ধর্ষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ জরুরি

বাংলাদেশে ধর্ষণ বাড়ছে, বাড়ছে ধর্ষণের পর হত্যা। সামাজিক অবক্ষয়, মাদকের বিস্তার, কর্মহীনতা, আকাশ সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব, আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকা, পর্নো ছবির অবাধ বিক্রি, সর্বোপরি নারীর প্রতি পুরুষের হীন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা। ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতরা হয়ে পড়ছে অপ্রতিরোধ্য। শিশু থেকে কিশোরী, যুবতী থেকে বৃদ্ধা, স্কুলছাত্রী থেকে পোশাককর্মী, ডাক্তার, আইনজীবী এমনকি ভিখারিনীও রেহাই পাচ্ছে না মানুষরূপী এসব হায়েনার হিং¯্র থাবা থেকে। ধর্ষকরা শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত থাকছে না, ঘটনা ধামাচাপা দিতে ঘটাচ্ছে নৃশংস হত্যাকা-। সম্প্রতি ধর্ষণের ভয়াবহতা ও ধর্ষণ পরবর্তী নির্যাতনের লোমহর্ষক সব ঘটনায় আঁতকে উঠছে দেশবাসী। মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় দেশের নাগরিক সমাজ তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। অব্যাহতভাবে চলতে থাকা নারী ও শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন, নারীদের দলবদ্ধভাবে হেনস্তা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাতে দিনে প্রতিবাদ হচ্ছে বিশ^বিদ্যালয়ে ও সড়কে। ধর্ষণ রুখে দিতে প্রতিরোধের চেয়ে প্রতিকার গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুসারে, এ বছরের ফেব্রুয়ারির ২৮ দিনে ধর্ষণের অভিযোগে দিনে গড়ে ১২টি মামলা হয়েছে। আগের বছরের ফেব্রুয়ারির ২৯ দিনে এই সংখ্যা একই ছিল। গত বছর সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১৭ হাজার ৫৭১টি মামলা হয়েছে। এই আইনে এ বছরের জানুয়ারি মাসে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৪৪০টি। গত বছরের জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৩। বর্তমানে যেভাবে শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, তা তাদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। পরিষদ এ জন্য উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। কেন এমন নৃশংসতা? এ ধরনের খবর আমাদের সবাইকে ব্যথিত করে, কাঁদায়, উদ্বিগ্ন করে। যারা এ জন্য দায়ী, তাদের বিচারের দাবি ধ্বনিত হচ্ছে। শিশুদের নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা দান ও মৌলিক অধিকার রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাজনৈতিক, পারিবারিক বা অন্য যে কারণেই হোক শিশু খুনের ঘটনা সামাজিক সংহতির অভাব ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের স্মারক। শিশুদের ওপর নির্মমতা থামছে না। জাগতিক পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত বলে শিশুদের বলা হয় স্বর্গের দূত। ভবিষ্যতের কা-ারি শিশুদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির বিকল্প নেই। এ সমাজ কলুষমুক্ত করতে হলে সব অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে পঙ্কিলতার আবর্তে ঘুরপাক খাবে সমাজ। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধ ও ঘটনার প্রতিবাদে সমবেতভাবে সোচ্চার হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। একই সঙ্গে সামাজিক সচেতনতা, আইনের সর্বোচ্চ বিধি নিশ্চিত হওয়া জরুরি।