দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে সাসপেন্ডকৃত কেসিসির সাবেক দু’ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন

স্টাফ রিপোর্টারঃ দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে সাসপেন্ডকৃত খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক দু’ কর্মকর্তার অভিযোগ তদন্তে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। তারা হলেন, কেসিসির সাবেক সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার (এসএলও) ফারুখ হোসেন তালুকদার ও লাইসেন্স অফিসার (ট্রেড) হারুনর রশীদ। এর মধ্যে ফারুখ তালুকদার ছিলেন সাবেক মেয়র খালেক তালুকদারের ভাইপো আর হারুণ ছিলেন সাবেক মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্রের এলাকার লোক। গত ৮ এপ্রিল হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান হচ্ছেন, কেসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কোহিনুর জাহান, সদস্য রাজস্ব কর্মকর্তা এসকেএম তাছাদুজ্জামান ও এষ্টেট অফিসার গাজী সালাউদ্দীন। আর ৫ মার্চ ফারুখ হোসেন তালুকদারের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান হলেন, কেসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কোহিনুর জাহান, সদস্য রাজস্ব অফিসার এসকেএম তাছাদুজ্জামান ও সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার মোঃ মনিরুজ্জামান রহিম। দু’টি কমিটি অনুমোদন দেন সচিব শরীফ আসিফ রহমান। তবে তদন্ত শেষ করার জন্য কোন সময় বেধে না দেয়া সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম বলেন, অভিযোগগুলোর তথ্য খুঁজে বের করতে বেশ সময়ের ব্যাপার। কোন কোন অভিযোগ তদন্তে সময় বেধে দেয়া যায়। তবে এসব অভিযোগ তদন্তে সময় বেধে দিলে তদন্ত কর্মকর্তা সঠিকভাবে ও পরিপূর্ণ তদন্ত করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর’২৪ হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় উল্লেখ করা হয়,“ কেসিসির সাবেক লাইসেন্স অফিসার (যানবাহন) হারুন অর রশিদ কেসিসি’র আওতাধীন মোড় হতে শিববাড়ি মোড় পর্যন্ত বৈদ্যুতিক পোলে ১৭/০৪/২০১২ হতে ১৮/০৪/২০১৭ পর্যন্ত ৫ বছরের জন্য (৪ ফুট ৩ফুট) পরিমাপের ১৩৫০২টি বেলসাইন স্থাপনের জন্যে কেসিসি ও বিজ্ঞাপনী সংস্থা ভিউফাইন্ডারের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বিজ্ঞাপনী সংস্থা ২০১২ সাল হতে বিজ্ঞাপন প্রচারের অনুমোদন পেলেও মূলত: ২০১৬-১৭ অর্থবছর হতে বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু করে। মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক ২০১৬-১৭ অর্থবছর হতে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ৩ বছর জুড়ে ১৮৮টি বেলসাইন স্থাপন করেন, যেখানে বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়েছে। বিজ্ঞাপন জরিপ ও কর ধার্যকরণের দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী সুপার হিসেবে সরেজমিনে জরিপ করে ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৮৮টি বেলসাইন পরিমাপ করে প্রতিটি বেলসাইন ৪০২.৫ বর্গফুট হিসাবে ১৮৮টি বেলসাইনের আয়তন=১৮৮০ বর্গফুট নির্ধারণ করেন এবং গেজেট অনুযায়ী ২০১৬-১৭অর্থবছরে ২,৮২,০০০/-টাকা কর ধার্য করেন। অনুরূপভাবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২,৮২,০০০/-টাকা কর নির্ধারণ করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অর্থাৎ ২ বছরে ১৮৮টি বেলসাইনের প্রতিটি ৪ ফুট ৩ফুট হিসাবে এবং প্রতি বর্গফুট ১৫০ টাকা হারে বেল সাইনের প্রচার কর হওয়ার কথা ৬,৭৬,৮০০টাকা। কিন্তু আপনি ২ অর্থবছরে ৫,৬৪,০০০ টাকা কর নির্ধারণ করেন। অর্থাৎ আপনার কর্তৃক সরকারের (৬,৭৬,৮০০-৫,৬৪,০০০) টাকা=১,১২,৮০০ টাকা রাজস্ব ক্ষতি সাধিত হয়। আপনার এহেন কর্মকান্ডের জন্য আপনাকে ১২/০৩/২০২৪ খ্রিঃ তারিখে কারণ দর্শানো হয়। আপনি উক্ত কারণ দর্শানোর জবাব দাখিল করেন। কিন্তু কারণ দর্শানোর জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন-২ শাখার গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিঃ তারিখের ৪৬.০০.০০০০.০৭১. ২৭.০০৬.