সম্পাদকীয়

ধর্ষণের দানবীয় পুনরাবৃত্তি এবং রাষ্ট্রের দায়

মাগুরার আট বছরের শিশু আছিয়ার ধর্ষণ ও নির্মম হত্যাকা- এখনো জাতির বিবেককে নাড়া দিচ্ছে। বিচারের দ্রুততায় অনেকেই আশার আলো দেখলেও, বাস্তবতা আরও নির্মম। রায়ের রেশ কাটতে না কাটতেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নারীদের ওপর ধর্ষণের ঘটনা আবারও হু হু করে বাড়ছে। কন্যাশিশু থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী নারী-কেউই নিরাপদ নয়। এই ভয়াবহতার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠে আসে-শুধু বিচারের দৃষ্টান্ত দিয়ে কি এসব অপরাধ রোধ করা সম্ভব? পরিসংখ্যান বলছে, মে মাসেই ৩১ কন্যাশিশুসহ ৪৫ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল দলবদ্ধ ধর্ষণ, আবার কেউ কেউ ধর্ষণের পর প্রাণ হারিয়েছেন। শুধু বিচার নয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিরোধ কাঠামো ও সামাজিক সচেতনতার ভয়াবহ দুর্বলতা এ সংকটকে আরও গভীর করেছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো-পাংশার স্কুলছাত্রীদের তুলে নিয়ে ধর্ষণ, চলন্ত বাসে কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ কিংবা গাজীপুরে এটিএম বুথে পোশাকশ্রমিক কিশোরীর ওপর নির্যাতন-এই সবই প্রকাশ করে, ধর্ষকরা কোনো স্থান বা পরিবেশকে ভয় পাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর নজরদারির অভাব, অপরাধীদের দ্রুত ও কঠোর শাস্তির ঘাটতি, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সদিচ্ছার দুর্বলতা-এই সমষ্টিগত ব্যর্থতা ধর্ষণকে একটি প্রায় ‘নিয়মিত’ ঘটনা করে তুলছে। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী এলিনা খানের মতে, মাগুরার রায় লোকদেখানো, কারণ মূল আসামি ছাড়া অনেক সহযোগী ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এটি যে শুধু বিচার ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছার ঘাটতির প্রতিফলন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ধর্ষণ শুধু শারীরিক নির্যাতন নয়, এটি মানসিক, সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার প্রতিফল। এ অপরাধের প্রতিকারে কেবল ফৌজদারি আইন যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন জনসচেতনতা, সামাজিক আন্দোলন, এবং সর্বস্তরে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ। স্কুল-কলেজ, গণপরিবহন, মার্কেট, এটিএম বুথ, এমনকি কর্মস্থল-প্রতিটি জায়গায় নারী যেন নিরাপদ বোধ করেন, সেটাই হতে হবে রাষ্ট্রের নীতিগত অঙ্গীকার। সরকারের উচিত এখনই ধর্ষণবিরোধী ব্যাপক প্রচার, প্রশিক্ষণ ও প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি শুরু করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নারী-সহানুভূতিশীল করে গড়ে তুলতে হবে। একইসঙ্গে সমাজে একটি বার্তা দিতে হবে, ধর্ষকরা পার পাবে না, কোনোভাবেই না। এই দানবীয় পুনরাবৃত্তি থামাতে না পারলে শুধু নারী নয়-সমগ্র সমাজই আক্রান্ত হবে নিরাপত্তাহীনতার অন্ধকারে। এখনই সময়, শক্ত অবস্থান নেওয়ার।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button