আন্তর্জাতিক

গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় ৪১৩ জন নিহত : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

প্রবাহ ডেস্ক : গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গতকাল মঙ্গলবার গাজাজুড়ে ইসরাইলের প্রাণঘাতি বিমান হামলায় অন্তত ৪১৩ জন নিহত হয়েছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৭ মাসব্যাপী যুদ্ধ শুরু হওয়ার গতকাল মঙ্গলবার ভোরে চালানো হামলা সবচেয়ে ভয়াবহ। স্বাধীনতাকামী হামাস যোদ্ধারা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করেছে। এদিকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলার পর যুদ্দবিরতি চুক্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। আলবানিজ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক প্রাণহানি ঘটেছে। আমরা কেন উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতি মেনে চলা এবং জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার বিষয়টির প্রতি সম্মান দেখাচ্ছিনা।’ তিনি আরো বলেছেন, আমরা প্রতিনিধিত্ব করতে সব সময় রাজি। অস্ট্রেলিয়া এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় সব সময় সমর্থন অব্যাহত রাখবে। জেরুজালেম থেকে এএফপি এ খবর জানায়। নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হামাস তাদের জিম্মিদের মুক্তি দিতে বারবার অস্বীকৃতি জানানোর পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূত স্টিভ উইটকফ ও মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সমস্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর এই হামলার নির্দেশ দেওয়া হয়। একজন ইসরাইলি কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, অভিযান ‘যতদিন প্রয়োজন ততদিন অব্যাহত থাকবে এবং বিমান হামলার বাইরেও বিস্তৃত হবে।’ এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ‘নেতানিয়াহু ও তার চরমপন্থী সরকার যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে গাজার বন্দীরা এক অজানা পরিণতির মুখোমুখি হচ্ছে।’ কাতার, মিশর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায়, যুদ্ধবিরতির প্রাথমিক পর্যায় ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ওপর হামাসের হামলার ফলে গাজায় ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ মূলত বন্ধ হয়ে যায়। প্রথম পর্যায়টি মার্চের প্রথম দিকে শেষ হয়, এবং উভয় পক্ষই তখন থেকে সর্বাত্মক যুদ্ধ থেকে বিরত থাকলেও, যুদ্ধবিরতি আলোচনার পরবর্তী পদক্ষেপগুলোয় তারা একমত হতে পারেনি। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে টেলিগ্রামে একটি পোস্টে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা বর্তমানে ‘গাজা উপত্যকায় হামাস ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠনের সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে।’ গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, ‘আগ্রাসন, বিমান বোমাবর্ষণ এবং কামানের গোলাবর্ষণে’ ৪১৩ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই শিশু, নারী ও বয়স্ক লোক। এ সময় আহত হয়েছে কমপক্ষে ২৫০ জন। ইসরাইল গাজার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কাছাকাছি সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা এখন হামাসের বিরুদ্ধে ‘সর্বোচ্চ সামরিক শক্তি’ ব্যবহার করবে। গত রোববার সিএনএন’কে উইটকফ বলেন, তিনি একটি প্রস্তাব দিয়েছেন যার মাধ্যমে ইসরাইলি কারাগার থেকে ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দী’ মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইলি-আমেরিকান এডান আলেকজান্ডারসহ পাঁচজন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে।’গত শুক্রবার হামাস বলেছে, তারা আলেকজান্ডার এবং আরো চারজনের দেহাবশেষ হস্তান্তর করতে প্রস্তুত, যাদেরকে আন্দোলনের একজন কর্মকর্তা ইসরাইলি-আমেরিকান বলে বর্ণনা করেছেন। উইটকফ বলেছেন, হামাস প্রস্তাবের প্রতি ‘একটি অগ্রহণযোগ্য প্রতিক্রিয়া’ প্রদান করেছে এবং ‘সুযোগ দ্রুত শেষ হচ্ছে।’যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ে, হামাস আটজনের মৃতদেহসহ ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে এবং ইসরাইল প্রায় ১,৮০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে। তারপর থেকে, হামাস ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য আলোচনার দাবি জানিয়ে আসছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দ্বিতীয় পর্যায়ের রূপরেখা তুলে ধরেছিলেন যার মধ্যে অবশিষ্ট জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া, গাজায় অবশিষ্ট সমস্ত ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহার এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে, ইসরাইল প্রথম ধাপের মেয়াদ এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ইসরাইল জোর দিয়ে বলছে, দ্বিতীয় ধাপে যেকোনো রূপান্তরের মধ্যে গাজার ‘সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ’ এবং ২০০৭ সাল থেকে এই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণকারী হামাসকে অপসারণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। আলোচনা এখন এক অচলাবস্থায় রয়েছে। এমতাবস্থায় উভয় পক্ষই তাদের অবস্থানে অটল এবং পরস্পরকে অগ্রগতিতে বাধা দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করছে। আলোচনা অচলাবস্থা থাকা অবস্থায় ইসরাইল এই অঞ্চলে সাহায্য ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। মুক্তিপ্রাপ্ত ইসরায়েলি বন্দী ওমর শেম টোভ সম্প্রতি প্রকাশিত একটি ভিডিওতে বলেছেন, ‘এখন তারা (জিম্মিরা) কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা ভাবা আমার পক্ষে খুব কঠিন কারণ আমি সেই অনুভূতিটি জানি।’ ‘এটি একটি ভয়াবহ অনুভূতি এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি বন্ধ করা উচিত।’ উভয় পক্ষের তথ্য অনুসারে, হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরাইলি পক্ষের ১,২১৮ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক, অন্যদিকে গাজায় ইসরাইলের প্রতিশোধমূলক হামলায় কমপক্ষে ৪৯,৫৭২ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button