খুলনা বিভাগে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাস : ২৪ ঘন্টায় ৩ জেলায় সনাক্ত ৩

# খুমেক হাসপাতালে কিট শেষ হওয়ায় পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত, ৭২ ঘন্টায় সনাক্ত ৩
# উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিট না থাকায় শুরু করতে পারেনি পরীক্ষা
# খুলনায় ৪ দিনে তিন নারীসহ সনাক্ত ৪ জন
কামরুল হোসেন মনি ঃ খুলনা বিভাগে দিনকে দিন করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। গত ২৪ ঘন্টায় খুলনাসহ বিভাগের ৩ জেলায় নতুন করে করোনা ভাইরাসে সনাক্ত হয়েছে ৩ জন। এর মধ্যে খুলনা, সাতক্ষীরা ও মেহেরপুরে একজন করে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। দিন যতই যাচেছ করোনা নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ততই বাড়ছে। গত ৪ দিনে খুলনায় করোনা সনাক্ত হয়েছে ৪ জন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের কিট শেষ হওয়াতে দুপুর থেকেই করোনা পরীক্ষা সাময়িক বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে কিট না থাকায় খুলনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে এখনও পর্যন্ত করোনা পরীক্ষা চালু করতে পারেনি। যার ফলে করোনা ভাইরাস সিমটম নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আসলেও কিট না থাকায় পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মানুষের মধ্যে আরও আতঙ্ক বাড়ছে। শুধু মাত্র খুলনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বৃহস্পবিার (১৯ জুন) দুপুর পর্যন্ত মাত্র ১৭৭টি কিট মওজুদ আছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা: মো: মুজিবর রহামন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা বিভাগের মধ্যে তিন জেলায় নতুন করে ৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় ২১ জনের নমুনা পরীক্ষার মধ্যে সনাক্ত হয়ে একজন। এছাড়া মেহেরপুরে ৩ জনের নমুনা পরীক্ষার মধ্যে একজন এবং সাতক্ষীরায় একজন নমুনা পরীক্ষায় একজনই সনাক্ত হয়। অর্থাৎ এ জেলায় সনাক্তের হার শতকরা ১০০ ভাগ। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে নতুন করে হারুন (৩২) নামে আরও এক ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। সে খুলনা মহানগরী বয়রা এলাকার বাসিন্দা। এ নিয়ে গত ৪ দিনে খুলনায় ৪ জন রোগীর শরীরে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়। এর মধ্যে খুমেক হাসপাতালে সনাক্ত হয় ৩ জনের। এদিকে বৃহস্পতিবার খুমেক হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার অ্যান্টিজের র্যাপিড টেস্টের কিট শেষ হয়ে গেছে। যার কারণে দুপুরের পর থেকে এ হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এর আগে গত ১২ জুন থেকে মাত্র ৭০টি কিট নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের জন্য করোনা পরীক্ষা শুরু করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরএমও ও করোনা ইউনিটের ফোকাল পার্সন ডা: খান আহমেদ ইশতিয়াক বলেন, বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ১৫ জনের রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে হারুন নামে এক ব্যক্তির করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। এ নিয়ে এ হাসপাতাল থেকে গত তিন দিনে ৩ জন করোনা সনাক্ত হয়। তাদের প্রত্যোকের বাড়ি খুলনা বয়রা এলাকায়।
তিনি বলেন, বুধবার (১৮ জুন) করুনা (৬০) নামে যে নারী করোনা সনাক্ত হওয়ার কাউকে না বলে চলে যায়। ওই দিনই সন্ধ্যায় তার শারীরিক অবস্থা অবনিত হওয়ায় সে নিজে এসে হাসপাতালে করোনা রেড জোনে ভর্তি হন। বর্তমানে হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে করোনা পরীক্ষা কিট শেষ হওয়ায় আপাতত পরীক্ষা সাময়িক বন্ধ আছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সহকারি পরিচালক ডা: মো: মিজানুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ১৫ জন রোগীর করোনা পরীক্ষার পর কিট শেষ হয়ে যায়। আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কিটের চাহিদাপত্র প্রেরণ করেছি। আশাকরি আগামী সপ্তাহে কিট চলে আসবে।
খুলনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডা: রফিকুল ইসলাম বলেন, তার হাসপাতালে গত ২৪ ঘন্টায় করোনা পরীক্ষায় কেউ সনাক্ত হয়নি। বর্তমানে তার হাসপাতালে ১৭৭টি কিট মওজুদ রয়েছে। তিনি বলেন, তার হাসপাতালে গত ১৬ জুন নুসরাত জাহান সুমাইয়া (১৮) নামে এক নারী করোনা সনাক্ত হয়েছিলো। তাকে ওই দিন খুমেক হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
খুলনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: সৈকত মো: রেজওয়ানুল হক বৃহস্পবিার দুপুরে এ প্রতিবেদকে বলেন, খুলনার ৯ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে করোনা পরীক্ষার জন্য কিটের চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কিট এসে পৌছায়য়নি। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে করোনা পরীক্ষা শুরু করা সম্ভভ হয়নি। তবে খুলনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও খুমেক হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট চালু রয়েছে। এর মধ্যে খুমেক হাসপাতালে দুপুরের মধ্যে কিট শেষ হওয়ার কারণে আপাতত ওই হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী কিটগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে চলে আসবে।
উল্লেখ্য, খুমেক হাসপাতালে গত ১২ জুন থেকে ৭০কিট নিয়ে করোনা পরীক্ষা শুরু করেন। এর মধ্যে গত ১৮ জুন
থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত মোট ৩ জন রোগীর করোনা সনাক্ত হয়। এর মধ্যে দুইজন নারী ও একজন পুরুষ রয়েছে। এছাড়া গত ১৬ জুন খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নুসরাত জাহান সুমাইয়া নামে এক নারী করোনা ভাইরাসে সনাক্ত হয়েছিল।