১২ (অংশ-১)-৫৬৮ নং স্মারকে আপনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন। যেহেতু, আপনার এহেন কর্মকান্ড খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কর্মকর্তা-কর্মচারী) চাকুরী বিধিমালা ১৯৯৩ এর ক, ও এবং চ ধারা মতে অর্থাৎ দায়িত্ব পালনে অবহেলা, দুর্নীতি পরায়ন এবং অর্থ আত্মসাথে দায়ে দোষী তথা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আপনার এহেন কর্মকান্ডে কেসিসি’র ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে এবং উক্ত চাকুরী বিধিমালায় বর্ণিত অপরাধে আপনার গুরুদন্ডে দ-িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেহেতু, আপনি হারুন অর রশিদ, পিতা-আফছার আলী বিশ্বাস, নি¤œমান সহকারী এবং সাবেক লাইসেন্স অফিসার (যানবাহন) এর বিরুদ্ধে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কর্মকর্তা-কর্মচারী) চাকুরী বিধিমালা ১৯৯৩ এর ক, ও এবং চ ধারা মতে অর্থাৎ দায়িত্ব পালনে অবহেলা, দুর্নীতি পরায়ন এবং অর্থ আত্মসাথে দায়ে অভিযোগ আনায়ন করা হলো এবং একই অভিযোগের কারণে একই বিধি মালার ৩৯(১) ধারানুযায়ী কেন আপনাকে চাকুরি হতে স্থায়ী ভাবে বরখাস্ত করা হবে না তা এ অভিযোগ নামা প্রাপ্তির পর লিখিত ভাবে জানানোর জন্য নির্দেশক্রমে বলা হলো। সাবেক সচির সানজিদা বেগম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ মামলা দায়ের করা হয়। তবে হারুণ অর রশিদ তার বিরুদ্ধে উপাস্থাপিত অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন। এদিকে সাবেক সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার ফারুখ তালুকদারের নামে গত ২২ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় তাকে স্থায়ী বহিস্কার করা হবে মর্মে জানতে চাওয়া হয়। পরে ব্যক্তিগত শুনানী হলেও তাতেও কর্তৃপক্ষ সন্তোষ্ট না হতে পারায় তার বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, “কেসিসির সাবেক সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার ফারুখ হোসেন তালুকদারকে গত ১২/১০/২০২৩ খ্রিঃ তারিখে অটোরিক্সার আটককৃত ৪৮টি মটর কম জমা করার অভিযোগসহ উক্ত মটরের মূল্য বাবদ একলক্ষ বিরানব্বই হাজার টাকা কেসিসি’র কোষাগারে জমা প্রদানের জন্য নির্দেশনা দিয়ে ১০টি কার্য দিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। কিন্তু আপনি উক্ত পত্রের কোন ব্যাখ্যা দেননি এবং টাকাও জমা প্রদান করেননি। যেহেতু, আপনার এহেন কর্মকান্ড খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কর্মকর্তা-কর্মচারী) চাকুরী বিধিমালা ১৯৯৩ এর ক, খ, ও এবং চ ধারা মতে অর্থাৎ দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, দুর্নীতি পরায়ন এবং অর্থ আত্মসাথে দায়ে দোষী তথা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আপনার এহেন কর্মকান্ডে কেসিসি’র ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। যেহেতু, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার মোঃ ফারুখ হোসেন তালুকদারকে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কর্মকর্তা-কর্মচারী) চাকুরী বিধিমালা ১৯৯৩ এর ক, খ, ঙ এবং চ ধারায় বর্ণিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, দুর্নীতি পরায়ন এবং অর্থ আত্মসাথের কারণে গুরুদন্ডে দন্ডিত হওয়ার সামিল। সেহেতু, আপনি ফারুখ হোসেন তালুকদার, পিতা-আব্দুস ছত্তার তালুকদার, নি¤œমান সহকারী (সাময়িক বরখাস্ত) সাবেক সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার, খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কর্মকর্তা-কর্মচারী) চাকুরী বিধিমালা ১৯৯৩ এর ক, খ, ও এবং চ ধারা মতে অর্থাৎ দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, দুর্নীতি পরায়ন এবং অর্থ আত্মসাথে দায়ে অভিযোগ আনায়ন করা হলো এবং একই অভিযোগের কারণে একই বিধি মালার ৩৯(১) ধারানুযায়ী কেন আপনাকে চাকুরি হতে স্থায়ী ভাবে বরখাস্ত করা হবে না তা লিখিত ভাবে জানানোর জন্য নির্দেশক্রমে বলা হলো। এছাড়া ফারুখ তালুকদার সাবেক মেয়র তালুকদার আঃ খালেকের ভাইপো হিসেবে পরিচিত। তার ব্যাপক প্রভাবে সকল অনিয়মকে তিনি নিয়মে পরিণত করেছেন । তার ভয়ে কেউ অন্যায় কার্যক্রমের প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। তিনি ট্রেড লাইসেন্সের আলোচিত ১১টি বই হারানোর মূল নায়ক বলে অনেকে দাবী করেন। তবে তিনি প্রভাব বিস্তার করে শেষ দিকে এসে দায়মুক্তি লাভ করেন। যা নিয়ে বই হারানো অভিযোগে অভিযুক্ত লাইসেন্স ইন্সপেক্টররা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সাথে এ বিষয়টি নতুন করে তদন্তের দাবি করেছেন তারা।


