গাজীপুরে আ’লীগের হামলায় ১৫ ছাত্র গুরুতর আহত

# উত্তাল গাজীপুর: ওসি সাসপেন্ড, আটক ১৬
# সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তের গুলিতে এক ছাত্র আহত
প্রবাহ রিপোর্ট ঃ গাজীপুরে ক্ষমতাচ্যূত সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে একদল ছাত্র-জনতাকে বেধড়ক পিটিয়েছেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা। এতে গুরুতর আহত হয়েছে ১৫ জন। ঠিক কি ঘটেছিল গাজীপুরে ঃ গাজীপুরে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে একদল ছাত্র-জনতাকে বেধড়ক পিটিয়েছেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা। এতে গুরুতর আহত হয়েছে ১৫ জন।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ধীরাশ্রম এলাকার বাড়িটিতে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা মোজাম্মেল হকের ওই বাড়িতে গেলে মসজিদের মাইকে ডাকাত বলে মাইকিং করা হয়। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়। তাদের বেধড়ক মারধর করা হয়। এসময় ছাত্রদের মধ্যে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। পরে আহতদের উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ সুযোগে বহিরাগতরা মোজাম্মেল হকের বাড়িতে লুটপাট করে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
হাসপাতালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক প্রতিনিধি সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আর কোনো বাড়িতে যেন হামলার ঘটনা না ঘটে সেজন্য তারা বিভিন্ন এলাকায় লোকজনকে সচেতন করে আসছেন। এরই অংশ হিসেবে ধীরাশ্রম এলাকায়ও তারা সচেতনতা তৈরি করেন এবং অনেককে মোবাইল নম্বরও দেন। এর মধ্যে খবর পান একদল লোক সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ঢুকে পড়ে লুটপাট করছে। তখন তাদের থামাতে বৈষম্যবিরোধীদের একদল প্রতিনিধি ওই বাড়িতে আসে। একটি অংশ আগে বাড়িটিতে গিয়ে তাদের থামাতে যায়। এর মধ্যেই হঠাৎ রামদা, ছুরি, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছাত্রদের ওপর ‘ধর ধর’ বলে হামলা চালায় একদল যুবক। ওই প্রতিনিধি অভিযোগ করেন, ঘটনার আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসেছে। তারা যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেনি। হামলা মারধরে ১৫ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের উপর হামলায় উত্তাল গাজীপুর : ওসি সাসপেন্ড, আটক হয়েছে ১৬জন ঃ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনার জেরে উত্তাল হয়ে উঠেছে গাজীপুর। হামলার প্রতিবাদে শনিবার দিনভর শহরে বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে আল্টিমেটাম ঘোষণা করা হয় সমাবেশে। শুক্রবার রাতে ও শনিবার দিনভর জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র অন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ ছাত্ররা এসব কর্মসূচি পালন করে। জাতীয় নাগরিক কমিটি মূখ্য সমন্বয়ক সার্জিস আলম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এ কর্মসূচিতে যোগ দেন। এদিকে ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশ ১৬ জনকে আটক করেছে। পাশাপাশি দায়িত্বে অবহেলার জন্য জিএমপি’র সদর থানার ওসি মো. আরিফুর রহমানকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ছাত্রদের উপর হামলার প্রতিবাদে শনিবার সকাল ১১টার দিকে গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে জাতীয় নাগরিক কমিটির ব্যানারে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা শুরু হয়। এতে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সংগঠক এডভোকেট আলী নাসের খান, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা এম এম শোয়ায়েব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, ওই সংগঠনের গাজীপুরের সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল মুহিমসহ স্থানীয় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সভা শেষে দুপুর সোয়া ১টার দিকে রাজবাড়ী মাঠ থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের রেলক্রসিং পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে ফের জেলা প্রশাসকের কর্যালয়ের সামনে রাজবাড়ি সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ শুরু করে। দুপুর আড়াইটার দিকে