সম্পাদকীয়

বায়ুমান উন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিন

বায়ুদূষণে দ্বিতীয় বাংলাদেশ

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন ২০২৪ (ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট ২০২৪) শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বে সর্বাধিক বায়ুদূষণের কবলে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। আর এশিয়ার মধ্যে ছিল প্রথম স্থানে। বিশ্বে এক নম্বরে ছিল উত্তর-মধ্য আফ্রিকার দেশ চাদ। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বে সর্বাধিক দূষিত বায়ুর দেশ। প্রায়ই বাংলাদেশ প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানে থাকে। ২০২৩ সালে বিশ্বে বায়ুদূষণের শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের বায়ুদূষণ নিয়ে টানা সপ্তমবারের মতো এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইকিউএয়ার। এবারের প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৩৮টি দেশ ও অঞ্চলের আট হাজার ৯৫৪টি শহরের ৪০ হাজারেরও বেশি বায়ুমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন আইকিউএয়ারের বায়ুমান বিশেষজ্ঞরা। কাজেই এই প্রতিবেদনের সত্যতাকে অস্বীকার করা যাবে না। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২.৫) পর্যালোচনা করে বায়ুদূষণের এই প্রতিবেদন তৈরি করে আইকিউএয়ার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মান অনুযায়ী, বাতাসে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণার বার্ষিক গড় প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রাম বা তার কম হতে হবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশের বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে এর পরিমাণ ছিল ৭৮ মাইক্রোগ্রাম, যা নির্ধারিত বার্ষিক মানমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৫ গুণ বেশি। নিঃশ্বাসের সঙ্গে দূষিত বায়ু গ্রহণের কারণে মূলত মানুষের ফুসফুস আক্রান্ত হচ্ছে, শ্বাসতন্ত্রের রোগ বাড়ছে। বায়ুদূষণ ক্যান্সার, হৃদরোগসহ আরো অনেক রোগেরই কারণ হচ্ছে। বায়ুদূষণ জনিত বিভিন্ন রোগে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বহু মানুষ অসুস্থ হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বহু মানুষ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের এমন দুর্বিষহ অবস্থা চললেও বায়ুদূষণ রোধের প্রচেষ্টা কম। বায়ুদূষণের কারণ বা উৎসগুলো আমাদের অজানা নয়। বাংলাদেশে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হলো সনাতন পদ্ধতির ইটভাটা ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন। বায়ুদূষণের জন্য দায়ী কালো ধোঁয়ার ৩৮ শতাংশই নির্গত হয় ইটভাটা থেকে। আর যানবাহন থেকে নির্গত হয় ১৯ শতাংশ। দূষণের এই দুটি উৎস নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও বায়ুমান অনেকটা উন্নত হয়। দেশের মানুষের জীবন রক্ষার প্রয়োজনে অতি দ্রুত বায়ুমান উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button