দৌলতপুর পাবলা আইয়ূব আলী সড়কটি দীর্ঘদিন বেহাল

# এলাকাবাসীর অভিযোগ : সড়কটি ৬/৭ বছর যাবৎ খানাখন্দে অনাদরে পড়ে আছে #
# প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে যানবাহন, বর্ষায় চলাচলে চরম দূর্ভোগ বেড়েছে #
# কেসিসি বলছে : ৩ ধাপে সড়কটি কাজ করা হবে, টেন্ডার শেষে এক ধাপের কাজ অচিরেই শুরু হবে #
মোঃ আশিকুর রহমান ঃ খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)’র একটি গুরুত্বপূর্ন ওয়ার্ড হচ্ছে ৫নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের একটি গুরুত্বপূর্ন সড়ক হলো পাবলা আইয়ূব আলী সড়ক। সড়কটি ধরে প্রতিদিনই ওই অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ দৌলতপুরসহ খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন গন্তব্যস্থলে ছুটে চলেন। একই সাথে সড়কটি ধরে প্রতিদিনই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা, তিন দোকানের মোড়স্থ আরবান স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গর্ভবতী মা ও নবাজাতক শিশুর টিকা গ্রহনের জন্য দারস্থ হন। ব্যবসায়ী, পথচারীসহ সর্বস্তরের মানুষ এই সড়কটি ব্যবহার করার কারণে ওই অঞ্চলে সড়কটি চলাচলে অত্যন্ত গুরুত্ববহন করে আসছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, গুরুত্বপূর্ন এই সড়কটি দীর্ঘ অবহেলা আর অনাদরে পড়ে থাকলেও যেন দেখার কেউ নেই বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার একাধীক বাসিন্দাসহ পথচারীরা। এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে, কেসিসির বিভিন্ন ওয়ার্ড সমূহে নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ বা সংস্কার করা হলেও গুরুত্বপূর্ন এই সড়কটি ৪,৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ন প্রধান সংযোগ সড়ক হওয়া সত্বেও দীর্ঘ ৬/৭ বছর ধরে একই অবস্থায় অনাদরে অবহেলায় পড়ে আছে, কোনো সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন করেনি সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া প্রতি বর্ষায় এসব খানাখন্দে হাঁটুজল জমে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। বেহাল সড়কটি ধরে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, গর্ভবতী ও নবাজাতকের মায়েরা, পথচারীসহ সর্বস্তরের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এই দূর্ভোগ আরো গলারকাটায় পরিনত হচ্ছে চলতি বর্ষাকালকে ঘিরে। এমতাবস্থায় এলাকাবাসী দ্রুততম সময়ের মধ্যে সড়কটি পুর্ননির্মাণ বা সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বিপরীতে কেসিসির সংশ্লিস্টরা বলছেন, সড়কটির পুর্ননির্মানের জন্য করোনা প্রকল্প হতে ৩ ধাপে কাজের প্রস্তাব করা হয় এবং প্রস্তাবনা দাখিল করলে একটি ধাপের কাজের অনুমোদন হয়। যার প্রথম ধাপ – যশোর রোড হতে মোল্লার মোড় পর্যন্ত, দ্বিতীয় ধাপ- মোল্লার মোড় হতে তিন দোকান মোড় হয়ে সোজা এবং তৃতীয় ধাপ- তিন দোকান মোড় হয়ে চুন্নুর বটতলা পর্যন্ত। ইতোমধ্যে একটি ধাপের (মোল্লার মোড় হতে তিন দোকানের মোড় হয়ে সোজা) পর্যন্ত কাজের টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে, যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে আনুমানিক ১ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা। অচিরেই কাজ শুরু হবে। এছাড়া পরবর্তীতে অন্য কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে অনুমোদন হলে বাকী দুটি ধাপের কাজ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
৫নং ওয়ার্ডের তিন দোকান মোড় এলাকার বাসিন্দা মো. ইবাদত হোসেন জানান, এই সড়কটি আমাদের এলাকার বাসিন্দাদের চলাচলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটা সড়ক। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি উঁচু-নিচু গর্ত ও খানাখন্দে বেহাল দশায় পড়ে আছে। দুঃখের বিষয় দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কটি বেহাল দশায় পড়ে থাকলেও সংশ্লিষ্টদের মেরামত করার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। ইতোমধ্যে বর্ষাকাল শুরু হয়েছে, একটু ভারী বর্ষা হলে সড়কে হাঁটুজল জমে। সড়কটি যদি এখনি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন না করা হয়, তবে সামনে আরো দুর্ভোগ বাড়বে।
পথচারী আব্দুস সালাম জানান, এই রাস্তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নাই, আমাদের কপালে দূর্ভোগ লেখা আছে, তাই দূর্ভোগ পোহাচ্ছি। কেসিসির বিভিন্ন ওয়ার্ডে নতুন নতুন রাস্তা নির্মাণ বা সংস্কার করেছে, কিন্তু আমাদের এই সড়কটি দীর্ঘ ৬/৭ বছর ধরে একই অবস্থায় পড়ে থাকলেও কোনো সংস্কারের জন্য উদ্যোগ গ্রহন করেনি সংশ্লিষ্টরা। এ দূর্ভোগের শেষ কোথায়? সড়কটি পুর্ননির্মাণ বা সংস্কারে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। পাবলা আইয়ূব আলী সড়ক সংলগ্ন মুদি দোকান ব্যবসায়ী নির্মল দত্ত জানান, ৬/৭ বছর ধরে রাস্তাটি বেহাল দশায় পড়ে আছে, সংস্কারের উদ্যোগ নেই। বাজার থেকে দোকানের মালামাল আনার জন্য চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে বর্ষার সময়ে খানাখন্দে হাটুজল জমে, ঘটে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
