বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের সংকট দূর করতে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করুন

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে লুটপাটের বড় খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। গত বছর আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর আশা ছিল এ খাতে কার্যকর সংস্কার হবে। কিন্তু বাস্তবে হয়নি। বরং আগের লুণ্ঠনমুখী পথ ধরেই এগোচ্ছে। তাছাড়া আগে যেভাবে আমদানিনির্ভর ছিল জ্বালানি খাত, এখনো সেটিই রয়ে গেছে। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে যতটুকু গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল, তার কিছুই হয়নি। বিশেষ করে সম্প্রতি পাস হওয়া বাজেটেও এসব বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেই। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সংলাপে জ্বালানি খাতের দুর্দশার চিত্র উঠে এসেছে পরিষ্কারভাবে। সংলাপের বিষয় ছিল ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত’। এই সংলাপ অনুষ্ঠানে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আটটি সংকট চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে : নিয়ন্ত্রক সংস্থার আর্থিক সংকট, গ্যাস সরবরাহের ঘাটতি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যর্থতা, ভুল উপায়ে জ্বালানির মূল্য সমন্বয় এবং জ্বালানি রূপান্তরের গতি কমে যাওয়া। প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের যে রাজনৈতিক আকাক্সক্ষা তিনটি শূন্য (শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ)। সেদিক বিবেচনায় আমরা ২.৫০ শূন্যে দাঁড়িয়েছি। কারণ আমাদের বাজেট জ্বালানি খাতে কয়লার নির্ভরতা কথা বলছে, এলএমজি আমদানির কথা বলছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে খুব বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কোনো ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। এসব যখন আমরা দেখছি, তখন বলতে হচ্ছে শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার উল্টো পথে হাঁটছে। যেখানে এক পা এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে এক পা পিছিয়ে যাচ্ছে। আমরা এগিয়ে যেতে পারতাম যদি বাজেটে প্রো-ফসিল ফুয়েল না হয়ে প্রো-রিনিউয়েবল ফুয়েল হতো। সিপিডির সংলাপে জ্বালানি খাতের যে সংকটগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে, সরকারের উচিত হবে সেগুলো আমলে নেওয়া। দুঃসংবাদ হলো, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল-ইরান বৈরী সম্পর্কের কারণে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তাতে একটা অস্থির সময় পার করছি আমরা। এ অবস্থায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বিপিসির মুনাফা কমে ৬১৫ কোটি টাকায় নেমে আসতে পারে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে আগামী দিনগুলোয় দেশে বড় সংকট দেখা দিতে পারে। এমনিতেই গ্যাস সংকটের কারণে দেশের শিল্প খাত কঠিন সময় পার করছে। জ্বালানি খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি এবং টেকসই রূপান্তরের জন্য যথাযথ নীতি ও মূল্য নির্ধারণ কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি।