সমুদ্র দূষণ কমাতে উদ্যোগ নিন

মানুষের ‘জীবন ও জীবিকা’র অন্যতম উৎস সমুদ্র। এই মহাসাগরগুলো পুরো বিশ^কে পানি দেয়, প্রোটিন সরবরাহ করে। অর্থনীতি শক্তিশালী এবং কর্মসংস্থানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মনুষ্যসৃষ্ট বহুবিধ সমস্যায় প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে প্রকৃতি। প্রকৃতির এ জরাজীর্ণ অবস্থার জন্য মূলত আমরাই দায়ী। প্রকৃতির টিকে থাকার জন্য রক্তসঞ্চালনের মতো কাজ করে ‘জলাধার’। প্রকৃতির জন্য এটি একটি বিশেষ নিয়ামক। তাই পানির বৃহৎ আধার সমুদ্রকে বলা হয় ‘পৃথিবীর রক্তপ্রবাহ’। এ মহাসমুদ্রগুলোকে মহাভাগাড়ে পরিণত করার সম্পূর্ণ দায়ও আমাদের। অক্সিজেনের ৩০ শতাংশের জোগান আসে সমুদ্র থেকে, অথচ এই অক্সিজেন-ভান্ডারকে আমরা প্রতিনিয়ত বিনষ্ট করে চলছি। বিশে^র বিভিন্ন সাগর ও মহাসাগরে লাখ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য ভেসে বেড়াচ্ছে। এসব বর্জ্যরে কারণে সামুদ্রিক পরিবেশ ও প্রাণীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে ‘ব্লু ইকোনমি’। তেল, কয়লা ও গ্যাস ইত্যাদি জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুম-লে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ক্রমে বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে মহাসাগরগুলোর সেই কার্বন শোষণ করে নেওয়ার ক্ষমতা কমতে থাকবে। এ ধরনের দূষণের কারণে সমুদ্রের পানির অম্লতা বাড়ে এবং সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদকুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া বৈশি^ক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। সামুদ্রিক প্রাণীর মধ্যে বিভিন্ন রোগের বিস্তারও ঘটছে। বাংলাদেশের সমুদ্রাঞ্চল ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার। এই বিশাল সমুদ্র সীমার দূষণ ঠেকাতে না পারলে আমাদের এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জলজ প্রাণিজগৎ বিপন্ন হবে, হুমকির মুখে পড়বে জলবায়ু, মানবসভ্যতা। সাম্প্রতিক সময়ে ডলফিন, তিমি, শুশুকসহ বৃহৎ আকৃতির সামুদ্রিক প্রাণীকে উপকূলের কাছাকাছি আসতে দেখা যায় এবং এসব প্রাণী অতিমাত্রায় প্লাস্টিক-দূষণের শিকার হচ্ছে। একইভাবে ভয়াবহ দূষণে রোগাক্রান্ত ও আহত অবস্থায় মরছে বিপুলসংখ্যক সামুদ্রিক জীব। বাংলাদেশের সমুদ্রাঞ্চল বিপুল মৎস্যভা-ারসহ অফুরন্ত প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ। তেল-গ্যাসসহ নানান খনিজসম্পদ সঞ্চিত রয়েছে সাগরের তলদেশে। এ গুরুত্ব অনুধাবন করে সমুদ্রাঞ্চলে দূষণ কমানোর কার্যকর ব্যবস্থাগ্রহণ অপরিহার্য। আমাদের বাড়ির পাশের নর্দমা, খাল, বিল ও নদীতে যত্রতত্র ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বোতল ও ব্যাগের বড় একটি অংশ আশপাশের নর্দমায় পতিত হয়। সেগুলো নর্দমার পানিতে ভাসতে ভাসতে নদী-নালা হয়ে সমুদ্র গিয়ে জায়গা করে নেয়। এ কারণে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি সমুদ্র সৈকতে আবর্জনার স্তূপ চোখে পড়ে। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। সরকারকে দূষণ কমিয়ে সমুদ্রের স্বাভাবিকতা বজায় রাখার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। রক্তপ্রবাহ দূষিত হলে যেমন মানুষ বাঁচে না, তেমনি সমুদ্র দূষিত হলে পৃথিবী বাঁচবে না’। এই গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে সমুদ্র দূষণ কমাতে স্থানীয়, আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক ও বৈশি^ক উদ্যোগ অপরিহার্য।