

বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ জেলা কক্সবাজারের অন্তর্গত কুতুবদিয়া এক সময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ছিল। ছয়টি ইউনিয়ন এবং ৫৪টি গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত এ দ্বীপে এক সময় ঘন বনায়ন ছিল, যা এখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। তবে ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের কারণে আজ কুতুবদিয়ার বনায়ন প্রায় বিলুপ্তির পথে। দ্বীপবাসী এবং পরিবেশবিদরা এ অবস্থার দ্রুত সমাধানের দাবি জানালেও কার্যকর উদ্যোগের অভাব প্রকট। খুদিয়ারটেক একসময় বৃক্ষাচ্ছাদিত এলাকা ছিল, যেখানে মানুষের বসবাস না থাকলেও গাছের ঘনত্ব দ্বীপের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করত। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই অঞ্চল এখন প্রায় বনশূন্য হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা লক্ষ্য করা যায় চর ধুরুংসহ দ্বীপের অন্যান্য অঞ্চলে, যেখানে এক সময় সারি-সারি গাছ থাকলেও এখন কেবল শূন্যতা বিরাজ করছে। গাছপালার বিলুপ্তির ফলে শুধু পরিবেশগত বিপর্যয় নয়, জীববৈচিত্র্যেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। গাছের অভাবে পাখির অবাধ বিচরণ কমে গেছে, অনেক বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীও অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। বন উজাড়ের পেছনে যেমন প্রাকৃতিক কারণ রয়েছে, তেমনি রয়েছে মানবসৃষ্ট কারণও। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্বীপের বনাঞ্চল রক্ষায় তদারকির অভাব, অবৈধ দখলদারিত্ব ও কাঠ ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা বনায়নের ক্ষতির অন্যতম কারণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে কুতুবদিয়ায় মানুষের বসবাস কঠিন হয়ে উঠবে। এক গবেষণায় দেখা যায়, আগামী ১০ বছরের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে কুতুবদিয়ার বসবাসযোগ্যতা সংকটাপন্ন হবে। দ্বীপের চারপাশে পর্যাপ্ত বনায়ন না থাকলে এই সংকট আরও তীব্র হতে পারে। পরিবেশ রক্ষার জন্য এখনই প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ। শুধু সরকার নয়, দ্বীপবাসীকেও সচেতন হতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমে অংশ নিতে হবে। বনাঞ্চল রক্ষার জন্য নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং উপকূলীয় অঞ্চলে নতুন করে ম্যানগ্রোভ বনায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে উৎসাহিত করা এবং সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ হ্রাস করা জরুরি। কুতুবদিয়ার পরিবেশ রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ এবং স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। দ্বীপের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে এখনই যথাযথ পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।