খেলাধুলা

মিয়ানমারকে হারিয়ে নারী এশিয়ান কাপে ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক : এএফসি উইমেন্স এশিয়া কাপের বাছাইপর্বে দুর্দান্ত এক সাফল্য ছিনিয়ে নিয়ে ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। গতকাল বুধবার ইয়াঙ্গুনের থুওয়ান্না স্টেডিয়ামে স্বাগতিক মিয়ানমারকে ২-১ গোলে হারিয়ে নিজেদের স্বপ্নপূরণের পথে বড় পদক্ষেপ রাখলেন লাল-সবুজের মেয়েরা। এর আগে একই গ্রুপের প্রথম ম্যাচে বাহরাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল পিটার বাটলারের শিষ্যরা।
ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৮তম, যেখানে মিয়ানমার আছে ৫৫তম স্থানে। দুই দলের মধ্যে র‌্যাঙ্কিংয়ের ব্যবধান ৭৩ ধাপ হলেও মাঠের লড়াইয়ে তা বোঝার উপায় ছিল না। বিশেষ করে এই মিয়ানমারের কাছেই ২০১৮ সালের অলিম্পিক বাছাইপর্বে ৫-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। সেই অতীতের দুঃস্মৃতিকে জয় করে ইতিহাস গড়ার পথে এগিয়ে গেল পিটার বাটলারের দল।
ম্যাচের শুরু থেকেই দুই দলের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ দেখা যায়। ষষ্ঠ মিনিটেই মনিকার শট সহজে ধরেছিলেন মিয়ানমারের গোলরক্ষক মিয়া নিয়েন। কিন্তু ১৮ মিনিটে বাংলাদেশের আনন্দের উৎসব শুরু হয়। বক্সের কাছে শামসুন্নাহার জুনিয়র ফাউলের শিকার হলে ফ্রি-কিক পায় বাংলাদেশ। ঋতুপর্ণা চাকমার নেওয়া প্রথম শট মানবদেয়ালে আটকে গেলেও ফিরতি বল ফের পেয়ে বাম পায়ের নিখুঁত শটে জাল কাঁপান পাহাড়ি কন্যা ঋতুপর্ণা।
প্রথমার্ধে আরও কিছু সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশ। ২৪ মিনিটে শামসুন্নাহার জুনিয়রের পায়ে সহজ সুযোগ এসেছিল ব্যবধান দ্বিগুণ করার। কিন্তু পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায় বল। প্রথমার্ধের শেষ দিকে মিয়ানমার আক্রমণের তীব্রতা বাড়ায়। ৪২ মিনিটে ইউপার খাইনের শট ক্রসবারে লেগে ফিরে এলে বেঁচে যায় বাংলাদেশ। বিরতিতে এক গোলের লিড নিয়েই মাঠ ছাড়ে লাল-সবুজের দল।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে মিয়ানমার। ৫৮ মিনিটে কর্নার থেকে মে লুর হেড ঠেকিয়ে দেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক রুপনা চাকমা। সেই চাপ সামলে ৭১ মিনিটে আবারও জাদু দেখান ঋতুপর্ণা। মিয়ানমারের ডিফেন্ডার থানদার তুনের ভুল পাস থেকে বল পেয়ে বাম প্রান্ত ধরে এগিয়ে গিয়ে বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে বল জালে জড়ান তিনি। মিয়ানমারের গোলরক্ষক মিয়ো মিয়া মিয়া পুরোপুরি পরাস্ত হন সেই শটে।
যদিও ৮৯ মিনিটে মিয়ানমারের উইন উইন একটি গোল শোধ করেন। কিন্তু দিনশেষে বাংলাদেশের মেয়েদের জয় আটকাতে পারেনি স্বাগতিক দল। ২-১ গোলের জয়ে বাংলাদেশ দুই ম্যাচে পূর্ণ ৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘সি’ গ্রুপের শীর্ষে উঠে এসেছে।
দুই ম্যাচে বাংলাদেশ মোট ৯টি গোল করেছে এবং নিজেদের জাল অক্ষত রেখেছে প্রথম ম্যাচ পর্যন্ত। ৫ জুলাই তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের গ্রুপের শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এই তুর্কমেনিস্তানকেই মিয়ানমার ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল। তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে যেকোনো ব্যবধানে জয় বা ড্র করলেই প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের মূলপর্ব নিশ্চিত হবে বাংলাদেশের। তবে তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে অঘটনে হারলে এবং বাহরাইনের বিপক্ষে মিয়ানমার জয়ী হলে তখন গোল ব্যবধানের হিসাবে নির্ধারণ হবে কোন দল এশিয়ান কাপে যাবে।
২০২৫ সালের মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় বসবে এশিয়ান কাপের আসর। ১২ দল নিয়ে হবে এই টুর্নামেন্ট। স্বাগতিক হিসেবে অস্ট্রেলিয়া সরাসরি অংশ নেবে। ২০২২ সালের আসরের চ্যাম্পিয়ন চীন, রানার্স আপ দক্ষিণ কোরিয়া এবং তৃতীয় হওয়া জাপানও সরাসরি খেলবে। বাকি আট দল বাছাইপর্ব থেকে উঠে যাবে, যেখানে বাংলাদেশের ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন এখন আর খুব দূরে নয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button