সিলেট নগরীর উন্নয়ন সংকট: অর্থসংকটে স্থবিরতা

সিলেট নগরীর উন্নয়ন কার্যক্রম অর্থসংকটের কারণে থমকে গেছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাতিল হওয়ায় অনেক কাজ অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে, আর ইতোমধ্যে শেষ হওয়া কাজগুলোর বিলও যথাসময়ে পাচ্ছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নগর ভবনের কাছে ঠিকাদারদের মোট পাওনা দাঁড়িয়েছে ৩৭ কোটি টাকা। অর্থসংকটের ফলে সিসিক নতুন ওয়ার্ডের সম্প্রসারণ প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করতে ব্যর্থ হয়েছে, ফলে বরাদ্দকৃত ৬০ কোটি টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য গৃহীত ড্রেন নির্মাণ, ছড়া-খাল সংস্কার, রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ ও সড়ক মেরামত প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তনের পর থেকেই এই প্রকল্পগুলো বাধার সম্মুখীন হয়। পরবর্তীতে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সেপ্টেম্বর মাসে জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া প্রকল্পগুলোকে অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয় বলে বাতিল করা হয়, যার ফলে নগরজুড়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ অসমাপ্ত থেকে গেছে। সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, বাতিল প্রকল্পগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত নতুন কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। টাকা সংকটের কারণে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নগরীর উন্নয়ন কর্মকা- চরম সংকটে পড়েছে। নগরবাসীর প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং অর্থ সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে, যাতে সিলেট নগরীর উন্নয়নকাজ পুনরায় সচল হতে পারে। অর্থসংকটের কারণে শুধু চলমান প্রকল্পই থমকে যায়নি, একই সঙ্গে নতুন প্রকল্প গ্রহণেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। নগরীর দ্রুত সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর প্রয়োজন থাকলেও বাজেট ঘাটতির কারণে এটি সম্ভব হচ্ছে না। জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই সড়ক মেরামত ও নাগরিক অবকাঠামোও সমান গুরুত্ব দাবি করে। কিন্তু অর্থ বরাদ্দের অভাবে এসব প্রকল্প একে একে বাতিল বা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সিলেট নগরীর উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তার অপেক্ষায় না থেকে, সিটি করপোরেশনকে বিকল্প অর্থায়নের উৎস খুঁজতে হবে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ, বিদেশি বিনিয়োগ, উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতা ইত্যাদির মাধ্যমে অর্থ সংকট দূর করা সম্ভব হতে পারে। এছাড়া, সিসিকের বাজেট পরিকল্পনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে নগর উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়মিতভাবে পরিচালিত হতে পারে। দেরি হলে সিলেট নগরীর সাধারণ মানুষকেই এর ভোগান্তি পোহাতে হবে। শহরের যানজট, জলাবদ্ধতা ও অপরিকল্পিত অবকাঠামোর ফলে নাগরিক দুর্ভোগ বাড়বে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। সিলেট নগরীর উন্নয়ন যেন থমকে না যায়, সেজন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখনই বাস্তবসম্মত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে নগরবাসী উন্নত ও আধুনিক নাগরিক সেবা পেতে পারে।