ইটভাটার ধোঁয়ায় দমবন্ধ পরিবেশ: জরুরি ব্যবস্থা প্রয়োজন

পরিবেশ ধ্বংসের এক উদ্বেগজনক বাস্তবতা ধরা পড়েছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে, যেখানে ইটভাটা কার্যক্রম মারাত্মক প্রভাব ফেলছে জনজীবনে। পাইককান্দি, সুকতাইল, জালালাবাদ ও চন্দ্রদীঘলিয়া ইউনিয়নের গ্রামগুলো যেন একের পর এক ইটভাটায় ঘেরা-যেখানে ৩৯টি ইটভাটার মধ্যে ৩৫টিতেই অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এই বাস্তবতায় একদিকে যেমন বৃক্ষ উজাড় হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য চরম হুমকির মুখে পড়ছে। ইটভাটার চিমনি থেকে নির্গত ঘন কালো ধোঁয়া কেবল বাতাস নয়, মানুষের শরীরেও বিষ ঢালছে। স্থানীয়দের অনেকেই শ^াসকষ্ট, কাশি ও নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন। বিষাক্ত গ্যাস ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে কৃষকদের অভিযোগ। এমন বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠে, পরিবেশ সংরক্ষণের দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর নজরদারি কতটা কার্যকর? এখানে যে আরেকটি উদ্বেগজনক দিক চোখে পড়ে, তা হলো-অধিকাংশ ভাটায় অবৈধ করাতকল বসিয়ে কাঠ সংগ্রহ ও চেরাইয়ের কাজও চলছে সমান তালে। কাঠ পোড়ানোর খরচ তুলনামূলক কম হওয়ায় কয়লার পরিবর্তে কাঠের ব্যবহারকে ‘অর্থনৈতিক সুবিধা’ হিসেবে দেখছে ইটভাটা মালিকরা। কিন্তু এই স্বল্পমেয়াদি লাভ দীর্ঘমেয়াদে মানবিক ও পরিবেশগত বিপর্যয় ডেকে আনছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পরিবেশ অধিদপ্তরের কিছু পদক্ষেপ যেমন অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ, জরিমানা এবং কারাদ–নিশ্চয়ই প্রশংসনীয়। তবে এই পদক্ষেপগুলো হতে হবে ধারাবাহিক, সর্বাত্মক ও দীর্ঘস্থায়ী। কারণ, শুধু জরিমানা আদায় নয়, এ ধরনের ইটভাটার স্থায়ী রূপান্তর নিশ্চিত করাও জরুরি। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব ভাটা পরিচালনায় মালিকদের উৎসাহিত করা, স্থানীয় প্রশাসনের নিয়মিত পরিদর্শন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে এখনই। অর্থনৈতিক কর্মকা- ও কর্মসংস্থানের দোহাই দিয়ে পরিবেশ ধ্বংস করা কোনও টেকসই পথ নয়। বরং সুস্থ, বাসযোগ্য একটি ভবিষ্যৎ গড়তে হলে উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতেই হবে।