সম্পাদকীয়

নিবন্ধনের আওতায় আনতে পদক্ষেপ নিন

বাংলাদেশে কাজ করা ছয় লাখেরও বেশি বিদেশি নাগরিক নিবন্ধনের বাইরে থাকায় প্রতিবছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, এই অনিবন্ধিত বিদেশিদের আয়কর নেটওয়ার্কে আনা গেলে বছরে অন্তত দেড় বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করা সম্ভব। এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় এই বিশাল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। শুধু তাই নয়, একই প্রতিবেদনে বৈধ ও অবৈধ পথে অর্থ পাচারের বড় একটি উৎস হিসেবে বিদ্যমান স্বর্ণ নীতিমালাকে দায়ী করা হয়েছে, যার সংস্কারের সুপারিশও করা হয়েছে বিস্তারিতভাবে। বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ বিদেশি নাগরিক বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন বলে ধারণা। কিন্তু তাদের সিংহভাগই সরকারের নিয়ন্ত্রণ এবং আয়কর নেটওয়ার্কের বাইরে থাকায় প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হাতছাড়া হচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের ভাষায়, এটি একদিকে যেমন বৈধ অর্থনীতির বাইরে বিশাল এক ‘গ্রে জোন’ তৈরি করছে, অন্যদিকে বিদেশে আয় পাচারের একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশে বহুদিন ধরে বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিক বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন। তাদের মধ্যে অল্পসংখ্যক বিদেশি নিয়ম মেনে চলেন। বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিক প্রাপ্ত বেতনের অর্থ অবৈধ পথে নিজ দেশে পাচার করছেন। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআইবির গবেষণায়ও এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিদেশিদের বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করার বিষয়টি বহুল আলোচিত। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি কর্মীদের যোগসাজশে এসব করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ নানা পদক্ষেপ নিলেও কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না। সংশ্লিষ্টদের মতে, আইএমএফে’র ঋণের শর্তপূরণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ করতে গিয়ে সরকার অনেকটা গলদঘর্ম হয়ে পড়ছে। এতে ঋণের কিস্তি পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে সরকার এবং দাতা সংস্থা আইএমএফের মধ্যে সংকট দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থা আগামী বাজেটে অতিরিক্ত দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ ১৮ হাজার কোটি টাকা আদায়ের রূপরেখা দেওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয় এ নিয়ে পর্যালোচনা করছে। অর্থনীতির বর্তমান সংকটে যেখানে সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্তপূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে অনিবন্ধিত বিদেশি কর্মী ও অনিয়ন্ত্রিত ই-কমার্স খাত থেকে আয়কর আদায় শুরু হলে রাজস্ব ঘাটতি অনেকটাই পুষিয়ে নেওয়া যেত। এসব খাতে কেবল প্রশাসনিক দক্ষতা নয়, রাজনৈতিক সদিচ্ছাও জরুরি। সরকার যদি বিদেশিদের বৈধভাবে নিবন্ধিত করে এবং স্বর্ণনীতি সংস্কার করে কঠোর অবস্থান নেয়, তাহলে আগামী বাজেট শুধু বাস্তবমুখী নয়, কার্যকরও হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button