দিনভর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ক্ষোভ-প্রতিবাদ
ফ্যাসিবাদের দোসর এসআই সুকান্তকে ছেড়ে দিল পুলিশ

কেএমপি ভবন ঘেরাও, প্রধান ফটকে তালা
সুকান্তকে গ্রেফতার এবং পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবি
স্টাফ রিপোর্টার : জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলন চলাকালীন ছাত্র-জনতার উপর হামলা এবং বিগত দিনে আওয়ামী বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় একাধিক মামলার আসামি ফ্যাসিবাদের দোসর এসআই সুকান্ত দাসকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে ছাত্র-জনতা। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর (কেএমপি) ঘেরাও করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা কেএমপির প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। এছাড়া মূল ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ কওে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করে তারা। ফলে রূপসা থেকে শহরে প্রবেশ পথ বন্ধ ছিল কয়েক ঘন্টা। বুধবার (২৫ জুন) দুপুরে এই কর্মসূচি শুরু হয়। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সড়কে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।
এদিকে, পুলিশের পক্ষ থেকে কোন সাড়া না পাওয়ায় কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। একই সঙ্গে এসআই সুকান্তকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে খানজাহান আলী থানা এলাকা থেকে স্থানীয়রা মারধর করে উপ-পরিদর্শক সুকান্তকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তিনি বর্তমানে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানায় কর্মরত আছেন। আদালতে একটি মামলার সাক্ষী দিতে খুলনায় এসেছিলেন তিনি। তার নামে খুলনা সদর থানায় ছাত্র-জনতার উপর হামলার ঘটনায় গত ১২ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি বর্তমানে ডিবিতে তদন্তাধীন। এছাড়া বিএনপির নগর সভাপতি শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাঙচুরসহ দুটি মামলা চলমান রয়েছে।
খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবীর হোসেন বলেন, গতকাল এস আই সুকান্ত আদালতে সাক্ষী দিয়ে বাইকযোগে কর্মস্থলে ফিরছিলেন। এসময় শিরোমণি এলাকায় পৌছালে স্থানীয়রা তাকে মারধর করে। এসময় পুলিশ ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তিনি চলে যান। তার বিরুদ্ধে খান জাহান আলী থানায় কোন অভিযোগ নেই।
এদিকে, এস আই সুকান্তকে ছেড়ে দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধে ওঠে। এর প্রতিবাদে বুধবার সকালেই তারা কেএমপি ভবন ঘেরাও করার কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সে মোতাবেক বেলা ১২টার পর থেকেই নগরীর গ্লাক্সোর মোড়স্থ কেএমপি ভবনের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হতে থাকেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এক পর্যায়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে এবং অবস্থানের কারণে সামনের খানজাহান আলী সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা নিষিদ্ধ আওয়ামী ফ্যাসিবাদেও দোসরদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দেন। আন্দোলন-বিক্ষোভে কেএমপি ভবনে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা এক প্রকার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এ আন্দোলনে বিএনপি, এনসিপি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও ছাত্র-জনতা অংশ নেয়। এভাবে একটানা প্রায় ১০ ঘন্টা বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেন।
কেএমপি ভবন ঘেরাও বিষয়ে ছাত্র-জনতার প্রতিনিধি হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফয়জুল্লাহ বলেন, “বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে, এ কারণে রাতে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। রাতের মধ্যে এসআই সুকান্তকে গ্রেপ্তার এবং কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার পদত্যাগ না করলে পরবর্তীতে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
এ বিষয়ে কেএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া এন্ড সিপি) খোন্দকার হোসেন আহম্মদ এ প্রতিবেদককে বলেন, অভিযুক্ত এসআই সুকান্ত দাসের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো তদন্তনাধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোন মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানাও নেই। এছাড়া আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়া কর্মরত কোন পুলিশ অফিসারকে গ্রেফতার করার সুযোগ নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে, ঠিক কোন কর্মকর্তার নির্দেশে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে- সেটি বলতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারকে সেল ফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, একাধিক মামলার আসামি এসআই সুকান্ত দাসকে মারধর করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে ক্ষুব্ধ জনতা। মঙ্গলবার বিকেলে খুলনা নগরীর ইস্টার্ন গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাকে খানজাহান আলী থানা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। গত বছর গণঅভ্যুত্থানের পর সুকান্তের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ছত্র-ছাঁয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ওপর সীমাহীন নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে সুকান্তের বিরুদ্ধে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অবৈধ প্রক্রিয়ায় অঢেল অর্থ-সম্পদ গড়ে তোলার অভিযোগও রয়েছে। রয়েছে নারী কেলেংকারী, চাঁদাবাজি ও প্রতারণাসহ একাধিক মামলাও। কিন্তু আসামি হয়েও ছিলেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তবে, উত্তেজিত ও ক্ষুব্ধ জনতার রোষানল থেকে রক্ষা পাননি তিনি।
কেএমপি থেকে জানা গেছে, এসআই সুকান্ত দীর্ঘদিন সোনাডাঙ্গা থানায় কর্মরত ছিলেন। ২০২৩ সালে তাঁকে খুলনা সদর থানায় বদলি করা হয়। গণঅভ্যুত্থানের পর প্রথমে তাঁকে ঢাকায় ও পরে চুয়াডাঙ্গায় বদলি করা হয়। একটি মামলার সাক্ষ্য দিতে মঙ্গলবার তিনি খুলনায় আসেন। সাক্ষ্য দিয়ে ফেরার পথে তাঁকে মারধর করা হয়।