খুলনা বিভাগে ফের বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ : সর্তক থাকার পরামর্শ

# একদিনে খুমেক হাসপাতালসহ বিভাগের দুই জেলায় ভর্তি ৮
# এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু ছাড়াল ২১৬, খুমেক হাসপাতালে মৃত্যু ২
# কিট সংগ্রহ করে খুমেক হাসপাতালে পুনরায় করোনা পরীক্ষা শুরু
কামরুল হোসেন মনি ঃ খুলনা বিভাগের দিনদিন বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হচ্ছে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলাগুলোতে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী (শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) গত একদিনে খুলনা বিভাগের দুই জেলায় ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মিলে নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৮ জন। চলতি বছরে শুরু থেকে এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ২১৬ জন এবং খুমেক হ্সাপাতালে মৃত্যৃ হয় দুইজনের। বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১৪ জন। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা বিভাগে করোনা ভাইরাস র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে কেউ সনাক্ত হয়নি। খুমেক হাসপাতালে বৃহস্পতিবার দুপুরে করোনা পরীক্ষার কিট শেষ হওয়াতে পরীক্ষা বন্ধ ছিলো। একদিন পর শনিবার কিট সংগ্রহ করে পুনরায় পরীক্ষা চালু করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
খুমেক হাসপাতালের আরএমও করোনা ও ডেঙ্গু ইউনিটের ফোকাল পার্সন ডা: খান আহমেদ ইশতিয়াক বলেন, বর্তমানে করোনা ভাইরাসটির তীব্রতা ও মৃত্যু ঝুঁকি কম থাকায় নমুনা পরীক্ষায় অনেকের আগ্রহ নেই। নমুনা পরীক্ষা বাড়াতে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে চিকিৎসকদের। বর্তমানে করোনা, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও ডেঙ্গু এই ৩ কারণে জ¦রসহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। একেকটা রোগের ধরন একেক রকম। করোনার কারণে আক্রান্ত হয় ফুসফুস। ডেঙ্গু আক্রান্ত করে রক্ত। এক্ষেত্রে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে গেলে করোনা পরীক্ষার পাশাপাশি অন্যগুলোর পরীক্ষা করার পরামর্শ দেয়াও জরুরি। স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি এডিসের উৎসস্থল ধ্বংস করতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান চালানোও জরুরি। তিনি বলেন, শনিবার ( ২১ জুন) দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে ৬ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলো। এর আগের দিন শুক্রবার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলো ৪ জন। তিনি বলেন, চলতি বছরের গত ফেব্রুয়ারি মাসে আসমা সুলতানা ও মাহমুদ নামে দুই জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত ব্যক্তিরা খুলনা সোনাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা ছিলো। দিনকে দিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সময় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। অর্থাৎ ২/৩ দিন বৃষ্টি, তারপর ২/৩ দিন রোদ- এমন অবস্থা দেখা যাচ্ছে। এই পরিবেশ এডিস মশার বংশ বিস্তার এবং ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার অনুকূলে।
আরএমও ডা: খান আহমেদ ইশতিয়াক আরও বলেন, এখন অনেকেই জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। সেই সঙ্গে গলা ও মাথাব্যাথা, খাবারের অরুচির বিষয়টিও দেখা যাচ্ছে। এর কারণ ঋতু পরিবর্তন বা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। এর কিছু উপসর্গ ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও দেখা যায়। পরীক্ষা না করানো পর্যন্ত কোনটি সাধারণ জ্বর, কোনটি ডেঙ্গুর জ্বর আর কোনটি করোনা ভাইরাসের জ্বর তা নির্ণয় করা যায় না। কেউ করোনোর পর ডেঙ্গু বা ডেঙ্গুর পর করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হলে তার মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে নমুনা পরীক্ষা ক্ষেত্রে মানুষের অনীহা রয়েছে। উল্লেখিত উপসর্গ দেখা দেয়ার পরও ফার্মেসী থেকে নাপা, প্যারাসিটামাল খেয়ে ৪-৫ দিন পর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। এই জন্য সবাইকে সর্তক থাকতে হবে।
আরএমও ডা: খান আহমেদ ইশতিয়াক বলেন, গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে করোনা পরীক্ষার কিট শেষ হয়ে যাওয়া র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট সাময়িক বন্ধ ছিলো। ১০০ কিট সংগ্রহ করে শনিবার ( ২১ জুন) পুনরায় করোনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এই দিন দুপুর পর্যন্ত ১০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় সবাই করোনা ভাইরাস নেগেটিভ আসে। করোনা পরীক্ষার মধ্যে মহিলা ৬ জন এবং পুরুষ ছিলো ৪ জন।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, খুলনা বিভাগের গত একদিনে নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৮ জন। এর মধ্যে খুমেক হাসপাতালে ভর্তি হয় ৪ জন, খুলনাতে ৩ জন এবং যশোরে ১ জন রয়েছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলো ২১৬ এবং মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। এর মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ২৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে মারা যায় ২ জন। বর্তমানে খুলনা বিভাগে সরকারি হাসপতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ১৪ জন। এছাড়া একজনকে রেফার্ড করা হয়েছে।