স্থানীয় সংবাদ

৬টি আসনে জামায়াতের প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও বিএনপিসহ অন্যরা হাই কমান্ডের অপেক্ষায়

# খুলনায় সংসদ নির্বাচন #
# প্রতিটি আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী #

খলিলুর রহমান সুমন ঃ অর্ন্তবর্তীকালিন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনে বৈঠকের পর সারা দেশে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনাকে সামনে রেখে সারা দেশে সম্ভব্য প্রার্থীরা মাঠে ময়দানে কম বেশী প্রচারণা শুরু করেছে। সে মতে খুলনার বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা বসে নেই। তারাও শুরু করেছেন নানা বিষয় সামনে রেখে নির্বাচনী প্রচারণা। খুলনার ছয়টি আসনের মধ্যে ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থীদের চূড়ান্ত নামের তালিকা ঘোষণা করেছেন। বিএনপির প্রার্থীরা নানা ভাবে গণসংযোগ করছেন। এনসিপি এখনও মাঠে নামেননি। তবে তারা সাংগঠনিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে নির্বাচনী কাজ করছেন। খুলনা-১নং আসন (বটিয়াঘাট ও দাকোপ উপজেলা)। এ আসনে প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে বিএনপির আমির এজাজ খান, বকুল সাহেবের বন্ধু হিসেবে পরিচিত পাপন, জামায়াতের প্রার্থী হচ্ছেন বটিয়াঘাটা উপজেলা জামায়াতের আমির শেখ আবু ইউসুফ। খুলনা-২নং আসনের (সদর-সোনাডাঙ্গা থানা) বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ডাঃ জোবায়দা রহমান ও নজরুল ইসলাম মঞ্জু, আলী আজগর লবী, শফিকুল ইসলাম তুহিনের নাম শোনা যাচ্ছে। জামায়াতের প্রার্থী কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, সিপিসি কেন্দ্রীয় সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ও ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমীর হাফেজ মাওঃ অধ্যক্ষ আঃ আউয়াল। খুলনা-৩নং আসনে (খালিশপুর, দৌলতপুর, খানজাহান আলী থানার আংশিক ও আড়ংঘাটা থানার আংশিক) বিএনপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব রকিবুল ইসলাম বকুল, বিএনপির সাবেক নেতা অধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম, জামায়াতের প্রার্থী কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগর আমির মাহফুজুর রহমান, এনসিপির প্রার্থী আরিফুর রহমান মিঠু। খুলনা-৪নং আসনে (দিঘলিয়া, রূপসা ও তেরখাদা উপজেলা) বিএনপির প্রর্থী কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারি হেলাল, জামায়াতের প্রর্থী খুলনা জেলা নায়েবে আমির মাওলানা কবিরুল ইসলাম। খুলনা-৫ আসনে (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া মুহাম্মদ গোলাম পরওয়ার ও বিএনপির প্রার্থী আলহাজ্ব আলী আজগর লবী। এ আসনে গত ২০০১ সালে নির্বাচনে গোলাম পরওয়ার জয়ী হন। খুলনা-৬নং আসনে (পাইকগাছা-কয়রা উপজেলা) বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপি আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু ও জামায়াতের প্রার্থী কেন্দ্রীয় মজলিসে কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। খুলনা ২,৩ ও ৪নং আসনে বিএনপির শক্ত অবস্থান। খুলনা ৫ ও ৬ আসনে জামায়াতের শক্ত অবস্থান। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ওই তিনটি আসন বিএনপি ও বাকী ২টি আসন জামায়াতের প্রার্থী জয়ী হয়। তবে খুলনা-১নং আসন নিয়ে রয়েছে ভিন্ন কথা। এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট বেশী। এ জন্য প্রার্থী দেয়ার ক্ষেত্রে দল সতর্ক অবলম্বন করবে। গত ৯ ফেব্রুয়ারী জামায়াতে ইসলামী এক বৈঠকে ৬টি আসনে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, “আমি বিগত দিনে বিএনপির প্রার্থী ছিলাম। আমি জনপ্রিয় দলের জনপ্রিয় প্রার্থী ছিলাম। