ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরছে মানুষ

প্রবাহ রিপোর্ট : গ্রামে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে কর্মমুখী মানুষ। ঢাকার বাইরে থেকে বাসগুলো যাত্রী নিয়ে ফেরায় টার্মিনালে ভিড় লক্ষ্য করা যায়। গতকাল বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন আন্তঃনগর বাস টার্মিনালে এমন চিত্র দেখা যায়। রাজধানীর গাবতলীর টেকনিক্যালে সিনেমা হলের সামনে ফাতেমা পরিবহন থেকে নামেন এক যাত্রী। আসছে একে একে আরও একাধিক বাস। নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোর নির্বিশেষে গিয়েছিল গ্রামে ঈদ করতে। ঈদ উদযাপনের তৃপ্তিতে উবে গেছে তাদের ভ্রমণের ক্লান্তি। মেহেরপুর থেকে আসা রাইসুল ইসলাম বলেন, গ্রামে ঈদ ভালোই হয়েছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে ঈদের দুদিন আগে গ্রামে গিয়েছিলাম। গ্রামে বাবা-মা, দাদা-দাদি ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে ঈদ করেছি। কোরবানি করেছি। পড়াশোনা ঢাকাতে, তাই ফিরে আসতে হলো। এদিকে বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা ছাড়ার যাত্রীও কমে গেছে। ৫ থেকে ১০ জন যাত্রী পেলেই বাসগুলো ছেড়ে যাচ্ছে যাত্রী আনার জন্য। উত্তরবঙ্গের বড় নেটওয়ার্ক ন্যাশনাল পরিবহনের। এ কোম্পানিটির ৪০টি কোচ টাকা থেকে আপ-ডাউনে চলাচল করে। কোচটির সেলসম্যান রাকিবুল ইসলাম বলেন, যাওয়ার সময় এখন কোনো গাড়িতে পাঁচজন, কোনোটিতে ১০ জন। আবার কোনো কোচে অর্ধেক যাত্রী যাচ্ছেন। আসার সময় কোচ বোঝাই হয়ে যাত্রী ঢাকায় ফিরছেন। এখন ঢাকার বাইরে বাসগুলো যাচ্ছে ঈদ শেষে যাত্রীদের ঢাকায় ফিরিয়ে আনতে। ন্যাশনাল গাড়ির সুপারভাইজার রাকিবুল ইসলাম জানান, এ যে ফাঁকা গাড়ি দেখছেন, আসার সময় পুরো কোচে যাত্রী থাকবে। তিনি জানান, আসার সময় চন্দ্রা আর মানিকগঞ্জ থেকে যাত্রী নামা শুরু হয়। যমুনা বহুমুখী সেতু হয়ে আসা কোচগুলো থেকে চন্দ্রা, জিরানী, ইপিজেড, নবীনগর ও সাভার পর্যন্ত আসতে অধিকাংশ যাত্রী নেমে যান। যারা থাকেন তারা রাজধানীর মিরপুরের টেকনিক্যাল নামেন। কুষ্টিয়া থেকে ঢাকামুখী এসবি পরিবহন আসার সময় কোচ লোড হয়ে আসছে। কিন্তু যাওয়ার সময় যাত্রী সংখ্যা কম, ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২০ জন যাত্রী যাচ্ছে বলে জানান কোচটির সেলসম্যান কাজী সোহেব। কাজী সোহেব জানান, গত পরশু সোমবার থেকে যাত্রী ফেরত আসা শুরু করেছে। প্রথম দিন তুলনামূলক কম যাত্রী এসেছে। গত মঙ্গলবার থেকে কোচ বোঝাই হয়ে যাত্রী আসছে। আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত সব সিট বুক হয়েছে। এ চাপ ২০ জুন পর্যন্ত থাকতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। পরিবহন কোম্পানির ১২ থেকে ১৪টি গাড়ি চলাচল করে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙা ও মেহেরপুর রুটে। অন্য রুটেও একই অবস্থা এসবির। পরিবহন কোম্পানিটির টেকনিক্যাল সিনেমা হলের সামনে নামা যাত্রী আমিরুল ইসলাম বলেন, ঈদ করতে ঈদের দুইদিন আগে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম, আজ ফিরছি। সময় মতো ঢাকায় ফেরা নিয়ে সন্দেহ ছিল, যাক আলহামদুলিল্লাহ আসার পথে তেমন জ্যাম ছিল না। ভালোই ভালোই চলে এসেছি। রাজশাহী, নওগাঁ, বগুড়া ও চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসা হানিফ পরিবহনের কোচগুলোও ভর্তি হয়ে আসছে। পরিবহনটির কাউন্টার মাস্টার আবদুল আওয়াল জানান, ঢাকা আসতে হানিফের ১৭ তারিখ পর্যন্ত সব টিকিট বুক হয়ে আছে। আজকালের মধ্যে আরও ৫ থেকে ৬ দিনের টিকিট বুক হবে। এভাবে পুরো জুনে ঈদ ফেরত মানুষের চাপ থাকবে। রাজশাহী থেকে ঢাকা এসেছেন এম এ করিম। তিনি একজন ব্যবসায়ী। করিম বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গত মঙ্গলবার থেকে কাজ শুরু