সার্জিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ তাদের সাথে যোগ দেন। সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির মূখ্য সমন্বয়ক সার্জিস আলম বলেন, রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে ছাত্রজনতা বাংলাদেশকে মুক্ত করেছে। তাদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি খুনি হাসিনার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এখনো গাজীপুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই সন্ত্রাসীরা সোস্যাল মিডিয়ায় এখনো আমার যোদ্ধাদেরকে হুমকি দিচ্ছে। অন্তর্বতী সরকার, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা-পুলিশ আজ রাতের মধ্যে হামলার সাথে জড়িত খুনিদের যদি না গ্রেপ্তার করে তাহলে আমাদেরকেও তাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। বিগত দিনগুলোতে আমরা গ্রেপ্তার-গ্রেপ্তার খেলা দেখতে পেয়েছি। একদল গ্রেপ্তার করে, দুইদিন পর আদালত বিচারক নামের কিছু অকালকুষ্মা-, যারা খুনি হাসিনার দোসর তাদেরকে জামিন দিয়ে দেয়। আমরা স্পষ্ট করে বলি- হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ও প্রত্যেকটা জেলা থেকে ওই খুনির দোসর বিচারকদের অপসারণ করতে হবে। টাকার বিনিময়ে, উপঢৌকনের বিনিময়ে অনেক দাগি আসামীদের জামিন দেওয়া হয়েছে। স্পষ্ট করে বলি- আজকের পর থেকে যদি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কোন ক্যাডার আমার ভাইদের কোন হুমকি দেয়, তাহলে পরদিন চরম পরিণতি হবে। আমার কোন ভাইয়ের গায়ে যদি একটা দাগ লাগে, তাহলে সেই দাগ প্রশাসনের চেয়ারে এসে লাগবে।
তিনি বলেন, সকালে প্রশাসনের সাথে বৈঠক হয়েছে। সেখানে বলে এসেছি গ্রেপ্তার খেলা বন্ধ করেন। এসব সন্ত্রাসীদেরকে গ্রেপ্তার করার জন্য নতুন এক অপারেশন চালাতে হবে। বাংলাদেশ থেকে সন্ত্রাসীদের বের করতে হবে। আমরা তাদের বলেছি, এই ক্লিন বাংলাদেশ অপারেশন দুই-এক দিনের গ্রেপ্তার অভিযানের মত হলে চলবে না। আমরা কিছুদিনের মধ্যে পুরো বাংলাদেশে গর্ত থেকে বের হয়ে যেসব সন্ত্রাসীরা মাঝেমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রাজপথে উঁকি দিচ্ছে, তাদের সবাইকে জেলখানার ভিতরে দেখতে চাই। গাজীপুরের রাজপথ থেকে একটা কথা স্পষ্ট করে বলি- বাংলাদেশের কোথাও আমার কোন সহযোদ্ধার গায়ে কেউ হাত দেওয়ার চেষ্টা করলে পুরো দেশ নতুন করে জেগে উঠবে। আমরা যেমন গাজীপুরে আসতে পারি, তেমনি প্রয়োজনে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারি। আমরা অভ্যুত্থানে দেখিয়েছি এদেশের ছাত্রজনতা সঠিক রাস্তা বিনির্মানে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার বহু ধৈর্য ধরেছি। কিন্তু ধৈর্যের একটা বাঁধ আছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে যারা কাজ করছেন, তারা যদি আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে ফেলেন, তাহলে এই বাংলাদেশে নতুন আরেকটি বিপ্লব আপনাদের দেখতে হবে। গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর গুলি ঃ গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দুই যুবক মোটরসাইকেলযোগে এসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি করে দ্রুত সটকে পড়েন। গুলিতে মোবাশ্বের নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলা শাখার এক কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনের জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক সামিউল আলম নাবিল। তিনি বলেন, আজ সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা প্রেস ব্রিফিং করছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলযোগে দুই যুবক এসে একাধিক গুলি ছুড়ে দ্রুত সটকে পড়ে। এতে মোবাশ্বেরের হাতে গুলি লাগলে তাকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা এ রকম একটি ঘটনা শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আমরা পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি। এর আগে গতকাল শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে গাজীপুর মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের পৈতৃক বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারা ঘটনাস্থলে গেলে পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত পাঁচজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।