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দল নিশ্চয় পরিকল্পনা আছে। সে ক্ষেত্রে যে পপুলার তাকেই দল মনোনয়ন দিবে। সে ক্ষেত্রে আমি ও মনি (মনিরুজ্জামান মনি) ভাই শহরে মেয়র ও এমপি ইলেকশন করেছি। জয়ী হয়েছি। আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ন হবে বলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন। এ নির্বাচনে সহজে বিজয়ী হওয়া যাবে না। যে ষড়যন্ত্র বিএনপির বিরুদ্ধে চলছে। এ ষড়যন্ত্র মোকাবেল করতে হলে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি দরকার। সেই চিন্তা মাথায় নিয়েই দল এগুচ্ছে। আমরা দলের সাথে আছি। আমি যেহেতু রাজনীতিতে সংগঠনে আন্দোলনে নেতৃত্বে ছিলাম। শহরে জনপ্রিয় দলের জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের জন্য আমাদেরও প্রস্তুতি আছে। আগামীতে যেকোন পদে দলের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক। জেলা বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, “আমি খুলনা ৬ নং আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইব। হাই কমান্ড যা মনে করে তাই মেনে চলবো। আমাকে না দিয়ে যদি হাই কমান্ড অন্য কাউকে পছন্দ করে তাহলে দলের স্বার্থে তার সাথেই কাজ করবো।” সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগর লবির ঘনিষ্টজন আলী আক্কাস বলেন, লবি সাহেব এখন বিদেশে। তবে তিনি খুলনা ৫নং আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন। সে জন্য তিনি পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ওই এলাকায় নির্বাচনী কাজ শুরু করেছেন। বিএনপির সাবেক নেতা অধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম বলেন, “আমি ২০০৮ ও ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাই। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও খুলনা ৩নং আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবো। দীর্ঘ ৪৪ বছর এ এলাকায় রাজনীতি করছি। এলাকার মাটি ও মানুষের সাথে মিলেমিশে কাজ করছি। হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে স্বোচ্ছার ছিলাম। আমার এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আমিই এ আসনের মৌলিক প্রার্থীর দাবিদার।” বিএনপি নেতা আঃ রশিদ বলেন, খুলনা ৪নং আসনে আজিজুল বারি হেলালই প্রার্থী। অন্যদের নাম শুনেছি। তবে তারা ফিজিক্যাল উপস্থিতি নেই। এক্ষেত্রে আজিজুল বারি হেলাল অনেক এগিয়ে। ইসলামী আন্দোলন খুলনা মহানগর কমিটির নেতা নাসির উদ্দীন বলেন, তারা আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে তারা ১,২, ৩ ও ৪নং আসনে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করেছেন। প্রার্থীরা হলেন, ১ আসনে জেলা শাখার সহ-সভাপতি মাওঃ আবু সাঈদ, ২ আসনে নায়েবে আমীর হাফেজ মাওঃ অধ্যক্ষ আঃ আউয়াল, ৩নং আসনে মহানগর সেক্রেটারি আলহাজ্ব মুফতি ইমরান হোসাইন ও ৪নং আসনে মহাসচিব হাফেজ মাওঃ অধ্যক্ষ ইউসুফ আহমেদ। খুলনা মহানগর সিপিবির নেতা মিজানুর রহমান বাবু বলেন, সরকার যদি নির্বাচনী পরিবেশ অনুকুলে আনতে পারে তাহলে তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ জন্য তারা পূর্ব প্রস্তুতিও রেখেছেন। এরমধ্যে খুলনা ১নং আসনে সম্ভব্য প্রার্থী হলেন, অশোক কুমার ও কিশোর রায়, খুলনা ২নং আসনে সিপিবির কেন্দ্রীয় সাঃ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, খুলনা ৬নং আসন থেকে কমঃ আঃ হান্নান ও এড. প্রশান্ত রায়। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স খুলনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় সভায় তার প্রার্থী হওয়ার কথা প্রকাশ করেছেন। তবে বিগত দিনে বিএনপি ও জামায়াতের বিজয়ের ইতিহাস থাকলেও বাকী দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইতিহাস থাকলেও বিজয়ের ইতিহাস নেই। দলীয় একটি সূত্র জানায়, খুলনার ৬টি আসনে প্রতিটি আসেন বিএনপির একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তার মধ্যে খুলনা ১নং আসনে বিএনপি নেতা আমির এজাজ খান ও জিয়াউর রহমান পাপন, খুলনা ২নং আসনে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বর্তমান সভাপতি এড, শফিকুল