হয়েছে। পরিবারসহ ঢাকায় ফিরছি। বিকেলে ব্যবসার কাজে অফিসে যাওয়ার চেষ্টা করবো। ফোনে খোঁজ নেবো, চাপ না থাকলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অফিস এদিকে সকাল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায় যাত্রীদের ভিড়। এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকার কারণে দুর্ভোগ এড়াতে আগেভাগে ট্রেনে করে ঢাকা ফিরছে নগরবাসী। গতকাল বুধবার কমলাপুর রেলস্টেশনে সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদ উদযাপন শেষে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছে নগরবাসী। চলাচলে আরামদায়ক হিসেবে ট্রেনকেই বেছে নিয়েছেন এসব যাত্রীরা। যাতায়াতের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে বেশিরভাগ মানুষ চলাচল করছে ট্রেনে। সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ফিরতি টেনে আসা যাত্রীদের এমনটাই অভিমত প্রকাশ করতে দেখা যায়। সকাল থেকে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর রেলস্টেশনে কর্মজীবী মানুষদের আসতে এবং যেতে দেখা গেছে। ঈদের আগে যানজট ও ভোগান্তির কারণে অনেকেই বাড়ি যেতে পারে নাই। এখন তারাই গ্রামের বাড়িতে ও বিভিন্ন পর্যটক এলাকা ঘুরতে যেতে দেখা গেছে। জামালপুর থেকে আশা এক যাত্রী হাফিজুর রহমান বলেন, ঈদের লম্বা ছুটি পেয়ে ট্রেনে করে বাড়িতে গিয়েছিলাম। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে এবং কোরবানি দিতে। যেহেতু ঢাকা ফিরতে হবে সেজন্য একটু আগেভাগেই চলে এসেছি। তিনি বলেন, যাতায়াতের কোনো ভোগান্তি হয়নি, খুব আরামদায়কভাবে জামালপুর গিয়েছিলাম আবার ট্রেনে করে ফিরে এসেছি। বেশিরভাগ ট্রেনে নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়ার কারণে এবারের ঈদে যাত্রীদের কোনো ভোগান্তি হয়নি। সিলেট থেকে আসা জাকির হোসেন বলেন, আমি ঢাকায় একটি ছোট চাকরি করি শুক্রবার ও শনিবার অনেক ভিড় থাকতে পারে সেজন্য একদিন আগেই চলে এসেছি। তবে এবারের ঈদে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ তৎপরতার কারণে সড়কে তেমন যানজটের সৃষ্টি হয়নি। খুব আরাম করেই বাড়ি গিয়েছিলাম এবং ভালোভাবে ঢাকায় ফিরে আসলাম। রাস্তায় কোনোরকম ভোগান্তি দেখি নাই আসার পথে কোথাও যানজটের ও সৃষ্টি হয় নাই। মুদি দোকানদার আউয়াল বলেন, ঈদে মানুষের ভিড় থাকায় কোথাও যাইনি। এখন সপরিবার নিয়ে কিশোরগঞ্জে এক আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছি। এ সময় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটু আরাম করে যাওয়া যাবে। মো. রাকিব, জাহেদুল আলম, রফিক সাইয়াম সাকিব আল ফয়সাল সিদ্দিক বলেন, আমরা ছয় বন্ধু কক্সবাজারের ট্রেনের টিকিট না পেয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছি এখান থেকে টিকিট করে সিলেট যাচ্ছি। সিলেটের সুন্দর জায়গাগুলো দেখার জন্য ছয় বন্ধু রওয়ানা হয়েছি। সিলেটের সুন্দর এলাকাগুলো ঘুরে দেখাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে তিতাস কম্পিউটার ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছেড়ে গেছে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। জামালপুর এক্সপ্রেস সকাল ১০টায় ঢাকা ছেড়েছে জামালপুরের উদ্দেশে। একতা এক্সপ্রেস পঞ্চগড়ের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে। কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস (শহরতলী) বেনাপোলের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে ১০টা ৪৫ মিনিটে। জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে সকাল ১১টা ১৫ মিনিট। নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস (শহরতলী প্ল্যাটফর্ম থেকে) খুলনার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে সকাল ১১টা ২০ মিনিটে।