নারী নির্যাতন: প্রতিরোধের পথ ও সকলের দায়িত্ব

সাম্প্রতিককালে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ১৮৯ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ৪৮ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এই পরিসংখ্যান শুধুমাত্র সংবাদপত্রে প্রকাশিত ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি, বাস্তবে এর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এই ভয়াবহ চিত্র আমাদের সমাজে নারী নির্যাতনের ভয়ংকর অবস্থা প্রকাশ করছে। ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, যৌতুকের কারণে নির্যাতন ও হত্যা, গৃহকর্মীদের উপর নির্যাতনÑএসব ঘটনাগুলো আমাদের সামাজিক কাঠামোর দুর্বলতা ও আইন প্রয়োগের ব্যর্থতাকে প্রতিফলিত করে। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হলে কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে, আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধীদের দ্রুত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নারীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা ও মানসিক সহায়তা দিতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ আরও সম্প্রসারিত করা দরকার। পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে পরিবার পর্যন্ত নারী অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রযুক্তির অপব্যবহার ও সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর নীতি গ্রহণ করা জরুরি। একটি সভ্য ও ন্যায়পরায়ণ সমাজ গঠনের জন্য নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা বন্ধ করা অপরিহার্য। এই সমস্যার সমাধান শুধুমাত্র আইন ও প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং সামগ্রিক সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমেই এটি সম্ভব। নারী নির্যাতন রোধে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং একটি নিরাপদ ও সমানাধিকারের সমাজ গড়ে তুলতে হবে।