আহলান সাহলান মাহে রমজান

রমজানে নফল দান-সাদাকাহ ঃ
দান-সাদাকাহ মুমিন জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে দান-সাদাকার অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। তা ছাড়া কোরআনে খাঁটি মুমিনের পরিচয় দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ এ অনুষঙ্গটি নিয়ে এসেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘সন্দেহ নেই, মুমিন তো তারাই, আল্লাহর নাম উ”চারিত হলে যাদের অন্তর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে; যখন তাদের কাছে তার আয়াতগুলো তিলাওয়াত করা হয়, তখন তা তাদের ঈমানকে বাড়িয়ে দেয় এবং তারা তাদের প্রভুর ওপর ভরসা করে। (তারা এমন লোক) যারা যথারীতি নামাজ আদায় করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে। এরাই হচ্ছে কৃত মুমিন।’ (সুরা আল-আনফাল : ২-৪) হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী, সাওম ও সাদাকা একত্র হলে জান্নাত পাওয়া অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে একটি প্রাসাদ রয়েছে, যার ভেতর থেকে বাহির এবং বাহির থেকে ভেতর পরিদৃষ্ট হবে।’ তখন এক বেদুঈন উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, এটি কার হবে?’ তিনি বললেন, ‘এটি হবে তার, যে ভালো কথা বলে, অন্যকে খাদ্য খাওয়ায়, সর্বদা সাওম পালন করে এবং যখন রাতে মানুষ ঘুমিয়ে থাকে, তখন সে উঠে সালাত আদায় করে।’ (তিরমিজি : ১৯৮৪)
রাসুলের জীবনে রমজানে সাদাকাহ ঃ রাসুলুল্লাহর (সা.) জীবনে রমজানে দান-সাদাকার পরিমাণ অনেক বেড়ে যেত। স্বভাবগতভাবে তিনি ছিলেন দানশীল। কেউ তার থেকে খালি হাতে ফিরত না (আহমাদ : ২০৪২)। রমজানে এই দানের পরিমাণ আরো বেড়ে যেত। ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজানে তিনি আরো অধিক দানশীল হতেন, যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। আর রমজানের প্রতিরাতেই জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন এবং তাঁরা একে অপরকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুল (সা.) রহমতের বায়ু অপেক্ষাও অধিক দানশীল ছিলেন।’ (বুখারি : ১৯০২; মুসলিম : ৩২০৮)
রমজানে বিভিন্ন ধরনের দান-সাদাকাহ করার সুযোগ রয়েছে। যথা-
জাকাত ঃ জাকাত রমজান মাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো ইবাদত নয়। তবে দুটি কারণে সাধারণত মানুষ রমজান মাসে জাকাত আদায় করে। প্রথমত, এ মাসে দান-সাদাকাহসহ সব ধরনের নেক কাজের সওয়াব বহু গুণে বৃদ্ধি করা হয়। দ্বিতীয়ত, জাকাত চন্দ্র বছরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ায় রমজানে জাকাত দিলে হিসাব রাখা সহজ হয়। ফলে যাদের ওপর জাকাত ফরজ, তারা অধিক সওয়াবের আশায় রমজানে জাকাত আদায় করতে পারে। ফিতরা ঃ ফিতরা ঈদের দিন সকালের একটি আমল। তবু আলেমরা কয়েকদিন আগে তথা রমজানের শেষ দশকে বিশেষত শেষ সপ্তাহে তা আদায় করার গুর“ত্বারোপ করেছেন। কেননা ফিতরার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, ঈদের দিনের নির্মল আনন্দে সবাইকে শরিক করা। সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হলে সম্পদ কিছুদিন আগে হস্তগত হওয়া প্রয়োজন। নফল সাদাকাহ ঃ আগেই বলা হয়েছে, রমজানে রাসুলুল্লাহর (সা.) দানশীলতা বেড়ে যেত। অতএব এ মাসে ফকির-মিসকিন, অভাবগ্রস্ত মানুষকে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ভালো কাজের জন্য নফল সাদাকাহ করার মাধ্যমে অবারিত নেকি অর্জন করা যেতে পারে।
ফিদইয়া ঃ কেউ এ মাসের ফরজ রোজা আদায় করতে অক্ষম হলে তার ওপর অর্পিত ফিদইয়া আদায় করা বাধ্যতামূলক। এটি সম্পদ প্রবাহের বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণও। ফিদইয়ার অর্থ গ্রহীতার অভাব পূরণে ভূমিকা রাখে। কাফফারা ঃ কারো ওপর কোনো আর্থিক কাফফারা থাকলে তা এ মাসে আদায় করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন কাফফারা আদায়কারী দায়মুক্ত হবেন, অন্যদিকে ওই সম্পদ গ্রহণকারীর আর্থিক প্রয়োজন পূরণ হবে এবং দাতা এর মাধ্যমে ফজিলত পাবেন।
অতএব সবার এ মাসে আবশ্যিক ও নফল দান-সাদাকাহ এবং সামাজিক কাজ করে বেশি বেশি পুণ্য অর্জন করা কাম্য।