বিনোদন

চলে গেলেন ‘সাগরের তীর থেকে’-এর মধুর কণ্ঠস্বর জীনাত রেহানা

প্রবাহ বিনোদন: বাংলাদেশের সঙ্গীত অঙ্গনে এক সোনালি অধ্যায়ের অবসান হলো। কালজয়ী গান ‘সাগরের তীর থেকে, মিষ্টি কিছু হাওয়া এনে’-এর শিল্পী জীনাত রেহানা আর নেই। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৭৫ বছর।
জীনাত রেহানার মৃত্যুর খবরটি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন তার পারিবারিক বন্ধু আলোকচিত্রী মাজেদ চৌধুরী। এ ছাড়া শিল্পীর মেয়ে রেহনুমা কামাল আহমেদও ফেসবুকে মায়ের মৃত্যুর খবর শেয়ার করেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, যোহরের নামাজের পর গুলশানের আজাদ মসজিদে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিকেল ৩টায় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজার পর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয় এই প্রখ্যাত শিল্পীকে।
বাংলাদেশের সঙ্গীতজগতে ষাটের দশকে আবির্ভূত হয়েছিলেন জীনাত রেহানা। ১৯৬৪ সালে তিনি বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। ১৯৬৫ সালে টেলিভিশনের শিল্পী হিসেবেও সংগীতের মঞ্চে যাত্রা শুরু করেন। তবে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন চাকরির কারণে নিয়মিত সঙ্গীতে দেখা যায়নি তাকে। তবুও তার গাওয়া কিছু গান আজও সমানভাবে জনপ্রিয় এবং মানুষের হৃদয়ে অমলিন হয়ে আছে।
১৯৬৮ সালে বাংলাদেশ বেতারে রেকর্ড করা হয় তার গাওয়া ‘সাগরের তীর থেকে, মিষ্টি কিছু হাওয়া এনে’ গানটি। প্রচারের সঙ্গে সঙ্গেই গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায় এবং তাকে এনে দেয় ব্যাপক পরিচিতি। এই গানটির গীতিকার ছিলেন জেবুন্নেছা জামাল এবং সুরকার করীম সাহাবুদ্দীন।
শুধু এ এক গানেই নয়, জীনাত রেহানা তার মিষ্টি কণ্ঠের জাদুতে উপহার দিয়েছেন একাধিক জনপ্রিয় গান। তার কণ্ঠে ‘একটি ফুল আর একটি পাখি বলতো কি নামে তোমায় ডাকি’, ‘আমি কাকন দিয়ে ডেকেছিলেম মুখে লজ্জা ছিল বলে’, ‘কপালে তো টিকলি পরবো না’, ‘আমি যার কথা ভাবছি মনে আনমনে’, ‘আমায় যদি ডাকো কাছে’, ‘কণ্ঠবীণা’, ‘মনে রেখো, স্মৃতি থেকে’-এর মতো গানগুলিও মানুষের মনে অম্লান হয়ে রয়েছে। আধুনিক গানের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক সঙ্গীত এবং ছোটদের গানেও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
জীনাত রেহানার প্রয়াণে সঙ্গীতজগতে নেমেছে শোকের ছায়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই তাকে স্মরণ করেছেন। সংগীতশিল্পী তিমির নন্দী লিখেছেন, “মনটা ভীষণভাবে খারাপ হয়ে গেল! বাংলাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী, শ্রদ্ধেয় জীনাত রেহানা ভাবী চলে গেলেন পরপারে। কি মিষ্টি ছিল তাঁর কণ্ঠ- ‘সাগরের তীর থেকে, মিষ্টি কিছু হাওয়া এনে’। তিনি আমাদের শিখিয়ে গেছেন, একজন কিংবদন্তি শিল্পী হয়েও কীভাবে কনিষ্ঠদের ¯েœহ করতে হয়, ভালোবাসতে হয়।”
পরিচালক ও প্রযোজক খ ম হারুনও ফেসবুকে শোক প্রকাশ করেছেন। সকলেই মনে করছেন, জীনাত রেহানা তার সুরেলা কণ্ঠের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।
প্রয়াত এই শিল্পীর স্বামী ছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপমহাব্যবস্থাপক মোস্তফা কামাল সৈয়দ, যিনি আগেই প্রয়াত হয়েছেন।
জীনাত রেহানার মৃত্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গীতজগতে যে শূন্যতা তৈরি হলো, তা সহজে পূরণ হবার নয়। তার কণ্ঠে বেঁচে থাকবে এক সুরেলা ঐতিহ্য, যা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ছুঁয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button