আলম মনা ও সাঃ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম তুহিন। নজরুল ইসলাম মঞ্জু এ আসনে ২০০৮ সালে নির্বাচন করে জয়ী হন। খুলনার ৩নং আসনে কেন্দ্রীয় বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল ও মহানগর বিএনপির সাবেক নেতা অধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম, খুলনা ৪নং আসনে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আজিজুল বারি হেলাল, লন্ডনের বিএনপি নেতা পারভেজ মল্লিক ও বিএনপি নেতা শরীফ শাহ কামাল তাজ। খুলনা ৫নং আসনে সাবেক এমপি আলী আজগর লবী ও জেলা যুবদল নেতা ইবাদুল হক রুবায়েত। খুলনা ৬নং আসনে জেলা বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, বাসস-এর চেয়ারম্যান আনোয়ার আল দীন, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পরিচালক আমিরুল ইসলাম কাগজী ও এড. মোমরেজুল ইসলাম, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা রফিকুল ইসলাম রফিক। খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি এড. শফিকুল আলম মান বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে খুলনায় বিএনপির প্রস্তুতি ভাল। যারা যে আসনে মনোনয়ন চাইবেন তারা সে আসনে কম বেশী কাজ করে চলেছেন। তবে দল যাকে মনোনয়ন দিবে অন্যরা তার সাথে কাজ করবে। তিনি খুলনা ২নং আসনে মনোনয়ন চাইবেন। তারপর দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার সাথেই কাজ করবেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, খুলনা ১নং আসনে দু’জন রয়েছেন। তাছাড়া ৬নং আসন নিয়ে এখনও কোন কথা হয়নি। বাকী আসনগুলোতে প্রার্থী মোটামুটি চূড়ান্ত। তারপরও দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি বলে তিনি জানান। এনসিবির মহানগর সংগঠক সাইফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন নিয়ে তারা এখন ভাবছে না। তারা আগে সংস্কার ও খুনি হাসিনা-গণহত্যার বিচার নিয়ে কাজ করছেন। তাই তাদের প্রস্তুতি তেমন নেই। তারপরও ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)র কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ফরিদুল হক খুলনা ২নং আসনে আর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সদস্য সচিব সাজিদুল হক বাপ্পী খুলনা ৬নং আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সাবেক বিএনপি নেতা এসএম আরিফুর রহমান মিঠু তাদের দলের কাজ করছেন। তিনি খুলনা ৩নং আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে তিনি জানান। বিএনপির মহানগর কমিটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ এসএম আরিফুর রহমান মিঠু বলেন, তিনি এনসিবির সাংগঠনিক কাজ করছেন। তিনি খুলনা ৩নং আসনে পার্টির কাছে মনোনয়ন চাইবেন। সেভাবে তিনি নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছেন বলে জানান। দৌলতপুরের বাসিন্দা মোঃ মারুফ হোসেন বলেন, এলাকায় জামায়াতের প্রার্থী চূড়ান্ত দেখছি। আর কোন দলের চূড়ান্ত প্রার্থী দেখা মিলছে না। এতে করে জামায়াত নির্বাচনী প্রচারণায় অন্য দল থেকে এগিয়ে আছে বলে তিনি জানান। তবে খুলনা ২নং আসন ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত। এখানে বিএনপির মনোনয়ন চাইতে পারেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অথচা ডাঃ জোবায়দা রাহমান। তারা কেউ প্রার্থী হলে আশ্চর্যের কিছু থাকবে না বলে নেতৃবৃন্দ জানান। কারণ বিগত ২০০১ সালে এখানে দলে প্রার্থী হয়েছিলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া স্বয়ং নিজে। তিনি জয়ী হন। পরে তিনি এ আসন ছেড়ে দিলে উপ নির্বাচনে আলী আজগর লবী জয়ী হন। এবারও একই প্রক্রিয়ায় কার্যক্রম এগুচ্ছে বলে দলের কেউ কেউ মনে করেন। তবে বিগত দিনে দিনের ভোট রাতে দেয়া নেতারা না থাকায় কাদের সাথে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তা নিয়ে চলছে চুল ছেড়া বিশ্লেষণ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button