স্বাস্থ্যকর্মী অনুপ কুমার কু-ু জানান, এই সড়কটি আমাদের অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষের চলাচলের গুরুত্বপূর্ন একটি সড়ক। ইতোমধ্যে বর্ষাকাল শুরু হয়েছে, বর্তমানে সড়কটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। চলাচলের সম্পূর্ন অযোগ্য ও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা দীর্ঘ বছর ধরে, সংস্কারে কর্র্তৃপক্ষের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। এলাকাবাসীর স্বাভাবিক চলাচলের জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার বা পুননির্মান প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। ইজিবাইক চালক জনি জানান, এ সড়কে যাত্রী টেনে আমার সংসার চলে। সড়কটি এতো ভাঙা, গাড়ী চলাতে খুব কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে গর্তের ভেতর চাকা পড়ে ইজিবাইক উল্টে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়। বর্ষাকাল শুরু হয়েছে, রাস্তার এমন অবস্থা থাকলে সামনে আরো দুর্ভোগ বাড়বে।
৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এস এম হুমায়ূন কবির জানান, কেসিসির ৩১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫নং ওয়ার্ড একটি গুরুত্বপূর্ন ওয়ার্ড এবং আইয়ূব আলী সড়কটি এই অঞ্চলের মানুষের চলাচলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ন সড়ক। এই সড়কটি ৪,৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ন প্রধান সংযোগ সড়ক হওয়া সত্বেও দীর্ঘদিন ধরে একই অবস্থায় অনাদর ও অবহেলায় পড়ে আছে। বেহাল সড়কে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা ঘটছে। চলাচলে সর্বস্তরের মানুষ চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। অচিরেই দূর্ভোগ হতে মুক্তি দিতে কেসিসি কর্তৃপক্ষের অতি দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানা বিএনপির সভাপতি এম মুর্শিদ কামাল জানান, পাবলা আইয়ূব আলী সড়ক সংলগ্ন এলাকাটি একটি ঘনবসতিপূর্ন এলাকা। এই সড়কটি ধরে ৪,৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শহরে ছুটে চলেন। সড়টি দীর্ঘদিন যাবৎ অনাদর ও অবহেলায় পড়ে থাকলেও সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন করেননি সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া একটু ভারী বর্ষা হলেই সড়কসহ আশপাশের বাড়ী ঘরে পানি ওঠে যায়। এতো দূর্ভোগ সিটি কর্পোরেশনের অন্য কোনো ওয়ার্ডে আছে বলে আমার মনে হয় না। সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দে পরিনত হওয়ার দরুন এলাকাবাসীর স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজার সময়ে আগত মানুষের স্বাভাবিক চলাচলও চরমভাবে বিঘিœত হয়ে থাকে এই বেহাল সড়কের দরুন। দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি পুর্ননির্মান বা সংস্কার করা হোক, পাশাপাশি রাস্তার সংস্কারের সাথে সাথে পানি নিষ্কাসনের ব্যবস্থা যেন গ্রহন করা হয় বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে কেসিসির উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান জানান, সড়কটির পুর্ননির্মানের জন্য করোনা প্রকল্প হতে ৩ ধাপে কাজের প্রস্তাব করা হয় এবং প্রস্তাবনা দাখিল করলে একটি ধাপের কাজের অনুমোদন হয়। ইতোমধ্যে একটি ধাপের কাজ (মোল্লার মোড় হতে তিন দোকানের মোড় হয়ে সোজা) পর্যন্ত কাজের টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে, যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে আনুমানিক ১ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা। অচিরেই কাজ শুরু হবে। এছাড়া পরবর্তীতে অন্য কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে অনুমোদন হলে বাকী দুটি ধাপের কাজ করা হবে।
এ বিষয়ে ৫নং ওয়ার্ডের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গাজী সালাউদ্দিন জানান, সড়কটির সার্বিক কাজের বিষয়ে আমাকে অবগত করে কাজ শুরু করলে আমি ৩ ধাপের প্রথম অংশ অর্থ্যাৎ যশোর রোড হতে মোল্লার মোড় পর্যন্ত টেন্ডারের জন্য অনুরোধ জানাতাম। তারপরও বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলবো। এ বিষয়ে কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান জানান, সড়কটির একটি অংশের কাজের টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে, অচিরেই কাজ শুরু হবে। পরবর্তীতে অন্য কোনো প্রকল্পের আওতায় বাকি দুটি ধাপের কাজ করা হবে। এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও কেসিসি প্রশাসক মোঃ ফিরোজ সরকার জানান, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।